ইনসাইড বাংলাদেশ

আইনী চাপে ড. ইউনূস: সরকারের লাভ না ক্ষতি


প্রকাশ: 08/05/2023


Thumbnail

প্রচণ্ড আইনী চাপে আছেন শান্তিতে নোবেল জয়ী অর্থনীতিবিদ গ্রামীণ ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আর এই আইনী চাপে তিনি হাসফাস করছেন। আজ বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আপিল বিভাগ এক আদেশে বলেছেন, ইউনূসের বিরুদ্ধে শ্রম আদালতের মামলা চলবে। শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলা বাতিলের চেষ্টায় সর্বোচ্চ আদালতে গিয়েছিলেন নোবেল জয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। কিন্তু আপিল বিভাগ তা খারিজ করে দিয়েছে। এর ফলে এখন নিম্ন আদালতে এই মামলা মোকাবিলা করতে হবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে।

উল্লেখ্য, কল-কারখানা ও প্রতিষ্ঠান শ্রম অধিদপ্তরের শ্রম পরিদর্শক আরিফুজ্জামান ২০২১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতে এই মামলা দায়ের করেছিলেন। গ্রামীণ ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ছাড়াও এই মামলার অন্য আসামীরা হলেন- গ্রামীণ টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আশরাফুল হাসান এবং দুই পরিচালক নূরজাহান বেগম এবং শাহজাহান। 

মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনের নির্দিষ্ট লভ্যাংশ জমা না দেওয়া, শ্রমিকদের চাকরি স্থায়ী না করা, গণছুটি নবায়ন না করায় শ্রম আইনের ৪-এর ৭, ৮, ১১৭ ও ২৩৪ ধারা লঙ্ঘন করা হয়েছে। ওই মামলার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে আবেদন করা হয়। কিন্তু সেই আবেদনে ড. মুহাম্মদ ইউনূস হেরে যান। পরবর্তীতে তিনি আপিল করেন এবং আজ আপিল বিভাগ এই মামলা চলার পক্ষে রায় দিল। ফলে এই মামলা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে মোকাবিলা করতেই হবে।

এছাড়া ইউনূসের বিরুদ্ধে প্রায় ১১শ’ কোটি টাকা কর ফাঁকির অভিযোগে নয়টি রিট পিটিশন চলমান রয়েছে এবং এখন আদালতে এটি নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে বলে গতকাল অ্যাটর্নি জেনারেল জানিয়েছেন। এই ৯টি রিট মামলার শুনানিও এখন ধাপে ধাপে অনুষ্ঠিত হবে বলে জানা গেছে। ফলে একটি আইনী চাপের মধ্যে পড়লেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আর সাত মাসের মতো সময় আছে। প্রশ্ন ওঠেছে যে, নির্বাচনের আগে যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে নানামুখী চাপ দিচ্ছে, তখন মার্কিন ঘনিষ্ঠ ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে এইসব মামলাগুলো সরকারের জন্য ইতিবাচক হবে না নেতিবাচক হবে? এই মামলা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন, গণতন্ত্র সুরক্ষা এবং গণতন্ত্রকে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে ইতিবাচক ফল দেবে না নেতিবাচক ফল দেবে? 

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা এই নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন মন্তব্য করেছেন। কেউ কেউ মনে করছেন, মামলা আইনী বিষয় এবং এইসব আইনী বিষয়ের সাথে রাজনীতির কোনো সম্পর্ক নেই। আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে এখন যে মামলাগুলো রয়েছে, সেগুলোর কোনোটার সাথেই সরকার সরাসরি সম্পৃক্ত নয়। কাজেই ইউনূসকে চাপে রাখা বা ইউনূসের বিরুদ্ধে কোনো প্রতিহিংসামূলকভাবে এইসব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। 

তবে কোনো কোনো রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করছেন, হঠাৎ করে এই মামলাগুলোকে সামনে নিয়ে আসার ফলে ইউনূস কিছুটা চাপে পড়বেন। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে একটি ১/১১ সৃষ্টির চেষ্টা বা সুশীল নিয়ন্ত্রিত একটি সরকারকে ক্ষমতায় আনার চেষ্টা কিছুদিন ধরেই ড. ইউনূস করছিলেন এমন কিছু দৃশ্যমান আলামত পাওয়া যায়। সেই হিসেবে এইসব মামলার ভারে জর্জরিত থাকা ইউনূস পিছু হটবেন এবং সরকারকে হঠানোর বদলে নিজের মামলাগুলো মোকাবিলা করার জন্য বেশি সচেষ্ট থাকবেন। এটিই তাকে এক ধরনের চাপে ফেলবে।

আবার কেউ কেউ মনে করছেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে এই মামলাগুলোর ফলে বাংলাদেশ-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের ক্ষেত্রে কিছুটা হলেও অস্বস্থি তৈরি হবে। কারণ ড. ইউনূসের ব্যাপারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অনেকটাই সংবেদনশীল এবং তারা এই বিষয়টিকে এক ধরনের চাপ হিসেবে নেবে। তবে অনেকের ধারণা এই মামলাগুলোর কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বুঝবে, সরকার কোনো চাপে নেই, তখন তারা সরকারের সাথে একটি আপোষরফা বা সমঝোতা করার চেষ্টা করবে। তবে এসব মামলার পেছনে কোনো রাজনৈতিক কার্যকরণ থাকুক বা না থাকুক আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এই মামলাগুলো যে আন্তর্জাতিক মেরুকরণে কিছুটা হলেও ভূমিকা রাখবে তা বলাই বাহুল্য।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭