প্রকাশ: 09/05/2023
কাগজের
ঠোঙ্গা বানিয়ে ভাগ্যের চাকা ঘুরালো লক্ষ্মীপুর
সদর উপজেলার দালালবাজার ইউনিয়নের মাহফুজ আলম। অর্থাভাবে বেশিদূর
পড়াশোনায় যেতে না পারলেও
নিজ এলাকায় গড়ে তুলেছেন ভিন্নধর্মী
প্রতিষ্ঠান “মাহফুজ প্যাকেজিং”। লক্ষ্য অর্জনে
নানা প্রতিকূলতার মাঝেও অক্লান্ত পরিশ্রম ও সততাই তাঁকে
এনে দিয়েছে সাফল্য। তিনি সদর উপজেলার
দালালবাজার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ধর্মীয়
শিক্ষক মাওলানা নুরুজ্জামান মাষ্টারের ছেলে। ব্যবসার পরিসর বাড়াতে ও সময় মতো
গ্রাহক সেবা প্রদান করতে
তরুণ এই উদ্যোক্তা দালাল
বাজারের পাশাপাশি লক্ষ্মীপুর পৌর শহরের জিরো
পয়েন্টে গড়ে তোলেন প্যাকেজিংয়ের
আরেকটি কারখানা।
তাঁর
ব্যবসার শুরু ও নানা
দিক নিয়ে দৈনিক সংবাদ
সারা বেলা’র প্রতিনিধি
মাহমুদুর রহমান মনজু’র সাথে
কথা বলেন তরুণ সফল
উদ্যোক্তা মাহফুজ আলম।
ব্যবসা
শুরুর দিকটা সম্পর্কে জানতে চাইলে উদ্যোক্তা মাহফুজ জানান, চার ভাই আর
দুই বোনকে নিয়ে সংসার চালাতে
তাঁর বাবার খুব কষ্ট হতো।
তাই পড়ালেখা কেউই বেশিদূর করতে
পারেননি। শিক্ষকতার পাশাপাশি মাত্র পাঁচ হাজার টাকা
পুঁজিতে তাঁর বাবা ৯০
সালের শুরুতে দালালবাজারের বেলতলীতে ছোট্ট পরিসরে গড়ে তোলেন প্যাকেজিংয়ের
কাজ। স্থানীয়ভাবে যা ঠোঙ্গা হিসেবে
পরিচিত। ছোটবেলা থেকেই তাঁর স্বপ্ন ছিলো
পরিবারকে নিয়ে কিছু করার।
ছোটবেলায় দিনে স্কুলে আর
রাতে ঠোঙ্গা বানাতে বাবাকে সহযোগিতা করতেন তিনি। দারিদ্র্যের কষাঘাতে পুঁজির অভাবে আর চাহিদা কম
থাকায় ঠোঙ্গা বানানোর কাজ দুই বছরের
মাথায় বন্ধ করে দেন
তার বাবা।
পরিবারের
বড় সন্তান হওয়ায় দায়িত্ব ছিলো তাঁর বেশি।
দালাল বাজার এনকে উচ্চ বিদ্যালয়
থেকে মাধ্যমিক পাশ করে সংসার
চালাতে পড়ালেখা বন্ধ করে বাবার
বন্ধ ব্যবসা চালুর উদ্যোগ নেন তিনি। বাবার
বন্ধ ব্যবসা চালু করে দারিদ্র্যতাকে
জয় করতে নেমে পড়েন
মাহফুজ। প্রথমে অল্প কিছু ঋণ
নিয়ে নিজেই ঠোঙ্গা বানিয়ে তা বিক্রি শুরু
করেন তিনি। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বিভিন্ন
প্রতিষ্ঠানের নামে প্যাকেট বানানোর
কাজ শুরু করেন তিনি।
কঠোর পরিশ্রম আর সততার কারণে
পিছনে তাকাতে হয়নি তাঁকে। দালালবাজার
বেলতলীতে প্যাকেট (ঠোঙ্গা) বানানোর কারখানার পাশাপাশি শহরের উত্তর তেমুহনীতে গোডাউন ও পৌর শহরের
মাদাম জিরো পয়েন্টে আরেকটি
কারখানা গড়ে তোলেন তিনি।
বর্তমানে তাঁর এসব প্রতিষ্ঠানে
কারিগরসহ ১২ জন কর্মচারী
কাজ করেন।
প্লাষ্টিক
পণ্যের ভিড়ে দেশীয় কাগজের
ঠোঙ্গার ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে প্যাকেজিংয়ে
নতুন বৈচিত্র্য এনে সঠিক সময়ে
ক্রেতার কাছে প্যাকেটটি পৌঁছে
দিতে চেষ্টা করেন তিনি। লক্ষ্মীপুরে
প্যাকেট তৈরির কাটিং মেশিন ও ভালো ছাপাখানা
না থাকায় কাজে খুব বেগ
পেতে হয় তাঁকে। এছাড়া
প্যাকেট তৈরির মিল্লাত বোর্ড, সাইজিং কাগজ ও কৃষ্ণা
বোর্ড ঢাকা থেকে এনে
বিভিন্ন খরচ দিয়ে ব্যবসা
করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। এদিকে
দেশীয় কাগজের গুণগতমান ভালো না হওয়ায়
প্যাকেট বানাতে ঝুঁকতে হচ্ছে বিদেশী কাগজের ওপর। প্লাস্টিক পণ্যের
কারণে কাগজের ব্যবহার অনেকাংশে কমে গেলেও এখনো
মানুষ ফল, মিষ্টিসহ বিভিন্ন
ধরনের খাদ্য কিনলে দোকানির কাছে কাগজের ঠোঙ্গা
চান। এজন্য ভালো মানের প্যাকেট
তৈরি করতে দক্ষ শ্রমিক
নিয়ে কাজ করছেন তিনি।
ভালো মানের একশত কাগজের ঠোঙ্গা
তৈরিতে দুই থেকে তিন
ঘন্টা সময় লাগে। প্রতি
পিস প্যাকেট বিক্রি হয় পাঁচ থেকে
দশ টাকায়। মাসে তিনি ৩০
থেকে ৩৫ হাজার প্যাকেট
তৈরি করেন।
তিনি
আক্ষেপ করে জানান, প্রায়
৩০ বছর ধরে ব্যবসা
করছেন তিনি। জেলার বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের কাছে ৩০ লক্ষ
টাকার মতো বকেয়া পাবেন।
করোনা মহামারিতে তাঁর ১২ জন
শ্রমিকের বেতন-ভাতাও তিনি
দিয়েছেন। করোনাকালিন ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে সরকারি প্রণোদনা কিংবা ব্যাংক থেকে ঋণের জন্য
অনেক ঘোরাঘুরি করলেও কোন লাভ হয়নি।
পরে একটি বেসরকারি ব্যাংক
থেকে তিন লক্ষ টাকা
ঋণ নেন তিনি।
লক্ষ্মীপুর
সদর উপজেলার দত্তপাড়া এলাকার শ্রী কৃষ্ণ মিষ্টি
ভান্ডার ব্যবসায়ী লোকনাথ জানান, প্লাষ্টিকের পাশাপাশি কাগজের ব্যাগের চাহিদাও রয়েছে বেশ। প্রতি মাসে
তিনি তিন হাজার ব্যাগ
মাহফুজের কাছে থেকে সংগ্রহ
করেন বলে জানান।
ব্যবসার
প্রসার ঘটাতে তিনি উন্নতমানের প্যাকেট
তৈরিতে কাটিং মেশিন ও দোকানির নামে
প্যাকেট বানাতে ছাপাখানা বা অফসেট প্রেস
দেয়ার পরিকল্পনার কথাও জানালেন তরুণ
উদ্যোক্তা মাহফুজ।
প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান
বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭