ইনসাইড বাংলাদেশ

নির্বাচনকালীন সরকার: মধ্যস্থতায় জাতিসংঘ?


প্রকাশ: 09/05/2023


Thumbnail

গতকাল বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ তিন নেতা জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক গোয়েন লুইসের সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজে মিলিত হয়েছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাদের মধ্যে আলাপ আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। আন্তর্জাতিক মহল বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে নানামুখী তৎপরতা চালাচ্ছে। এই তৎপরতাগুলোকে একটি সমন্বয় সাধনের জন্য জাতিসংঘ ভূমিকা নিয়েছে বলে বিভিন্ন দায়িত্বশীল সূত্র বাংলা ইনসাইডারকে জানিয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন পশ্চিমা দেশগুলো বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ হয়, জনমতের প্রতিফলন যাতে হয় সেজন্য একটি সমঝোতার উপায় উদ্ভাবনের চেষ্টা করছে। সেই চেষ্টার অংশ হিসেবেই জাতিসংঘের সমন্বয়কের সঙ্গে বিএনপির তিন নেতার বৈঠক বলে বিভিন্ন সূত্র জানাচ্ছে। 

বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে হবে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিকল্প নেই বলেও বিএনপির পক্ষ থেকে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে। তারা এটিও বলেছে যে, শেষপর্যন্ত যদি নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবির সরকার মেনে না নেয় তাহলে তারা আগামী নির্বাচন বর্জন করবে এবং ভোট হতে দেবে না। 

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে ইতোমধ্যে বিএনপির কিছু কিছু কর্মসূচি পালন করেছে। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার একটি মৃত ইস্যু। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। নির্বাচন হতে হবে সাংবিধানিক কাঠামোর মধ্যে। এটি শুধু রাজনৈতিক বক্তব্য হিসেবেই নয়, আনুষ্ঠানিকভাবে আওয়ামী লীগ এবং সরকারের পক্ষ থেকে এই বক্তব্যটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশসহ আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ নিয়ে একটি অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। দেশের কোনো কোনো কূটনীতিকরা মনে করেন যে, বিএনপি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে তাহলে এই নির্বাচন নিয়ে জনগণের আগ্রহ কমে যাবে এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন ছাড়া জনমতের প্রতিফলন ঘটবে না। এরকম বাস্তবতায় বিএনপিকে নির্বাচনে আনার জন্য কেউ কেউ চেষ্টা করছে। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো একমত যে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি অযৌক্তিক। এই দাবির পক্ষে এখন পর্যন্ত কোনো কূটনীতিকরা কথা বলেননি। এই দাবিকে সমর্থনও জানাননি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার পর অতীত অভিজ্ঞতাও খুব সুখকর নয়। এই সময়ে বিভিন্ন রকমের সমস্যা এবং অস্থিরতা তৈরি হয়েছিল।  এই বিতর্কে কূটনীতিকরা যেতে চান না। তাছাড়া দেশের একটি প্রধান রাজনৈতিক দল যখন এই দাবিকে সমর্থন করে না, তখন সেই দাবিকে চাপিয়ে দেওয়াটাও অযৌক্তিক মনে করছেন কোন কোন কূটনীতিক। 

শুধু আওয়ামী লীগ নয়, জাতীয় পার্টি কোনো সময়ই তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে সমর্থন করেনি। নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে এরশাদের পতন হওয়ার সময় থেকেই জাতীয় পার্টি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে নাকচ করে দিচ্ছে এবং এর বিরোধীতা করছে। 

এরকম বাস্তবতায় দেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার চায় না, তখন এই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে নতুন করে চাপিয়ে দেওয়া কূটনৈতিক নিরপেক্ষতা লঙ্ঘনের শামিল বলেও কেউ কেউ মনে করছেন। এই পরিস্থিতিতে একটি সমঝোতার চেষ্টা করা হচ্ছে। যাকে বলা হচ্ছে নির্বাচনকালীন সরকার। ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগ ২০১৪’র মডেলে নির্বাচনকালীন সরকারের ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব জানিয়েছেন। বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকে রেখে নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা কি রকম হতে পারে তা নিয়ে গ্রহণযোগ্য প্রস্তাব আওয়ামী লীগ মেনে নেবে এমন ইঙ্গিত আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দেয়া হয়েছে। 

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপি যদি অংশগ্রহণ করে তাহলে সাংবিধানিক কাঠামোর মধ্যে নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের জন্য তারা প্রস্তুত। এখন প্রশ্ন হল যে নির্বাচনকালীন সরকারের অবয়ব এবং রূপরেখা কিরকম হবে? এ ব্যাপারে কাজ করছেন কূটনীতিকরা। আর সেই কাজের অংশ হিসেবেই জাতিসংঘ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত গ্রহণ করছে এবং এই মতামতের ভিত্তিতেই একটি নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা চূড়ান্ত হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে যে রূপরেখাই চূড়ান্ত করা হোক না কেন, সেটি হবে সাংবিধানিক কাঠামোর মধ্যেই।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭