ইনসাইড পলিটিক্স

নির্বাচনকালীন সরকার: ক্ষমতাহীন মন্ত্রীসভা ক্ষমতাবান উপদেষ্টা?


প্রকাশ: 10/05/2023


Thumbnail

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে একটি সমঝোতা আনার চেষ্টা করছে। জাতিসংঘ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নসহ বিভিন্ন দেশ এ প্রক্রিয়ার অংশ। আলাদা আলাদাভাবে তারা এ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো নিয়েও বৈঠক করছে। রাজনৈতিক দলগুলোর বিপরীতমুখী অবস্থানকে একটি সমঝোতাপূর্ণ অবস্থায় নিয়ে আসার জন্যও তারা কাজ করে যাচ্ছেন বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে। 

বিএনপি নির্দলীয়, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া কোনো নির্বাচনে যাবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বলেছে, নির্বাচন হবে সংবিধান অনুযায়ী। এ অবস্থা থেকে বর্তমান সাংবিধানিক কাঠামোর মধ্যেই একটি সমঝোতার জন্য পথ খোঁজা হচ্ছে এবং এ নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন এখন কূটনৈতিক পড়ায় ঘোরাফেরা করছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি যে প্রস্তাবটি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, তা হলো নির্বাচনকালীন সরকার। নির্বাচনকালীন সরকারের একটি খসড়া রূপরেখা বিভিন্ন কূটনৈতিক মহলের কাছে পৌঁছে গেছে বলে জানা গেছে।    

সেই প্রস্তাবটিতে কি আছে? একাধিক সূত্রও বলছে এই প্রস্তাবে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি ছোট নির্বাচনকালীন সরকারের কথা বলা হয়েছে- যে নির্বাচনকালীন সরকারে ১০ থেকে ২০ জন মন্ত্রী রাখার কথা বলা হয়েছে। যেখানে মন্ত্রীদের মধ্যে জাতীয় সংসদে প্রতিদ্বন্দ্বীতাকারী সকল রাজনৈতিক দলের অন্তর্ভূক্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে বিশেষ বিবেচনায়। বিএনপিরও কাউকে কাউকে মন্ত্রীসভায় নেয়া যেতে পারে বলে প্রস্তাবে বলা হয়েছে। তবে এই মন্ত্রীরা রুটিন কাজ করবেন এবং তারা থাকবেন ক্ষমতাহীন। শুধুমাত্র উপদেষ্টাদের পরামর্শেই তারা কাজ করবে। এই প্রস্তাবের সবচেয়ে বড় দিক হলো, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে ১০ সদস্যের একটি উপদেষ্টামণ্ডলী গঠন করা। এই উপদেষ্টামণ্ডলী হবেন নির্দলীয়, নিরপেক্ষ এবং সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য। 

বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর যে উপদেষ্টামণ্ডলী রয়েছেন, সেই উপদেষ্টামণ্ডলী নির্বাচনকালীন সময়ে কোনো দায়িত্ব পালন করবেন না বা তাদেরকে সরে যেতে হবে। পাশাপাশি এই নতুন নির্দলীয় ব্যক্তিদের দিয়ে উপদেষ্টামণ্ডলী মূলত নির্বাচনকালীন সময়ে প্রধানমন্ত্রীকে সরকার পরিচালনায় সহায়তা করবে। প্রস্তাবের মধ্যে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শুধুমাত্র রুটিন দায়িত্বের বাইরে কোনো কাজ করবেন না এবং সমগ্র কর্মকাণ্ড উপদেষ্টামণ্ডলীর পরামর্শে করবেন। উপদেষ্টারা সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে পরামর্শ দিবেন এবং প্রধানমন্ত্রী সেই পরামর্শের আলোকেই নির্বাচনকালীন সময়ে দায়িত্ব পালন করবেন। এই উপদেষ্টারা কারা হবেন তা ঠিক করা হবে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলাপ- আলোচনায় এবং নির্বাচন কমিশনের সাথে সমঝোতার ভিত্তিতে। 

উপদেষ্টামণ্ডলীর সাথে পরামর্শ করে অন্যান্য মন্ত্রীরা মন্ত্রণালয়ের দাপ্তরিক কাজ পরিচালনা করবেন। এছাড়া যে সমস্ত মন্ত্রীরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন এবং তারা নির্বাচনী প্রচারণার কাজে অংশগ্রহণ করলে, তারা কোনো সরকারি প্রটোকল ব্যবহার করতে পারবেন না। পাশাপাশি নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের জন্য উপদেষ্টামণ্ডলী একটি নীতিমালা প্রণয়ন করবেন এবং এই নীতিমালার আলোকেই নির্বাচনকালীন সরকার পরিচালিত হবে। 

তবে বিএনপির পক্ষ থেকে বারবার বলা হচ্ছে, নির্বাচনের প্রধান বিষয় হলেন প্রধানমন্ত্রী। দেশের বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী সর্বময় ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীর হাতে ন্যস্ত। কাজেই প্রধানমন্ত্রীকে রেখে যে ব্যবস্থাই হোক না কেন, তাতে নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। তবে আন্তর্জাতিক মহল মনে করছেন যে, এটি ভালো একটি সমাধান। এই নির্বাচনকালীন সরকার নিয়েই আলোচনার মাধ্যমে একটি সমাধানে আসার জন্যই তারা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭