ইনসাইড বাংলাদেশ

সাইবার সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আইনী বাধা কোথায়?


প্রকাশ: 10/05/2023


Thumbnail

বিদেশে বসে থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে মিথ্যা, বানোয়াট, কল্পনানির্ভর গল্প-গুজব নির্মাণ করে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে কিছু সাইবার সন্ত্রাসী। রাষ্ট্র, সরকার, সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অপপ্রচার চালালেও  ধরা-ছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাচ্ছে এসব সাইবার সন্ত্রাসীরা। বাংলাদেশের আইসিটি বিভাগ এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে দক্ষ এবং পর্যাপ্ত জনশক্তি থাকার পরও এসব সাইবার সন্ত্রাসীদের ঠেকাতে ব্যর্থতার কারণ হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের নির্লিপ্ততা, উদাসীনতাকেই দায়ী করছেন সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র।     

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, চলতি বছরের ১৭ জানুয়ারি ব্রিটেনের টেলিভিশনে বিবিসি নির্মিত ‘ইন্ডিয়া : দ্য মোদী কোয়েশ্চেন’ নামে একটি তথ্যচিত্রের প্রথম পর্ব প্রচার করা হয়। এর দ্বিতীয় পর্বটি প্রচারিত হওয়ার কথা ছিল মঙ্গলবার ২৪ জানুয়ারি রাতে। এই তথ্যচিত্রে গুজরাটে একুশ বছর আগেকার ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় তখনকার মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ভূমিকা কী ছিল, তার বিশ্লেষণ করা হয়েছিল।  কিন্তু সমগ্র ভারতের কোথাও সেই ডকুমেন্টারি প্রচার করতে দেয়া হয়নি। এমনকি সোশ্যাল মিডিয়া বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বিশেষ করে ইউটিউব এবং ফেইসবুকে ওই তথ্যচিত্র প্রকাশিত হওয়ার পর সেই লিঙ্কটিও সরিয়ে ফেলে ভারত সরকার।   

সূত্র জানায়, সেই সময়ে ভারতে তিনশোরও বেশি সাবেক বিচারপতি, আমলা এবং সুপরিচিত নাগরিক একটি খোলা চিঠি লিখে এই তথ্যচিত্রটি বানানোর জন্য বিবিসির তীব্র সমালোচনা করেন এবং ভারতে হিন্দু-মুসলিম সংঘাত উসকে দেওয়ার জন্য তাদেরকে দায়ী করেন। ফলে ওই তথ্যচিত্রটি ভারতে প্রচার নিষিদ্ধ হয়ে যায়। এছাড়াও, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুক এবং ইউটিউব থেকে এই তথ্যচিত্রটিসহ এর লিঙ্ক সরিয়ে ফেরার জন্য আবেদন এবং চাপ প্রয়োগ করা হয়েছিল। 

সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়া বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাংলাদেশ বিরোধী, বাংলাদেশের সরকার বিরোধী, সরকারের বিভিন্ন ব্যক্তি বিরোধী, এমনকি সরকার প্রধান বিরোধী এ ধরনের অপপ্রচার হরহামেশাই লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কিন্তু এ ধরনের অপপ্রচার রোধে আইসিটি বিভাগ, ডাক ও টেলিযোগায়োগ মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ বিটিআরসি- তাদের এক ধরনের নির্লিপ্ততা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এসব অপপ্রচার রোধে তাদের কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ছে না। তারা এসব সোশ্যাল মিডিয়ার প্রধান কার্যালয়ে কোনো ধরনের অভিযোগ বা আবেদন কিংবা তার জন্য চাপ প্রয়োগ করছে বলেও দেখা যায় না। যার ফলে এসব সাইবার সন্ত্রাসীরা অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠেছে। 

লক্ষ্য করলে দেখা যায়, বাংলাদেশের মূলধারার যত মিডিয়া এই দেশে রয়েছে, এসব কোনো মিডিয়া সরকার বিরোধী কোনো ধরনের অপপ্রচার করছে না। এসব অপপ্রচারের সবকিছু হচ্ছে শুধুমাত্র এইসব সাইবার সন্ত্রাসীদের মাধ্যমে। এসব কর্মকান্ডগুলো যারা চালিয়ে যাচ্ছে, তাদেরকে এখনই আইনের আওতায় আনা দরকার। 

সূত্র বলছে, ভারতের গুজরাট দাঙ্গার যে ভিডিও ডকুমেন্টারি বিবিসি বানিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার করেছিল, এই ভিডিও গুগল বা ইউটিউব এবং ফেইসবুক ২৪ ঘন্টার মধ্যে নামিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছিল। অথচ বাংলাদেশের সরকার প্রধানকে নিয়ে সাইবার সন্ত্রাসীরা অশ্লীল, অসংলগ্ন কর্তাবার্তা বলে কন্টেন্ট বানিয়ে- তা সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দিলেও কোনো ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, ভারত যদি এটা করতে পারে, তাহলে আমরা করতে পারি না কেন? 

সূত্র জানায়, পৃথিবীর সব দেশেই, বিশেষ করে ইউরোপ, আমেরিকা, কানাডা- এমনকি পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও ফেইসবুক, ইউটিউব, টুইটার- এসব সোশ্যাল প্লাটফর্মগুলোকে মনিটরিং করা হয়। তাদের দেশের স্বার্থবিরোধী কোনো পোস্ট থাকলে- তাদেরকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা হয়। এসব দেশগুলোতে জবাবদিহিতার একটি ব্যবস্থা রয়েছে। জবাবদিহিতার মূল ব্যবস্থা হচ্ছে, এসব সোশ্যাল মিডিয়ার নিজস্ব একটি অফিস থাকা। আমাদের বাংলাদেশে প্রায় ৫ কোটি ফেইসবুক ব্যবহারকারী রয়েছে। অথচ এখানে ফেইসবুকের কোনো অফিস নেই। ইউটিউব হাজার হাজার কোটি টাকা বিজ্ঞাপনসহ নানাভাবে বাংলাদেশ থেকে নিয়ে যাচ্ছে। ফলে সরকার শত শত কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এই যে সরকার হাজার হাজার কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে, তাতে কি ডাক ও  টলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের কোনো দায়িত্ব নেই?

সূত্র আরও বলছে, গুগল, ইউটিউব, ফেইসবুকের এটা একটা ব্যবসা। এই ব্যবসার জন্য বাংলাদেশ তাদের একটি বৃহৎ বাজার। অন্য কোনো দেশে এই রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে, সরকারবিরোধী কন্টেন্ট প্রচার করে- এ ধরনের ব্যবসা করার কোনো সুযোগ নেই। অথচ বাংলাদেশে এসব হচ্ছে। বাংলাদেশ কঠোর হলে তাদেরকে এই দেশে অফিস করানো সম্ভব। আর এই দেশে অফিস করা হলে তখনই তাদেরকে আইনের আওতায় আনা যাবে, জবাবদিহিতার আওতায় আনা যাবে। কিন্তু যতক্ষণ পর্যন্ত অফিস নেই, তারা কেউ আমেরিকাতে বসে প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে অসংলগ্ন কথা-বার্তা বলছে কিংবা লন্ডনে বসে একজন প্রধানমন্ত্রীকে গালিগালাজ করে অশ্লীল, নোংরা কথা-বার্তা বলছে- তাদেরকে আইনের আওতায়, জবাবদিহিতার আওতায় আনা যাচ্ছে না। ফলে এই সাইবার সন্ত্রাসীরা ধরা-ছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাচ্ছে।  

এছাড়াও, দেশের সুশৃঙ্খল বাহিনী বিরুদ্ধে বিদ্রোহের উস্কানি দিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় যেভাবে বিদ্বেষ ছড়ানো হচ্ছে, এদেরকে যদি অতি শীঘ্রই আইনের আওতায় না আনা যায়, গুগল, ফেইসবুকসহ এসব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের যদি বাংলাদেশে অফিস না করা যায়, তাহলে অদূর ভবিষ্যতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম অসামাজিকতার বিস্ফোরণ ঘটবে। এসব কর্মকাণ্ডের এখনই যদি লাগাম টেনে ধরা না হয়, তাহলে সামনের দিনগুলোতে আরও কঠিন পরিস্থিতি তৈরি হবে।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭