ইনসাইড বাংলাদেশ

রাজনীতির চেয়ে অর্থনীতি নিয়ে বেশি চ্যালেঞ্জে সরকার


প্রকাশ: 11/05/2023


Thumbnail

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সর্বশেষ বাজেট দিতে যাচ্ছে বর্তমান সরকার। এটি হবে নির্বাচনের আগে সরকারের শেষ বাজেট। বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা পরিস্থিতির মধ্যে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নানা টানাপড়েন সৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে এই বাজেট নানা কারণে গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচনের আগে সরকার যতটা না রাজনৈতিক বিষয়ে ব্যতিব্যস্ত-চিন্তিত, তার চেয়ে বেশি চিন্তার রেখা পড়ছে অর্থনৈতিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে। আর এই অর্থনৈতিক চাপ মোকাবেলা করে জনমত পক্ষে রাখার চ্যালেঞ্জ এখন টানা ১৪ বছরের বেশি ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ সরকারের সামনে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে আওয়ামী লীগকে আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে হবে। 

অর্থনীতিতে আওয়ামী লীগ সরকারের সামনে যে চ্যালেঞ্জ গুলো এখন রয়েছে তার মধ্যে রয়েছে;

১. বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ: বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমছে। গত দুইদিন আগে পর্যন্ত এই রিজার্ভ সাত বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন ছিল। ৩০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমেছিল। কিন্তু বিশ্বব্যাংকের সহায়তা পাওয়ার পর এটি আবার ৩০ বিলিয়ন ডলারের ওপরে উঠেছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সামনের দিনগুলোতে যদি কমতে থাকে তাহলে নির্বাচনের আগে একটা বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে সরকার।

২. দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি: দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি সরকারের জন্য একটি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ। বিভিন্ন পণ্যের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। বিশেষ করে পেঁয়াজ, চিনি ইত্যাদি নিত্যপ্রয়োজনীয় দাম বৃদ্ধি সরকারকে অস্বস্তিতে ফেলেছে। এনিয়ে জনগণের মধ্যে এক ধরনের বিরক্তি তৈরি হচ্ছে। এটি নির্বাচনের সরকারের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। 

৩. ঋণখেলাপি: ঋণখেলাপি সরকারের জন্য আরেকটি বড় মাথাব্যথার কারণ। ঋণখেলাপি বেড়েই চলেছে এবং বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ভৌতিক ঋণের মাধ্যমে ব্যাংকগুলো সংকটের ফেলার একটি প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো যারা ঋণখেলাপি হিসেবে চিহ্নিত তারা সকলেই কোনো না কোনোভাবে শাসক দলের সাথে সম্পৃক্ত। অর্থমন্ত্রী দায়িত্ব গ্রহণ করে ঘোষণা করেছিলেন যে ভবিষ্যতে যেন ঋণখেলাপি না বাড়ে সে ব্যাপারে তিনি সচেষ্ট থাকবেন। কিন্তু তার দায়িত্ব গ্রহণের পর ঋণখেলাপির সকল রেকর্ড অতিক্রম করেছে। খেলাপি ঋণ বন্ধ করতে না পারলে অর্থনৈতিক সঙ্কট কাটবে না বলে অনেকে মনে করছেন। 

৪. অর্থ পাচার: সরকারের যে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের সংকট তার একটি বড় কারণ হল অর্থপাচার। বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার হয়েছে এবং এই অর্থপাচারের উদ্ধারের জন্য কোনো ব্যবস্থা কার্যকর হয়নি। অর্থমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন যে অর্থপাচারকৃত পাচারকারীদের অর্থ ফেরত নিয়ে আসা হলে তাদেরকে ইনডিমিনিটি দেওয়া হবে। কিন্তু তাতেও কোনো কাজ হয়নি। এই অর্থপাচার একদিকে যেমন সরকারের রাজনৈতিক অর্জনকে ম্নান করে দিচ্ছে তেমনি অর্থনৈতিক সংকটকেও দীর্ঘায়িত করছে।

৫. দুর্নীতি: সরকারের অর্থনৈতিক সংকটের একটি বড় বিষয় হলো দুর্নীতি। সাম্প্রতিক সময়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকার দৃঢ় অবস্থান ঘোষণা করলেও এখন পর্যন্ত দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কার্যকর দৃশ্যমান ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুর্নীতির ব্যাপারে শূন্য সহিষ্ণুতা নীতি গ্রহণ করেছেন কিন্তু এই দুর্নীতির কারণেই আগামীতে সরকার বড় ধরনের সমস্যার মধ্যে পড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। 

গত তিন মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আছে। গত দুটি মেয়াদে আওয়ামী লীগের পক্ষে জনগণের এক ধরনের সমর্থনের প্রধান কারণ ছিল অর্থনৈতিক অগ্রগতি। গত ১৪ বছরে সরকারের সবচেয়ে বড় অর্জন হল অর্থনীতিকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে গেছে এবং বাংলাদেশকে উন্নয়নের একটি রোল মডেল করা হয়েছে। কিন্তু এখন যখন অর্থনৈতিক সংকট গুলো দেখা যাচ্ছে তখনই সরকারের মধ্যে এক ধরনের চিন্তা এবং চ্যালেঞ্জ দেখা যাচ্ছে। আর এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণ রাখাই হলো আওয়ামী লীগের শেষ বছরের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।  


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭