ইনসাইড থট

তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে আর বিতর্ক নয়: মানুষ কষ্টে আছে- রাজনীতিবিদরা সেদিকে মনোযোগ দিবেন কি?


প্রকাশ: 12/05/2023


Thumbnail

দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি করে আসছে।  সেই দাবিকে কেন্দ্র করে সামান্য হলেও উত্তেজনা বাড়ছে রাজনৈতিক অঙ্গনে।  বাংলাদেশের রাজনীতিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজন ছিল বিধায় আমি এই রকম একটি ব্যবস্থা পক্ষে কথা বলেছি, দাবি তুলেছি এমনকি জনতার মঞ্চর গণজামায়োতে হাজির হয়েছি।কিন্তু একটি পর্যায়ে আমার উপলব্ধি হয়েছে এই পদ্ধতিও ত্রুটিপূর্ণ। 

২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার তিনমাসের পরিবর্তে প্রায় ২ বছর ক্ষমতায় থেকেছে।  এবং সেখানে পেছনের শক্তি হিসেবে সেনাবাহিনী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। কিন্তু ২০০৯ সালে সংসদে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে সকল পক্ষ থেকে আক্রমণ করা হয়।  সেই সুযোগে বাংলাদেশের ইতিহাসে ২৫ ফেব্রুয়ারী ৫৭ সামরিক অফিসারকে হত্যা করেদুর্বৃর্ত্তরা ।এতবড় একটি সর্বনাশী ঘটনার পর আমার পক্ষে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি সমর্থন সম্ভব নয়।কারণ যারা হারবে কিংবা ক্ষতিগ্রস্ত হবে তারা আবার সর্বনাশী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হবে না সেই গ্যারান্টি কি আছে?

আজ পাকিস্তানে কি দেখছি? আজ বার্মাতে কি হচ্ছে? সেনাবাহিনী দেশের গর্ব ও আমাদের সম্পদ। সেই সেনাবাহিনীর একটি অফিসার এর জীবন আমাদের কতবড় তা বুঝতে ১৯৭১ সালে মুক্তি যুদ্ধের দিন গুলোতে ফিরে যেতে হবে।  সেদিন আমরা অপেক্ষায় থাকতাম বিজয়ের সুসংবাদের জন্য।  সেনাবাহিনীকে দেশকে রক্ষার কথা শেখানোহয়।  আর আমাদের রাজনীতিবিদরা দেশের জনগণের কল্যাণে কাজ করতে চান।  কিন্তু নির্বাচনে হেরে রাজনীতিবিদরা প্রথমে সেনাবাহিনীকে দোষী করেন।তারা নিজেদের ভুল বা দোষস্বীকারকরেন না। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিতর্ক সেনাবাহিনীর অনেক ক্ষতি করেছে।আমি দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর কোন ক্ষতি চাইতে পারি না।

রাজনীতিবিদদের উপর মানুষের শ্রদ্ধাবোধ দিন দিন অধোগামী।  আজ ডোনাল্ড ট্রাম্প এর বিচার হচ্ছে।  তিনি ক্ষমতার জন্য যুক্তরাষ্টের পার্লামেন্টকে যেভাবে আক্রমণ করেছেন বলে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে তা সেই দেশের সুনামকে অনেক নিচের নিয়ে গেছে।  সেখানকার নির্বাচনে রিগিং হয়েছে সেই অভিযোগ আমরা পাচ্ছি।  

নির্বাচন ও ভোটেরসঙ্গে মনের ইচ্ছার সম্পর্ক।  এবং সেই ইচ্ছাটা ভোট দেয়ার সময় বদলে যেতে পারে।  আর সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে যুগে যুগে যারা চালাক তারাই রাজনীতি করেছেন।  সৎ মানুষের জন্য রাজনীতি নয়। সততা আজকের জামানায় একটি অযোগ্যতা।যিনি চুরি করতে পারবেন যেন তাকেই মানুষ নির্বাচন করে এরকম একটি শ্রুতি আছেবলে কথাটা লিখছি।

আমি বঙ্গবন্ধু বা দেশ রত্ন শেখ হাসিনার জন্য জীবন দিলেও আমি যদি সততার পথে থাকি কিংবা ঘুরাঘুরি না করি আমার অবদান বা সততার মূল্য নেই-মানে আমার জন্য কোনো পদ নেই বলে অনেকে রাজনীতি থেকে দূরে থাকেন ।  তেমনি ভোটাররা সেই পর্যন্ত নিজের স্বার্থকে বিবেচনা করে।  ভোট পরিচালনায় যারা থাকেন তারা তাদের স্বার্থ বিবেচনা করেন।  আর এসব কারণে ভালো প্রার্থী নির্বাচিত হতে পারেন না কিংবা মনোনয়ন পাননা।  অসংখ্য বিষয় এখানে কাজ করে।  সেই অসংখ্য বিষয় এর মাঝে নিরপেক্ষ সরকার কি পারে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দিতে ? 

আমাদের চিন্তা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে রক্ষা করা।  আমরা দেখছি সেই মুক্তিযোদ্ধা বা তাদের সন্তানদের অধিকার কেড়ে নিতে একটি মহল ক্রিয়াশীল। সব দলেই ভালো মন্দ লোক আছে বলে আমরাজানি।  আমরা চাইনা এমন একটি সরকার আসুক যারা আবার বাংলাদেশেকে মিনি পাকিস্তান বানাতে চায়।  আমরা সকলকে নিয়ে চলতে চাই।  সেজন্য আমি সাম্প্রদায়িক রাজনীতিকে দূরে রাখতে যেকোন উপায় অবলম্বন করতে চাই।  আর সেটা করতে গেলে আমার পক্ষে তত্ত্বাবধায়ক সরকার সমর্থন সম্ভব হয় না।  আবার আমি এটাও মেনে নিতে পারছিনা যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহার।  সুতরাং , আমি একটি বিপদজনক অবস্থানে আছি।  আমি চাইনা বিডিআর ঘটনার মতো সেনাবাহিনীকে দুর্নীতিবাজ হিসেবে কেউ উপস্থাপন করুক।  আমাদের দলগুলোর কি সাহস আছে দল থেকে সন্ত্রাসীদেরকে বের করে দেয়ার? তারা কি দুর্নীতিবাজদেরকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে? তারা কি তাদের ভুলগুলো স্বীকার  করছে? 

জন-জীবন এখন এমন পর্যায়ে যে তারা বাঁচার জন্য আকু-পাকু করছে ২০১৮ সালে স্কুল শিক্ষার্থীরা নিরাপদ সড়কের আন্দোলন করেছিল।  পাঁচ বছর পর আমরা কি সেই আগের মতো অবস্থা দেখছি না ? তাহলে আমাদের উন্নয়ন কোথায় হলো ? আর এই প্রশ্ন করলে আমি হয়ে যাই উন্নয়নের শত্রু ! 

সচিবালয় , আদালত বা অন্য কোনো অফিসে যাবেন আপনাকে ফাইলের পেছনে ছুটতে হবে।  সেখানে ফাইল থেকে কাগজ হারিয়ে যাবে।  আবার ডিজিটাল আবেদন করবেন সেটা দেখার সময় নেই যারা পদে আছেন।  আমি অনেক জায়গায় অনেক উচ্চপদের মানুষের কাছে আবেদন করি।  একজন সিনিয়র অধ্যাপক দিনের পর দিন ঘুরে যেখানে বিচার পায় না সেখানে আমরা কি ভালো আশা করতে পারি তত্ত্বাবধায়ক সরকার থেকে?

আসলে আমাদেরকে মানে জনগণকে দাসের মতো বিবেচনা করা হয়।  দিনদিন আমরা নতুন নতুন দাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ হচ্ছি।  আমাদের স্বাধীনতা বলতে আর কিছুই থাকছে না। আমাদেরকে গ্রাস করছে পুঁজিবাদ।  তত্ত্বাবধায়ক সরকার কি আমাদের সেই দাসত্বের বন্ধ  মুক্ত করতে পারবে ? আজ সংবাদ পত্রে মালিক কে , আজ কারা সংসদে আছেন ? তারা কি করছেন এবং যারা বিরোধী রাজনীতি করছেন তাদের অতীত ইতিহাস কি? মানুষ যখন এসব দেখে তখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ধারণা অর্থহীন হয়ে পড়ে। 

আসল জায়গায় কেউই হাত দিতে চায় না।  সামাজিক বৈষম্য , ন্যায় বিচারের অভাবকে আমরা গুরুত্বহীন মনে করি।  আমরা নিপীড়ককে তোষামোদ করি বাগুরুত্ব দেই এবং মিথ্যে আফসোস করি নিপীড়িতর জন্য।  

মানুষ পরিবর্তন চায় এটা সত্য।  তারা স্বাধীনতাকে হৃদয় দিয়ে  উপলব্ধি করতে চায়, তারা প্রাণ খুলে হাসতে চায়।  সেজন্য তাদের ধনী হওয়ার প্ৰয়োজন নেই।  ওই যে কথায় আছে গরিবের ঘরের রানী হওয়া আর রাজ্ প্রাসাদের দাসী থেকে ভালো।  অর্থাৎ স্বাধীনতা হচ্ছে মানুষের সর্বোচ্চ চাওয়া।  সেটা অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক উভয় প্রকার হয়ে থাকে। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আমাদের রাজনৈতিক স্বাধীনতা পেয়েছি।  কিন্তু আমাদের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা এখনও শৃংখলিত।  আর সেজন্য প্রয়োজন আমাদের ঐক্য।  

আমরা উভয়দল যেভাবে বিদেশিদের সন্তুতি অর্জনে সময় ব্যয় করছি সেটা না করে আমাদের উচিত নিজেদের মধ্যে কথা বলা।  আমরা আগে সিদ্ধান্ত নেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার হলে অতীতের মতো নির্বাচনে হেরে গেলে সেনাবাহিনীকে দায়ী করবো কি-না ? ১৯৭৫ সালে সেনাবাহিনীর একটি অংশ নির্বাচিত সরকার উৎখাত করেছিল এবং তারই ধারাবাহিকতায় আমরা অসংখ্য অভ্যুর্থান হতে দেখেছি।  দেশের প্ৰয়োজনে ২০১৮ সালে বিএনপি নির্বাচনে এসেছিলো।  সেটাকে কাজে লাগিয়ে সরকার যে সাফল্য প্রদর্শন করেছে সেটার মর্যাদা দিতে একটি ভালো নির্বাচন দেয়া সরকারের দায়। সরকারকে আরও স্পেস বিরোধীদেরকে দিতে হবে।  তাতে করে একটি সফল নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব হবে।  

যেকোনো ভুল আমাদের আগামী দিনগুলোকে অন্ধকারাছন্ন করে দিতে পারে। জনগণ এখন কষ্টে আছে।  তারা আর ওই নির্বাচনী সরকার নিয়ে রাজনৈতিক বাহাস শুনতে চায় না।  তারা চায় শান্তি।  রাজনৌতিক বাহাসের সুবাদের দুষ্ট লোকেরা আমাদের শান্তি কেড়ে নিচ্ছে।  দ্রবমূল্য বাড়ছে।  বাড়ছে মানুষের হাহাকার।  দৌরাত্ম বাড়ছে আমলাতন্ত্রের।  

আমলারা নিজেদেরকে পরিচয় করিয়ে দেন তিনি প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতির প্রতিনিধি।  অর্থাৎ তিনি সাক্ষাৎ ভগবান।  এভাবে তারা জনগণকে দাসে পরিণত করছে এবং জনসেবা থেকে দূরত্ব বজায় রেখে পদলেহনকে সমাজ কালচারে পরিণত করছে।স্যার না বললে ইনারাকাজ করেন না বা ক্ষিপ্ত হন।  আমি আবারো বলছি বিরোধীদলকে সুযোগ দিন জাতীয় স্বার্থে।  তারাও এদেশের সন্তান।  তাদের ভুল থাকতে পারে - সেটা সংশোধনের সুযোগ জনগণ দেবে কি না সেটা একটি সুষ্ঠু , অবাধ  নির্বাচনের মধ্য দিয়েহোক।  সেজন্য যদি কিছুটা ছাড় সরকারকে দিতে হয় সেটা জাতির কল্যাণে করা যেতে পারে।  তবে আমরা চাই না পেট্রোল বোমা কিংবা জঙ্গি আচরণ আবার আমাদের সমাজে ফিরে আসুক। সব শেষ কথা মানুষ কষ্টে আছে- রাজনীতিবিদরা সেদিকে মনোযোগ দিবেন কি?



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭