এডিটর’স মাইন্ড

হাসনাতের বরিশাল যাচ্ছে নানকের হাতে?


প্রকাশ: 12/05/2023


Thumbnail

বরিশাল সিটি করপোরেশনের নির্বাচন নিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগের বিভক্তি এখন প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে। সেখানে আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর ছোট ভাই খোকন সেরনিয়াবাতকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। খোকন সেরনিয়াবাত মনোনয়ন পাওয়ার পর ইতিমধ্যে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছেন। কিন্তু তার পাশে নেই তার বড় ভাই আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ। আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহকে মনে করা হয় বরিশালে আওয়ামী লীগের নেতা এবং  বৃহত্তর বরিশালের সব সিদ্ধান্ত হাসনাতের ইচ্ছানুযায়ী হতো—এমন গুঞ্জন আওয়ামী লীগের মধ্যে সবসময় ছিল, আছে। এবারের নির্বাচনে তিনি চেয়েছিলেন তার ছেলে সাবেক আব্দুল্লাহকে আরেকবার মনোনয়ন দিতে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং মনোনয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান শেখ হাসিনা সাদিক আব্দুল্লাহকে মনোনয়ন দেননি। এ নিয়ে মনোনয়ন বোর্ডে হাসনাত আব্দুল্লাহর সাথে অনেকক্ষণ কথা হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর এবং শেষ পর্যন্ত আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ যুক্তিতে হেরে গেছেন এবং খোকন সেরনিয়াবাতকে মনোনয়ন দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মনোনয়ন বোর্ড। আর এরপর থেকেই অভিমান করে বরিশাল থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ। 

গত ২৭ দিনের মধ্যে তিনি বরিশালে যাননি। খোকন একাই নির্বাচনী প্রচারণা করছেন। আর এর ফলে আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর অনুসারীরাও নির্বাচনী প্রচারণা কার্যক্রম থেকে দূরে রয়েছে। বরিশালে হাসনাত সমর্থকরা বলছেন যে তারা আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর সবুজ সংকেতের অপেক্ষায় আছেন। আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর সবুজ সংকেত না পেলে তারা নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ গ্রহণ করবে না। আর অন্যদিকে আওয়ামী লীগ পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে খোকন আব্দুল্লাহ নির্বাচনী প্রচারণার জন্য দলের আরেক হেভিওয়েট নেতা জাহাঙ্গীর কবির নানককে বারবার পাঠাচ্ছে বরিশালে। 

জাহাঙ্গীর কবির নানক ইতিমধ্যে দু'দফা বরিশালে গিয়ে কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং হাসনাত সমর্থকদের বাইরে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নিয়ে একটি পৃথক বলয় তৈরি করার চেষ্টা করছেন। এর ফলে বরিশালের রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ ঘটতে যাচ্ছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। আর এর প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে যে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রচারণায় যারা এতদিন ধরে নীরবে ছিলেন, আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর বলয়ের বাইরে যারা তারাই এখন দৃশ্যমান হচ্ছে এবং তাদেরকে খোকন সেরনিয়াবাত এর নির্বাচনী প্রচারণায় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। 

কেউ কেউ মনে করছেন যে আওয়ামী লীগের এই কৌশলটি যথেষ্ট কার্যকর হবে। কারণ সাদিক আব্দুল্লাহ মেয়র হিসেবে গত পাঁচ বছরে অনেক কারণে বিতর্কিত হচ্ছেন। সাধারণ জনগণের মধ্যে তাকে নিয়ে এক ধরনের ভীতি এবং আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। সে কারণেই সাধারণ জনগণ খোকন সেরনিয়াবাত এর মনোনয়নে খুশি হয়েছে এবং তারা হাসনাত আব্দুল্লাহ এবং সাদিক আব্দুল্লাহ সমর্থকদের দেখতে পারেননা। 

জাহাঙ্গীর কবির নানকের বাড়ি যদিও বরিশালে কিন্তু তিনি বরিশালের রাজনীতির সঙ্গে কখনো সম্পৃক্ত নন। বরং তিনি যেন বরিশালের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হতে না পারেন সেজন্য হাসনাত সমর্থকদের একটি প্রচেষ্টা ছিল। এমনকি জাহাঙ্গীর কবির নানক তার মা-বাবার কবর জিয়ারত করতে গেলেও তাকে নানা প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হতো বলে জানা গেছে। এরকম বাস্তবতায় আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ যুগের অবসান ঘটতে যাচ্ছে বরিশালে—এমনটি মনে করছেন অনেকে। তাদের মতে শেষ পর্যন্ত যদি হাসনাত নির্বাচনী মাঠে না নামেন এবং জাহাঙ্গীর কবির নানকের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সংগঠিত হয়ে খোকন সেরনিয়াবাতকে জেতাতে পারে তাহলে বরিশালে হাসানাত আব্দুল্লাহর রাজত্বের অবসান ঘটবে এবং সেখানে বরিশালের নতুন নেতা হিসেবে জাহাঙ্গীর কবির নানকের অভ্যুদয় ঘটতে পারে। 

জাহাঙ্গীর কবির নানক ২০০৮ এবং ২০১৪ এর নির্বাচনে ঢাকার মোহাম্মদপুর থেকে মনোনয়ন পেয়েছিলেন। ২০১৮ নির্বাচনে তিনি মনোনয়ন বঞ্চিত হয়েছেন। তাহলে কি জাহাঙ্গীর কবির নানককে বরিশালে নিয়ে যেয়ে আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করানো হবে নাকি তিনি ঢাকায় মনোনয়ন পাবেন? নানা প্রশ্নের হিসেব-নিকেশের সমাধান হবে আগামী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বরিশালের ফলাফলের ওপর।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭