ইনসাইড পলিটিক্স

নির্বাচনকালীন সরকার: সংবিধানের আওতায় সর্বোচ্চ ছাড় দিতে প্রস্তুত আওয়ামী লীগ


প্রকাশ: 12/05/2023


Thumbnail

রাজনীতিতে পর্দার আড়ালে চলছে সমঝোতার চেষ্টা। এই সমঝোতার প্রধান বিষয় হলো নির্বাচন কিভাবে হবে এবং কোনো সরকারের অধীনে হবে। যদিও প্রকাশ্যে বিএনপি বলছে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে হবে। এছাড়া তারা নির্বাচনে যাবে না। কিন্তু পর্দার আড়ালে একটি রাজনৈতিক সমঝোতার চেষ্টায় তারা সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করছে এবং বিভিন্ন প্রস্তাব নিয়ে তাদের অবস্থান এবং মতামত দিচ্ছে। আওয়ামী লীগও জাতিসংঘ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে নানারকম আলাপ-আলোচনা করছে এবং সমঝোতার লক্ষ্যে প্রচেষ্টা করছে। 

একাধিক সূত্র বলছে, আওয়ামী লীগের প্রধান বক্তব্য হচ্ছে নির্বাচন হতে হবে সংবিধানের অধীনে, সাংবিধানিক কাঠামোর মধ্যে। সাংবিধানিক কাঠামোর মধ্যে নির্বাচনের ব্যাপারে সর্বোচ্চ ছাড় দিতে আওয়ামী লীগ প্রস্তুত। একাধিক সূত্র বলছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোকে আওয়ামী লীগ আগামী নির্বাচনের ব্যাপারে তাদের তিন দফা প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেছে; 

প্রথমত, আওয়ামী লীগ বলছে, নির্বাচন হবে নির্বাচন কমিশনের অধীনে। নির্বাচন কমিশন স্বাধীন স্বতন্ত্র একটি প্রতিষ্ঠান। নির্বাচন কমিশনের কাজে সরকার কোনো রকম হস্তক্ষেপ করবে না। 

দ্বিতীয়তঃ বিএনপি যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চায় তবে নির্বাচনকালীন সরকারে বিভিন্ন ছাড় দেওয়ার বিষয়টি আওয়ামী লীগ বিবেচনা করবে। কিন্তু বিএনপিকে নির্বাচনে আনার জন্য আওয়ামী লীগ কোনো চেষ্টা, তদবির বা অনুরোধ করবে না। 

তৃতীয়তঃ নির্বাচনকালীন সরকার কাঠামোতে সংবিধানের আওতায় সর্বোচ্চ ছাড় দিতে রাজি আছে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এটাও বলা হয়েছে যে ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ যে প্রস্তাব দিয়েছে সেই প্রস্তাবকে ভিত্তিমূল হিসেবে নিয়ে আওয়ামী লীগ সমঝোতা করতে আগ্রহী। তবে এ সমঝোতায় সরাসরি বিএনপির সঙ্গে আওয়ামী লীগ কথা বলতে আগ্রহী নয়। আর এই সমঝোতা আলোচনার আগে বিএনপিকে প্রথমে ঘোষণা করতে হবে তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চায়। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এই বিষয়গুলো নিয়ে দফায় দফায় বিভিন্ন কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক হচ্ছে। কূটনীতিকরা এখন পর্যন্ত নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবির প্রতি কোনো রকম সমর্থন জানায় নি। বরং তারা বর্তমান সংবিধান কাঠামোর মধ্যেই একটি উপায় উদ্ভাবনের চেষ্টা করছে। পশ্চিমা দেশগুলো মনে করছে যে নির্বাচন কমিশনকে যদি ব্যাপক ক্ষমতা দেওয়া হয় এবং স্বাধীন স্বতন্ত্র ভাবে যদি নির্বাচন কমিশন কাজ করতে পারে তাহলে নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ হওয়া সম্ভব। আর এ ব্যাপারে জাতিসংঘসহ পশ্চিমা দেশগুলোর পাঁচটি পর্যবেক্ষণ রয়েছে; 

১. তারা মনে করছে নির্বাচন কমিশনকে নির্বাচন পরিচালনার জন্য পর্যাপ্ত ক্ষমতা দিতে হবে। 
২. প্রশাসনকে নির্বাচনকালীন সময়ে নির্বাচন কমিশনের আওতায় আনতে হবে। 
৩. আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্বাচনের সময় নির্বাচন কমিশনের আওতায় আনতে হবে।
৪. ক্ষমতাসীন দলের মন্ত্রী-এমপিরা যেন বাড়তি সুবিধা না পায় সেটির ব্যাপারে নিশ্চিত ব্যবস্থা রাখতে হবে। 
৫. নির্বাচনে বিদেশি পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করতে হবে। যাতে তারা নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য পর্যাপ্ত এবং সব ধরনের সুবিধা পায়। এই বিষয়গুলো নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মধ্যে কোনো আপত্তি নেই। 

বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে, আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ ছাড় দেওয়া হবে এরকম যে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে যেকোনো ধরনের নির্বাচনকালীন সরকার হলে আওয়ামী লীগ রাজি হবে। তবে শর্ত হলো এ রকম একটি নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের আগে অবশ্যই বিএনপিকে ঘোষণা করতে হবে যে তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। বিএনপি চাপে ফেলে আওয়ামী লীগের কাছ থেকে কোনো কিছু আদায় করতে পারবে না। 

আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বলছেন দুটি বিকল্প চিন্তা থেকে আওয়ামী লীগ আগামী নির্বাচনের পরিকল্পনা সাজাচ্ছে। প্রথমত, বিএনপি যদি আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে তাহলে আওয়ামী লীগ এক রকমভাবে নির্বাচন করবে এবং নির্বাচনকালীন সরকারসহ অন্যান্য বিষয় একভাবে হবে। আর যদি বিএনপি অংশগ্রহণ না করে তাহলে অন্যভাবে নির্বাচনকালীন সরকার কাঠামো এবং অন্যান্য  বিষয়গুলো নির্ধারিত হবে। তবে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক না করুক আগামী নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ হবেই। 


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭