ইনসাইড থট

ইউটিউব দেখেও ডাক্তার তৈরি হবে?


প্রকাশ: 13/05/2023


Thumbnail

ইউটিউবে এখন রান্না থেকে সেলাই, সবই শেখা যাচ্ছে। তা হলে ডাক্তারিটাই বা বাদ থাকবে কেন? চিকিৎসা পদ্ধতি ভালো ভাবে ওই মাধ্যমে দিয়ে দিলে, ইউটিউব দেখেই তো আরও অনেক কম সময়ে ডাক্তার হওয়া যায়। তাতে রোগীকে ছুঁয়ে দেখে শেখারও কোনও ব্যাপার থাকে না। তা হলে কোনও দিন কি শুনব, ইউটিউব দেখেও ডাক্তার তৈরি হবে?

ডাক্তারিতে একের পর এক পর্ব পেরিয়ে আমরা আজকের কাঠামোয় এসেছি। আগে এলএমএফ(লাইসেন্সিয়েট মেডিক্যাল ফ্যাকাল্টি) কোর্স ছিল। তার পরে হল এমবি ডাক্তার। তারও পরে সেটা এমবিবিএস হয়েছে। এই যে পর পর পরিবর্তনগুলি এসেছে, সে সবেরই নেপথ্যে নির্দিষ্ট যুক্তি ও ব্যাখ্যা রয়েছে। তবে আগেও বিভিন্ন সময়ে চিকিৎসকের ঘাটতি মেটাতে নানা রকমের প্রচেষ্টা হয়েছে। পল্লীবন্ধু হোসেন মুহাম্মদ এরশাদের আমলে আর এম পি (রুরাল মেডিকেল প্রাক্টিশনার) বা পল্লী চিকিৎসক বলে একটা ব্যবস্থা চালু হয়। ওই কোর্সে সামান্য কিছু শিখিয়ে গ্রামে চিকিৎসা করাতে পাঠানোর পরিকল্পনা হয়েছিল।যদিও কোর্স পাশ করা লোকজনকে চিকিৎসার কাজে ব্যবহার করার নৈতিকতা নিয়ে খুব হইচই হয়। কোর্স শেষে ডাক্তারির প্রশংসাপত্র দেওয়া হয়। তখন তাঁদের ‘কনডেন্সড মেডিক্যাল কোর্স’ করানো হয়েছিল। এখনো অনেকে সে সুবাদে ডিগ্রীহীন হয়েও গ্রামে গঞ্জে চিকিৎসা করে চলেছেন। তাই ডাক্তারিতে এই সব বিভিন্ন ব্যবস্থাপনা বা পর্ব নতুন নয়। ‘ট্রায়াল’ (পরীক্ষা) এবং ‘এরর’ (ভুল) করে আমরা সেই সমস্ত পর্ব পেরিয়ে এসেছি। আধুনিক চিকিৎসায় এখন একটাই কাঠামো, তা হল এমবিবিএস ডাক্তার। যা এখন বিদেশেও স্বীকৃতি পাচ্ছে সেখানকার নির্দিষ্ট একটি পরীক্ষা দেওয়ার পরে।

এবার আসি আমাদের চিকিৎসা শিক্ষা দেয়ার প্রতিষ্ঠান ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো নিয়ে। বর্তমানে ৩৭টি সরকারি মেডিকেল কলেজ এবং ৭১টি বেসরকারী মেডিকেল কলেজ স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক উভয় শিক্ষার্থীদের জন্য এমবিবিএস প্রোগ্রাম অফার করে। তারপরেও আছে একটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়। আরও কয়েকটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণের কাজ জোরকদমে চলছে। এর বাইরেও বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অফ প্রফেশনালস এর অধীনে ৫টি মেডিকেল কলেজ রয়েছে। চলতি বছরে মেডিকেল কলেজে ভর্তির জন্য ১৩৯,২১৭ জন শিক্ষার্থী আবেদন করেছিল। বাংলাদেশের সরকারি মেডিকেল কলেজে ৪,৩৫০টি স্পট রয়েছে, যার অর্থ প্রতি আসনের জন্য ৩২ জন শিক্ষার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। ৭১টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ৬,৭৭২টি আসন রয়েছে। সব মিলিয়ে মেডিকেল কলেজে ১১,১২২জন শিক্ষার্থী ভর্তি হতে পারবে। আবার ২৫০ আসনের বিপরীতে ৩৭০০০ পরীক্ষার্থী পরীক্ষা দিয়েছিলো। বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোর খরচ শুনলে ভয়ে আঁতকে উঠতে হয়, কোথায়ও ২০ আবার কোথায়ও ৩৫ লক্ষ টাকা খরচ করে পড়তে হবে। এদের অনেকের নিজস্ব ক্যাম্পাস নেই, প্রয়োজনীয় শিক্ষক, শিক্ষা উপকরণ, ল্যাবরেটরি, গবেষণা, এমনকি হাসপাতাল নেই। অন্য কোনো সরকারি হাসপাতালে পাঠিয়ে চূড়ান্ত পর্বের শিক্ষাথীদের ইন্টার্নশীপ করিয়ে আনা হয়, এ যেন ভাড়া বাড়ি, পরের জায়গা পরের জমি, ঘর বানাইয়া আমি রই!  

১৯শে মার্চ, ২০২৩ তারিখে ইন্টারন্যাশনাল কংগ্রেস এন্ড সাইন্টিফিক সেমিনার ২০২৩-এ বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) সভাপতি অধ্যাপক মাহমুদ হাসান একটি দারুন সত্যি কথা বলেছেন, শিক্ষার মান উন্নয়নে দেশে নতুন মেডিকেল কলেজ স্থাপন বন্ধ করতে হবে। তিনি বলেন, ‘এর পাশাপাশি নিম্নমানের মেডিকেল কলেজগুলোর একাডেমিক কার্যক্রমও নিষিদ্ধ করতে হবে,’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ১৭ কোটির দেশে মেডিকেল কলেজের সংখ্যা ১১৫টি।তিনি দাবি করেন, জনসংখ্যার অনুপাতের তুলনায় বিশ্বের আর কোনো দেশে এত সংখ্যক মেডিকেল কলেজ নেই। অধ্যাপক মাহমুদ হাসান বলেন, একটি জরিপে দেখা গেছে অনেক সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মান নিম্নমানের। শুধু পাঠ্যক্রম পরিবর্তন করেই চিকিৎসা শিক্ষার উন্নতি হবে না। পর্যাপ্ত জনবল নিয়োগ দিয়ে অবকাঠামোর উন্নয়ন করতে হবে।

এবার আসি স্বাস্থ্য সেবার মান নিয়ে। "১৭ কোটি মানুষ থেকেই টাকা খাচ্ছেন, কতজনের কাছে মাফ চাইবেন" - এ শিরোনামে ১০ মে, ২০২৩ তারিখে একটি সংবাদ পরিবেশিত হয়। তাতে দেখা যায় যে, কারাবন্দিদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতে দেশের কারাগারগুলোতে শূন্যপদে চিকিৎসক নিয়োগের নির্দেশনা এখনো বাস্তবায়ন না করায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের (ডিজি) প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন হাইকোর্টের বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি মোহাম্মাদ শওকত আলী চৌধুরীর বেঞ্চ। আদালত বলেন, দুর্নীতির একটি সীমা থাকা উচিত। স্বাস্থ্য খাতের সর্বস্তরে দুর্নীতি বিস্তার করেছে। আখিরাতে বিশ্বাস করলে চুরি করতে পারতেন না। দেশের ১৭ কোটি মানুষের কাছ থেকেই টাকা খাচ্ছেন,কতজনের কাছে মাফ চাইবেন।আদালত শুনানিতে বলেন, দুদক ঠিকমতো কাজ করলে এতো দুর্নীতি বাড়তো না।প্রধানমন্ত্রী চেষ্টা করার পরও পাকিস্তান– ব্রিটিশ আমলাতন্ত্রের পরিবর্তন হচ্ছে না। যে সরকারই আসুক আমলারা সব সময় থাকেন। তারা কেন দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত হন?

কারা কর্তৃপক্ষ এবং স্বাস্থ্য অধিপ্তরের মহাপরিচালকের আইনজীবীদের হাইকোর্ট আরও বলেন, উই আর সন অব দ্য সয়েল (আমরা এই মাটির সন্তান)। আমরা সবই জানি, আমাদের ভুল বোঝাবেন না। আমি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে গিয়েছিলাম। দেখলাম, বাইরের অনেক দেশের ছোট হাসপাতালের অবস্থা এখানকার চেয়ে ভালো। আদালত বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় শুধু কেনার জন্যে প্রস্তুত, কিন্তু বাক্সে কী আছে আল্লাহ জানেন। আর কত দুর্নীতি করবেন? আখিরাতে বিশ্বাস করলে দুর্নীতি করতে পারতেন না। দুর্নীতির একটা সীমা থাকা উচিত। প্রধানমন্ত্রীর এলাকা ফরিদপুর মেডিকেলেও দুর্নীতি হয়েছে।হাইকোর্ট আরও বলেন, কারাগারে অনেক নিরীহ মানুষও থাকে। তাই মানুষ শাস্তি পেলে ক্ষমা পাবেন না। চিকিৎসকরা সবাই ঢাকায় থাকতে চান। প্রাইভেট প্র্যাকটিস করেন, কোম্পানির প্রতিনিধির সঙ্গে যোগসাজশ করে ওষুধ লেখেন। এসময় প্যারামেডিক্যালের ডাক্তারদের বিএমডিসি এন্টিবায়োটিক ওষুধ লেখার অনুমতি কেন দিয়েছেন সে প্রশ্নও তোলেন হাইকোর্ট।

তা জানার পরে এ কথাই প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে যে দেশে এক ধরণের স্বাস্থ্য সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চলছে। 


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭