ইনসাইড পলিটিক্স

ভারতকে কেন আস্থায় নিতে পারছে না বিএনপি?


প্রকাশ: 13/05/2023


Thumbnail

নির্দলীয়, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন করছে বিএনপি। এই আন্দোলনে তারা যতটা না জনগণের কাছে যাচ্ছে, তার চেয়ে বেশি ধরনা দিচ্ছে কূটনৈতিক পাড়ায়। বিভিন্ন দূতাবাসে বিএনপির নেতারা নানা রকম বৈঠক করছেন এবং আলাপ-আলোচনায় তারা আগামী নির্বাচন যেন সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ হয়- সেজন্য তাদের মতামত, বক্তব্য এবং পরামর্শগুলো উপস্থাপন করছেন। অনেক দেশই বিএনপির দাবির প্রতি সমর্থন করে এবং সহানুভূতিশীল হয়েছে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন মনে করে, বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন হতে হবে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং অংশগ্রহণমূলক। এই অংশগ্রহণমূলক কথাটি তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। 

তারা মনে করছেন, এর মধ্য দিয়ে প্রচ্ছন্নভাবে ইঙ্গিত করা হচ্ছে, যেন বিএনপি আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। বিএনপি যদি আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে, সে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না বলেও অনেকে মন্তব্য করছেন। তবে পশ্চিমা দেশগুলো এই চিন্তা নিয়ে বিভক্ত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যেমন আকারে-ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দিচ্ছে যে, বিএনপিকে নির্বাচনের বাইরে রাখলে সে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না। আবার পশ্চিমা দেশগুলো বলছে যে, নির্বাচনে কারা অংশগ্রহণ করবে- কি করবে না, সেটি বড় কথা নয়। যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে, তাদের মধ্যে যেন সুষ্ঠু প্রতিযোগিতা হয় এবং নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী দলগুলোর মধ্যে যেন লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড হয়, জনমতের প্রতিফলন ঘটে, সেটাই অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনের মূল লক্ষ্য এবং এ রকম একটি নির্বাচন হলেই তা গ্রহণযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হবে।  

কিন্তু এই সমস্ত কূটনৈতিক তৎপরতার একটি ক্ষেত্রে বিএনপি পিছিয়ে রয়েছে। বিএনপি মনে করছে, পশ্চিমা দেশগুলো আগামী নির্বাচন নিয়ে একমত হয়েছে এবং তারা বিএনপির প্রতি সহানুভূতিশীল এবং বিএনপির দাবিকে নানাভাবে তারা সমর্থন করছে। শুধুমাত্র ভারত বিএনপির দাবির প্রতি কোনো ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি দেখাচ্ছে না। বিএনপির অনেক নেতাই বলছেন, ভারতকে যদি আস্থায় না আনা যায়, তাহলে সরকার বিরোধী আন্দোলন, নির্বাচন বানচাল- কোনটাই সফল হবে না।

ভারতকে আস্থায় আনার জন্য বিএনপি এবারই প্রথম নয়, বিভিন্ন সময় চেষ্টা করেছে। ২০১৪-এর নির্বাচনের আগে বিএনপি যখন নির্বাচন বর্জন করেছিল, সেই সময়ে ভারতের সহানুভূতি এবং সমর্থন অর্জন করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু সেই চেষ্টা সফল হয়নি। ভারত সে সময় সংবিধান সুরক্ষা এবং নির্বাচনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করেছিল। ২০১৮-এর নির্বাচনের আগেও বিএনপির নেতারা ভারত সফর করেছিলেন এবং ভারতের কাছে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাদের মতামত দিয়েছিলেন এবং তারা এটাও বলেছিলেন, ‘বিএনপি ভারত বিরোধী নয়’। 

কিন্তু শেষ পর্যন্ত ২০১৮-এর নির্বাচনেও  ভারতকে আস্থায় নিতে পারেনি। এখন পর্যন্ত ভারত বিএনপির প্রতি সহানুভূতিশীল নয়- এমনটি মনে করেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। তার কারণ হিসেবেও বেশ কিছু কারণকে তারা চিহ্নিত করেছেন এবং ভারতও বিভিন্ন সময় তাদের আস্থায় নেওয়ার জন্য বিভিন্ন শর্ত দিয়েছিল, যে শর্তগুলো বিএনপি পূরণ করতে পারে নাই। ভারত যে কারণে বিএনপির প্রতি আস্থাশীল নয় বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, তার মধ্যে রয়েছে:- 

১. তারেক জিয়া: ভারত তারেক জিয়ার নেতৃত্বকে কোনোভাবেই মেনে নিতে পারে না। তারা মনে করে যে, তারেক জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্বৃত্তায়ন, দুর্নীতি, সন্ত্রাসীদের মদদ দেওয়া এবং বিচ্ছিন্নতাবাদীদের পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়ার ব্যাপারে বেশ কিছু অভিযোগ রয়েছে। এই অভিযোগগুলোর কারণেই তারেক একজন বিশ্বাসযোগ্য রাজনীতিবিদ নন। ভারতের পক্ষ থেকে বার বার বলা হয়েছে, তারেক জিয়াকে নেতৃত্ব থেকে পরিবর্তন করা। কিন্তু সেই কাজটি বিএনপি কখনোই করেনি এবং করতে আগ্রহী নয়। 

২. পাকিস্তানের সাথে সম্পর্ক: ভারত মনে করে যে, বিএনপির সঙ্গে পাকিস্তানের একটি গভীর সম্পর্ক রয়েছে। বিশেষ করে আইএসআই- এর পৃষ্ঠপোষকতায় বিএনপি বিকশিত হয়েছে এমন ধারনা অনেকেই মনে করেন। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার যখন ২০০১ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিল, তখন ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নানাভাবে লালন-পালন করে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছে। ১০ ট্রাক অস্ত্র আটকের মধ্য দিয়ে যেটি প্রমাণিত হয়েছে। এখনও বিএনপির সঙ্গে উগ্র মৌলবাদীদের সম্পর্ক রয়েছে বলেও ভারতের কেউ কেউ মনে করেন। এটির কারণে বিএনপির প্রতি তারা আস্থাশীল নয়। 

৩. জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসীদের আশ্রয়-প্রশ্রয়: বিএনপির রাজনীতিতে অনেকেই আছেন- যারা জঙ্গিবাদকে লালন করেন, জঙ্গিবাদে বিশ্বাস করেন এবং সন্ত্রাসীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেন। এই সমস্ত ব্যক্তিরা বিএনপিতে থাকার কারণে ভারত বিএনপিকে আস্থায় নিতে পারছে না বলে অনেকেই মনে করেন। আর বিএনপির নেতারাও স্বীকার করেন, তাদের প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো ভারতের আস্থা অর্জন করা। 

বিএনপির একজন নেতা বলছিলেন, যতক্ষন পর্যন্ত ভারতের আস্থা অর্জন না করা যাবে, ততক্ষন বিএনপি সরকারকে টলাতে পারবে না।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭