ইনসাইড পলিটিক্স

বেগম জিয়াকে গৃহবন্দী করে রাখতে চায় ফখরুল-তারেক


প্রকাশ: 14/05/2023


Thumbnail

বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা যখন আস্তে আস্তে রাজনীতিতে সক্রিয় হচ্ছেন, পর্যায়ক্রয়ে বিভিন্ন জনের সঙ্গে বৈঠকের উদ্যোগ নিচ্ছে তখন তাকে গৃহন্দী করে রাখার চেষ্টা করছে খোদ ফখরুল-তারেক জুটি। আজ মির্জা ফখরুল বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন যে চলমান আন্দোলনে খালেদা জিয়ার পরামর্শ নেওয়ার সুযোগ নেই। কারণ হিসেবে তিনি বেগম জিয়াকে গৃহবন্দী বলে উল্লেখ করেছেন। অথচ কিছু আগেও মির্জা ফখরুল বেগম জিয়ার সঙ্গে ফিরোজায় একান্ত বৈঠক করেছেন এবং নির্বাচনের ব্যাপারে বেগম জিয়া ফখরুলকে তার অভিপ্রায়ের কথা বলেছেন। এরপর কিছুদিন পরই ঈদের দিন বেগম জিয়া দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যদের নিয়ে বৈঠক করেছেন। কিন্তু এরপরও মির্জা ফখরুল বললেন বেগম জিয়া গৃহবন্দী। মির্জা ফখরুলের এমন বক্তব্য নিয়ে বিএনপির মধ্যেই নানামূখী আলোচনা তৈরি হয়েছে। উল্লেখ্য যে বেগম জিয়ার রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করা নিয়ে সরকারের কোনো নিষেধাজ্ঞা বা তিনি রাজনীতি করতে পারবেন না এমন কোনো শর্ত নেই বলে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক নিশ্চিত করেছেন।

জানা গেছে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ব্যাপারে খালেদা জিয়া ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং তিনি দলকে নির্বাচনমূখী করতে চান। খালেদা জিয়ার এমন সিদ্ধান্তের পরপরই তিনি ফিরোজায় দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে ডেকে নেন এবং নির্বাচনের ব্যাপারে তার অভিপ্রায়ের কথা জানান। এর ধারাবাহিকতায় বেগম জিয়া ঈদের দিন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যদের ফিরোজায় ডেকে নেন এবং সেখানেও তিনি আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণের ব্যাপারে তার অভিপ্রায়ের কথা ব্যক্ত করেন। কেন তিনি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চান সেব্যাপারে দলের দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের কাছে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা করেন। আর এ সময় তিনি এক-এগারো সরকারের প্রসঙ্গ আলোচনা করেন। এক-এগারো সরকার কিভাবে বিএনপিকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছিল সেটি তিনি উপস্থাপন করেন এবং বেগম জিয়া নিজে কিভাবে এক-এগারো সরকারের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন সেটি বিষয়গুলো আলোচনা করেন। সেজন্য আরেকটি এক-এগারো কোনভাবেই যেন না আসে সে ব্যাপারেও তিনি নেতাদেরকে সতর্ক করে দেন। 

এখানেই শেষ নয়, যে সমস্ত রাজনৈতিক দল এখন বিএনপির সঙ্গে আন্দোলন করছে তাদেরকে নিয়ে একটি জোট গঠন করে এই সমস্ত দলগুলোকেও নির্বাচনমূখী করার উদ্যোগ নিয়েছেন বেগম জিয়া। আর এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই তিনি নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্নাকেও ডেকে নেন। বেগম জিয়ার পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, সামনে কিছুদিনের মধ্যে বেগম খালেদা জিয়া আরও বেশ কয়েকজন নেতাকে পর্যায়ক্রমে ফিরোজায় ডাকবেন। এটি নিয়ে বেগম জিয়ার ভাই শামীম ইস্কান্দার কাজ করছেন বলে নিশ্চিত তথ্য পাওয়া গেছে। সামনে যারা ফিরোজায় ডাক পাবেন বলে জানা গেছে এদের মধ্যে রয়েছে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) কর্নেল অলি আহমেদ, কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, জেএসডি এর সভাপতি আ. স. ম. আবদুর রবসহ আরও বেশ কয়েকটি দলের প্রধান।

তবে বেগম জিয়ার এমন রাজনৈতিক তৎপরতা নিয়ে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে বিএনপিতে। বিএনপির কোনো কোনো নেতা বলছেন, সরকার বেগম খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়ার অনুমতি দিবেন—এই শর্তে খালেদা জিয়া নির্বাচনে যেতে পারেন এমন একটি দরকষাকষি চলছে। আর এই দরকষাকষির অংশ হিসেবে বেগম জিয়া রাজনীতিতে সক্রিয় হচ্ছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে বিএনপির নেতাদের আশঙ্কা হল এই দরকষাকষি যদি সফল হয় তাহলে বিএনপির আন্দোলন ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে। আর এ কারণে বেগম খালেদা জিয়া যেন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় হতে না পারেন, তিনি যেন সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে না পারেন সেজন্য তারেক জিয়ার নিদের্শে মির্জা ফখরুল এখন বেগম জিয়াকে এড়িয়ে চলছেন। বেগম জিয়া মির্জা ফখরুলকে নির্বাচনের প্রস্তুতির কথা জানালেও মির্জা ফখরুল বলছেন, চলমান আন্দোলনে খালেদা জিয়ার পরামর্শ নেয়ার কোনো সুযোগ নেই। অর্থাৎ গৃহবন্দীর কথা বলে তারেক জিয়া এবং মির্জা ফখরুল বেগম জিয়াকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখতে চান বলে মনে করছেন কোনো কোনো রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭