ইনসাইড পলিটিক্স

জাহাঙ্গীর এখন মুদ্রার ওপিঠ দেখছে


প্রকাশ: 16/05/2023


Thumbnail

একদিনে দুটি ধাক্কা খেয়েছেন সাবেক মেয়র বহিস্কৃত আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলম। একদিকে তাকে চিরস্থায়ী বহিষ্কার করা হয়েছে আওয়ামী লীগ থেকে। অন্যদিকে তার স্ত্রী তার সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ করার ঘোষণা দিয়েছেন। এই দুইটি ঘটনা জাহাঙ্গীরকে কোণঠাসা করে ফেলেছে, খাদের কিনারে নিয়ে গেছে। তারপরও জাহাঙ্গীর কথা বলছেন। আজ তিনি আওয়ামী লীগের নেতাদের রীতিমতো শাসিয়েছেন। তাদেরকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন যে গাজীপুরে এসে ধমক দেবেন না। এটি জাহাঙ্গীরের জন্য আরও বুমেরাং হয়ে যাবে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। 

জাহাঙ্গীরের রাজনীতিতে উত্থান এলাম, দেখলাম এবং জয় করলাম-এর মত। এখন জাহাঙ্গীর মুদ্রার ওপিঠ দেখছে। যারা জাহাঙ্গীরের সঙ্গে ছিলেন, জাহাঙ্গীরের স্তুতি গাইতে গাইতে মুখে ফেনা তুলতেন, যারা জাহাঙ্গীরকে জাতীয় নেতা বানিয়ে ফেলেছিলেন তারা এখন জাহাঙ্গীরের কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। এই অবস্থা থেকে জাহাঙ্গীর কি করবেন? 

আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর সঙ্গে সভাপতির বৈঠকে জাহাঙ্গীরের বহিষ্কারাদেশ চূড়ান্ত হওয়াটা ছিল একটা আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। কারণ আওয়ামী লীগের ঢাকা বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক ইতিমধ্যেই এ ব্যাপারে ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু জাহাঙ্গীরের আশা ছিল যে আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ নেতারা তার বহিষ্কার নিয়ে শেষ পর্যন্ত মুখ খুলবেন না। কারণ তিনি তাদেরকে ম্যানেজ করবেন। যেমন, গাজীপুর নির্বাচনের মূল দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়াকে। তিনি কালকের বৈঠকে জাহাঙ্গীরের বিষয়টি নিয়ে কথা বলেননি। জাহাঙ্গীরের বিষয় নিয়ে প্রথম কথা বলেছেন এসএম কামাল হোসেন। যিনি রাজশাহী বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক। এরপর ঢাকা বিভাগে দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি প্রধানমন্ত্রীকে বলেন যে জাহাঙ্গীরকে বহিষ্কার করা উচিত এবং এটাই সম্পাদকমণ্ডলী মনে করে। প্রধানমন্ত্রী তাৎক্ষণিকভাবে বলেন, হ্যাঁ, জাহাঙ্গীরকে বহিষ্কার কর। এরপরই বহিষ্কারাদেশ চূড়ান্ত করা হয়। 

এই ঘটনার মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয় যে যাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় জাহাঙ্গীর বড় হয়েছেন, যারা জাহাঙ্গীরকে রাতারাতি নেতা বানিয়ে ফেলেছেন এবং আওয়ামী লীগের পরিচয় দিয়ে জাহাঙ্গীর বিশাল জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন তারা তার কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। শুধু কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের এই অবস্থা নয়, জাহাঙ্গীর যখন মনোনয়ন পাননি তখন গাজীপুর আওয়ামী লীগের একটি বড় অংশই তার পক্ষে থাকার ঘোষণা দিয়েছিল। তার বলেছিল যে জাহাঙ্গীরকে যদি মনোনয়ন দেওয়া হয় তাহলে আজমত উল্লাহর বিরুদ্ধে তারা মাঠে নামবে। কিন্তু দিন যতই গড়াচ্ছে ততোই জাহাঙ্গীর আস্তে আস্তে একা হয়ে যাচ্ছেন। 

জাহাঙ্গীরের ঘনিষ্ঠরা তার কাছ থেকে সরে যাচ্ছেন, কেউ তাকে এড়িয়ে চলছেন। এর কারণ হলো জাহাঙ্গীরের সঙ্গে মিশলে আওয়ামী লীগের রাজনীতি অনিশ্চিয়তায় ভরে যাবে। এজন্য কেউই জাহাঙ্গীরের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে চাইছেন না। তার ফলে স্থানীয় পর্যায়ে জাহাঙ্গীর একলা হয়ে গেছেন। এভাবেই জাতীয় রাজনীতিতে জাহাঙ্গীর হয়ে যাচ্ছেন অপাংক্তেয়। 

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন সহসা জাহাঙ্গীরের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হবে না। আর তার মা নির্বাচনে জয়ী হবেন- এমন সম্ভাবনা ক্রমশ ক্ষীন্ন হয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে মাকে মনোনয়ন দেয়ার কারণে পারিবারিকভাবেও ঝামেলায় পড়েছেন জাহাঙ্গীর আলম। এর ফলে এক দুর্গম পদ পাড়ি দিতে হবে আগামী দিনগুলোতে আওয়ামী লীগে হঠাৎ বনে যাওয়া  এই নেতাকে। প্রশ্ন হল জাহাঙ্গীর কি পারবে এই পরিস্থিতি সামাল দিতে? রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, জাহাঙ্গীর তিল তিল করে গড়ে ওঠা রাজনীতিবিদ নন। কাজেই তার জন্য এই পরিস্থিতি সামাল দেয়া প্রায় অসম্ভব।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭