ইনসাইড পলিটিক্স

ভুল কৌশলে গাজীপুরে ব্যাকফুটে আজমত উল্লা


প্রকাশ: 18/05/2023


Thumbnail

গাজীপুরে নির্বাচনের সময় যতই ঘনিয়ে আসছে ততোই চাপে পড়ছেন আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী আজমত উল্লা। তিনি সৎ, যোগ্য প্রার্থী এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। গাজীপুরের রাজনীতিতে শুধু নয় জাতীয় রাজনীতিতে তার অবদান রয়েছে। একজন ত্যাগী, আদর্শবান নেতা হিসেবে তার সুনাম আছে। কিন্তু রাজনীতির কৌশলে তিনি ক্রমশ কোনঠাসা হয়ে পড়ছেন।

গাজীপুর নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ এবং সরকারের কিছু কিছু পদক্ষেপ জাহাঙ্গীরের মায়ের প্রতি এক ধরনের সহানুভূতি তৈরি করছে। বিশেষ করে গতকাল জাহাঙ্গীরকে দুর্নীতি দমন কমিশনে তলব করা নিয়ে গাজীপুরের জনগণের মধ্যে এক ধরনের পরিবর্তিত মনোভাব তৈরি হয়েছে। অনেকেই বলছেন, সরকার জাহাঙ্গীরের ওপর এক ধরনের বল প্রয়োগ করছে এবং তাকে চাপে রাখার কৌশল নিয়েছে। গাজীপুরের অনেক জনগণ মনে করছেন যে, নির্বাচনের আগে কেন জাহাঙ্গীরকে দুর্নীতি দমন কমিশনে তলব করা হলো? জাহাঙ্গীর যে দুর্নীতিবাজ বা দুর্নীতি করেছে, সেটা অনেকেই জানে। সিটি করপোরেশনের মেয়র হয়ে তার বিপুল বিত্তের কথাও কারো অজানা নয়। কিন্তু সে সময় কোনো কিছু করা হয়নি কেন? কেউ কেউ প্রশ্ন করেছেন, তার মা যদি স্বতন্ত্র প্রার্থী না হতো, তাহলে কি এই দুর্নীতি দমন কমিশন তাকে ডাকতো?

গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এবার আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দেয় আজমত উল্লাকে। জাহাঙ্গীরও মনোনয়ন পেয়েছিলেন, ২০১৮ সালে তিনি ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী। ওই নির্বাচনে তিনি বিজয়ী হয়েছেন। তবে বিজয়ী হওয়ার পর তিনি বেসামাল হয়ে পড়েন। এমন সব বক্তব্য এবং কথা-বার্তা বলতে শুরু করেন- যা দলের জন্য বিব্রতকর। পাশাপাশি স্বেচ্ছাচারীভাবে সিটি করপোরেশন পারিচালনা করতে থাকেন। তার নিজস্ব সিন্ডিকেট বাহিনী সমস্ত ব্যবসা-বাণিজ্যের নিয়ন্ত্রক হয়ে ওঠেছিল। এক পর্যায়ে আওয়ামী লীগ জাহাঙ্গীরকে আপত্তিকর বক্তব্যের জন্য দল থেকে বহিষ্কার করে এবং স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ও তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়ার প্রেক্ষিতে তাকে সিটি করপোরেশনের মেয়র পদ থেকে বরখাস্ত করে। কিন্তু স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় তাকে বরখাস্ত করলেও এক বছরের বেশি সময়েও তার বিরুদ্ধে মামলা করতে পারেনি। এ সময় দুর্নীতি দমন কমিশন তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করলেও তখন তার বিরুদ্ধে কোনো আইনী ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বরং কিছুদিন আগে এক আবেদনের প্রেক্ষিতে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা হয় জাহাঙ্গীর আলমের প্রতি। আর এর পরেই জাহাঙ্গীর আলম এবং তার সমর্থক গোষ্ঠী নড়েচড়ে বসেন এবং সিটি করপোরেশন মনোনয়নের জন্য তারা বিভিন্ন চেষ্টা তদবীর করেন। 

কিন্তু শেষ পর্যন্ত প্রার্থীতা না পেয়ে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন এবং তার মা’কে-ও প্রার্থী করেছিলেন। ঋণ খেলাপির অভিযোগে তার মনোনয়নপত্র বাতিল হলেও তার মা এখন নির্বাচনের প্রার্থী। সাধারণ মানুষ তার মা নয় বরং জাহাঙ্গীরকেই প্রার্থী হিসেবে দেখছেন। তারা মনে করছেন জায়েদা খাতুন আসলে জাহাঙ্গীর। এর ফলে এক ধরনের মেরুকরণ হয়েছে গাজীপুরের রাজনীতিতে। শুধু তাই নয়, জাহাঙ্গীর যে নির্বাচন করছেন না, সেটি এক ধরনের প্রতিক্রিয়ায় ফেলেছে। কৌশলগত দিক থেকে প্রথমে যখন জাহাঙ্গীরকে বহিষ্কার করা হলো, সেটি আওয়ামী লীগকে ঐক্যবদ্ধ করেছিল। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের সেখানে যাওয়া এবং তার বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করাটাকে অনেকেই ইতিবাচকভাবে দেখেছিল। 

কিন্তু এখানে আওয়ামী লীগ কৌশলগত ভুল করেছে। জাহাঙ্গীরকে বহিষ্কার করা হলেও জাহাঙ্গীরের অনুগত ওয়ার্ড কাউন্সিলররা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন এবং তারা স্থানীয় পর্যায়ে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে যে প্রচারণা করছেন, সে প্রচারণায় জাহাঙ্গীরের মায়ের পক্ষ অবলম্বন করছেন। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ শুধুমাত্র প্রচারণা করছে আজমত উল্লার জন্য। জাহাঙ্গীর নিয়ন্ত্রিত এই ওয়ার্ড কাউন্সিলররা আওয়ামী লীগ প্রার্থীর জন্য বড় মাথাব্যাথার কারণ হতে পারে বলে অনেকেই মনে করছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, তিনিটি কারণে আজমত উল্লা’র অবস্থা কোনঠাসা হয়ে পড়েছে:

১। জাহাঙ্গীরকে দুদকে তলব করার প্রেক্ষিতে সাধারণ মানুষের মধ্যে একটা সহানুভূতি তৈরি হয়েছে। 

২। জাহাঙ্গীরের অনুগত বাহিনীরা মরিয়া হয়েছে। এবং  

৩। বিদায়ী ওয়ার্ড কান্সিলররা জাহাঙ্গীরের পক্ষে কাজ করছেন। 

এই সমস্ত সমীকরণ মিলিয়ে শেষ পর্যন্ত  আজমত উল্লা নির্বাচনে জয়ী হতে পারবেন কি না, সেটি নিয়েও একটি প্রশ্ন তৈরি হয়েছে, যার ফলাফল পাওয়া যাবে আগামী ২৫শে মে।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭