ইনসাইড বাংলাদেশ

লক্ষ্মীপুরে প্রশাসনের দুর্নীতি ও মাটি দস্যুদের দৌরাত্ম্যে বিপর্যস্ত ভুলুয়া নদী


প্রকাশ: 18/05/2023


Thumbnail

লক্ষ্মীপুরের ঐতিহ্যবাহী ভূলুয়া নদী। দখল আর দূষনে বিপর্যস্ত এই নদীটি। বর্তমানে ইতিহাস ঐতিহ্যের এই নদীটি নাই হয়ে যাচ্ছে। দখল,দূষণ,ভরাট ও পলি জমে লক্ষ্মীপুরের এক সময়ের প্রমত্তা ভুলুয়া নদী এখন প্রায় মৃত নদীতে পরিণত হয়েছে। হারাচ্ছে নদীটির ইতিহাস ও ঐতিহ্য। অন্যদিকে স্থানীয় ইটভাটা মালিকরা তাদের পরিবহনের স্বার্থে নদীর ওপর একাধিক কাঁচা সড়ক নির্মাণ করে অবরুদ্ধ রেখেছেন নদীটি। এতে করে একদিকে এ অঞ্চলের বাসিন্দাদের জীবন-জীবিকা,কৃষ্টি-সভ্যতা, শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির মূল ভিত্তি নষ্ট হচ্ছে, অন্যদিকে নদী কেন্দ্রিক জীববৈচিত্র্য চরম হুমকির মুখে পড়েছে। এখন কেউ শুনছেনা নদীর কান্না! শুকিয়ে মরছে ভূলুয়া নদী। রামগতি উপজেলার চরবাদাম, চরপোড়াগাছা ও কমলনগর উপজেলার চরকাদিরা,তোরাবগন্জ ইউনিয়নের অংশের ভূলুয়া নদী দখল করে স্থানীয় প্রভাবশালীরা বিশাল বিশাল মাছের প্রজেক্ট তৈরি করে নদীটি দখলে নিয়ে যায়। ফজুমিয়ারহাট বাজারের পূর্ব পাশে ভূলুয়া নদী দখল করে মাছের প্রজেক্ট তৈরি করে নদীটি সম্পুর্ন ভরাট করে পেলেন।

সুত্র জানায়,বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর জেলার একটি নদী হচ্ছে ভুলুয়া নদী। নদীটির দৈর্ঘ্য ৭১ কিলোমিটার ও প্রস্থ ৮৫ মিটার। নদীটির প্রকৃতি সৌন্দর্য হারাতে বসছে। নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ থেকে লক্ষ্মীপুর সদর,কমলনগর ও রামগতি উপজেলা হয়ে মেঘনা নদীতে মিলিত হয়েছে এ নদী। এক সময় এ নদীতে উত্তাল ঢেউয়ে প্রবহমান ছিল পানি। ১৯১২ থেকে ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত উন্মত্তা নদী ছিল ভুলুয়া। আশপাশের লাখো মানুষ কৃষি উৎপাদনসহ নানা প্রয়োজনে ব্যবহার করতেন নদীর পানি। বড় বড় সাম্পান, জাহাজ চলাচল করত এ নদীতে। বহু জাতের প্রাকৃতিক মাছের সমাহার ছিল নদীটিতে। জাল ফেলে মাছ ধরে চাহিদা মেটানোসহ জীবন-জীবিকা নির্বাহ করতেন স্থানীয়রা। এরপর থেকে দখল আর দূষণে নদীটি তার স্বরূপ হারিয়েছে।

চরপাগলা এলাকার কৃষক হাবিব, সাইদুর রহমান এবং আব্দুর রহমান  জানান, বর্তমানে নদীটির বিভিন্ন স্থান কিছু অসাধু প্রভাবশালী দখলদার রা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে মাঝখানে বাঁধ দিয়ে বর্ষা মৌসুমে মাছ চাষ করে আসছেন। কেউ কেউ নদীর তীর ঘেঁষে ঘরবাড়ি তুলে দখল করে রেখেছেন। আবার নদীর উপর বিশাল বিশাল মাছের প্রজেক্ট তৈরি করে নদীটি দখল করে রাখেন। নদীটি খনন করে এর স্বরূপ ফিরিয়ে দিলে এ অঞ্চলের প্রায় ৪০ হাজার কৃষকসহ লাখো মানুষ এর সুফল ভোগ করবে।

স্থানীয় সয়াবিন চাষি হুমায়ুন বাংলা ইনসাইডারকে জানান, অপরিকল্পিতভাবে ইটভাটা তৈরিতে বিভিন্ন স্থানে মাটি ভরাট করে উঁচু করার কারণে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির পানিতে সয়াবিনেও গাছের চারা পচন ধরতে শুরু করেছে। সময়মতো সয়াবিন ঘরে তুলতে পারবে কি-না তা নিয়ে ও মহাজনের ঋণের টাকা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন তিনি।

 চরকাদিরা ইউনিয়ন আতর আলি। তিনি অভিযোগ করে বলেন, আগে দেশীয় নানা প্রজাতির মাছ পাওয়া যেত এ ভুলুয়া নদীতে। এখন আর অবৈধ দখলের কারণে পানি চলাচল বন্ধ থাকায় সে সব মাছ পাওয়া যায় না। প্রতি বছর বৃষ্টির পানি আটকে কৃষকদের ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। এসব বিষয় প্রশাসনের অজানা নয়। আর প্রশাসনের পক্ষ থেকে উচ্ছেদ অভিযান না হওয়ায় দখলদারা দিন দিন ভুলুয়া নদীটি ভরাট করে দখলে নিচ্ছে। এখন প্রায় মৃত হয়ে পড়েছে ভুলুয়া নদী। তিনি অবৈধ দখল উচ্ছেদসহ কৃষকদের বাঁচাতে দখলমুক্ত করার জন্য  প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

এদিকে নদীটির দখল-দূষণের কথা স্বীকার করে লক্ষ্মীপুর পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী ফারুক আহমেদ জানান,খননের চেয়ে আগে দখলমুক্ত হওয়া দরকার। তা হলে কৃষক ও সাধারণ মানুষ আগামী বর্ষায় জলব্ধতা থেকে মুক্তি পাবে। তিনি আরো জানান,  বরাদ্ধ আসলেই পর্যায়ক্রমে নদীটি খননের কাজ করা হবে।

রামগতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসএম শান্তনু চৌধুরী জানান, রামগতি উপজেলার অত্যন্ত জনগুরুত্বপূর্ণ নদী এটি। যারা নদী দখল করে মাছের ঘের তৈরী বা দখল করেছেন। তাদের তালিকা তৈরীর কাজ চলছে। দ্রুত এসব দখলবাজদের কবল থেকে ঐতিহ্যবাহী এই নদী উদ্ধার করা হবে।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭