ইনসাইড বাংলাদেশ

নির্বাচনকালীন সরকার: সেনাবাহিনীর ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা এবং নিরপেক্ষ উপদেষ্টার প্রস্তাব


প্রকাশ: 19/05/2023


Thumbnail

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে একধরনের টানাপোড়েন চলছে। বিএনপি বলেছে, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া তারা আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বলেছে, সংবিধানের আওতায় সবকিছু হতে হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার এখন মৃত। প্রধানমন্ত্রী তিন দেশ সফর শেষে সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, নির্বাচনকালীন সরকারে সংসদে যে সমস্ত রাজনৈতিক দল রয়েছে তাদের প্রতিনিধিত্ব থাকতে পারেন। তবে কূটনৈতিক মহল থেকে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির মধ্যে একটি সমঝোতার জন্য আপস-রফার চেষ্টা চলছে। এই প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে নির্বাচনকালীন সরকারের কি কি ব্যবস্থা থাকা উচিত তার একটি প্রস্তাবনা এবং রুপরেখা তারা চূড়ান্ত করেছে। এই রূপরেখা নিয়ে ইতিমধ্যে আওয়ামীলীগ-বিএনপির সাথে আলাপ-আলোচনা শুরু হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। যদিও বিএনপি এখন পর্যন্ত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি থেকে সরে এসে আসেনি। তবে কূটনৈতিক মহল আশা করছেন শেষ পর্যন্ত নির্বাচন নিয়ে একটি সমঝোতা হবে।

কূটনৈতিক অঙ্গন থেকে নির্বাচনকালীন সরকারের যে রূপরেখা প্রণয়ন করা হয়েছে তাতে নিরপেক্ষ উপদেষ্টাদের কথা বলা হয়েছে। বলা হয়েছে যে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে নির্বাচনকালীন সরকারের ১০ জন নির্দলীয়-নিরপেক্ষ উপদেষ্টা থাকবেন। এই উপদেষ্টারা প্রধানমন্ত্রীকে পরামর্শ দিবেন, উপদেষ্টাদের পরামর্শ অনুযায়ী নির্বাচনকালীন সরকার পরিচালিত হবে। নির্বাচনকালীন সরকারের সীমাবদ্ধ ক্ষমতা প্রয়োগ করার ক্ষেত্রে উপদেষ্টারাই থাকবেন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। নিরপেক্ষ উপদেষ্টা হিসেবে কারা থাকবেন—এ বিষয়টি নিয়ে প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের মধ্যে আলাপ আলোচনা হতে পারে বলে কূটনৈতিক মহলের প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, এটি ছাড়াও অবাধ-সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য কূটনৈতিক মহল কতগুলো প্রস্তাবের কথা বিবেচনা করছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব হলো নির্বাচন তদারকির জন্য সেনা মোতায়েন এবং সেনাবাহিনীর হাতে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা প্রয়োগ। 

বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনের একটি প্রচলিত রীতির রয়েছে। প্রতিটি নির্বাচনে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে সেনাবাহিনীর থাকে। কিন্তু বিএনপির পক্ষ থেকে গত নির্বাচনে সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেয়ার দাবি করা হয়েছিল। যদিও সেই দাবি নির্বাচন কমিশন গ্রহণ করেনি। এবার কূটনৈতিক মহল থেকে নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য সেনা মোতায়ন এবং সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেয়ার বিষয়টি বলা হচ্ছে। এছাড়াও নির্বাচন অবাধ-সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ করতে প্রশাসনের সার্বিক দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের ওপর অর্পণ করা, নির্বাচনকালীন সময়ে প্রশাসনের রদবদল ক্ষমতা সরকারের হাত থেকে নির্বাচন কমিশনের হাতে ন্যস্ত করার কথা বলা হয়েছে। এছাড়াও নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য পর্যবেক্ষকদের অবাধ ক্ষমতা প্রদান এবং তাদেরকে নির্বাচনী বুথে যাওয়ার বিষয়টিও আলোচিত হচ্ছে। 

আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, যে সমঝোতা প্রস্তাবই হোক না কেন তা সংবিধানের আওতায় হতে হবে। সংবিধানের বাইরে গিয়ে কোনো সমঝোতা প্রস্তাব হবে না। আওয়ামী লীগ এটাও বলছে, অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশ গুলো যেমন; ব্রিটেন বা ভারতে যেভাবে নির্বাচনকালীন সরকার গঠিত হয় বাংলাদেশেও একই রকম হবে নির্বাচনকালীন সরকার গঠিত হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই বলেছেন ওয়েস্টমিনিস্টার ডেমোক্রেসি অনুসরণ করা হবে। সেই বিবেচনায় আগামী নির্বাচনকালীন সরকার যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই হচ্ছে—এ নিয়ে কোনো সংশয় নেই। তবে বিএনপি প্রধান আপত্তি প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে। তারা বলছে যে বাংলাদেশের সংবিধানে প্রধানমন্ত্রীর যে ক্ষমতা দেয়া হয়েছে সেই ক্ষমতা অপরিসীম। এই ক্ষমতা থাকলে উপদেষ্টামন্ডলী যতই নিরপেক্ষ হোক বা নির্বাচন কমিশনকে যতই ক্ষমতা দেয়া হোক না কেন তাদের কিছু করার থাকে না। যদিও এই মতের সাথে একমত নন কূটনীতিকরা। 

তারা মনে করেন যে নির্বাচন যেহেতু গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হবে এবং উপদেষ্টামন্ডলী থাকবে নিরপেক্ষ কাজেই নির্বাচনে কোনো রকম ক্ষমতা প্রয়োগ বা প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা হলে সেটি তাৎক্ষণিকভাবেই মোকাবেলা করা সম্ভব হবে। কূটনৈতিক মহল চায় যে রাজনৈতিক অচলাবস্থা দূর করার জন্য একটি অবাধ-সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ নির্বাচন হোক এবং সেই নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করুক। বিএনপিকে অংশগ্রহণ করার জন্য একটি একটি সমঝোতা বিভিন্ন দিক নিয়ে আলাপ আলোচনা হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যেই নির্বাচনকালীন সরকারের ব্যাপারে একটি স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাবে। 


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭