প্রকাশ: 20/05/2023
লক্ষ্মীপুরে গেলো দশ বছর আগেও নারিকেল ছিলে ছোবড়া ফেলে দেয়া হতো। কেউ কেউ শুধুমাত্র জ্বালানী হিসেবে ব্যবহার করতেন। কিন্তু আগের ফেলে দেয়া নারিকেলের ছোবড়া এখন অনেক চাহিদা সম্পন্ন পণ্য। শুধু ছোবড়াই না, ছোবড়ার গুড়াও এখন দামী। এমন কথা জানালেন লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার জকসিন এলাকার ছোবরা ব্যবসায়ী আবদুর রহিম।
নারিকেল ছোবড়া থেকে সৌখিনপণ্য তৈরির প্রধান উপাদান কোকো ফাইবার এবং মাটিবিহীন ছাদ বাগান,
নার্সারির গাছ বপন, পশু ও পোল্ট্রিখামার তৈরির অন্যতম উপাদন কোকো ডাস্ট। কোকো ফাইবার
ও কোকোডাস্ট উৎপাদনের প্রধান বাজার দেশের অন্যতম নারিকেল উৎপাদনকারী লক্ষ্মীপুর জেলা।
লক্ষ্মীপুরে
এখন বছরে প্রায় অর্ধশত কোটি টাকার কোকো ফাইবার ও ডাস্ট উৎপাদন হয়। বর্তমানে নতুন এ
দুটি পণ্যের চাহিদা এত বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে যে, কারখানাগুলো পণ্য উৎপাদন করার আগেই অগ্রীম
বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট কয়েকজন ব্যবসায়ী ও শ্রমিকদের সাথে কথা বলে এমন তথ্য জানা
গেছে।
লক্ষ্মীপুর
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে জানা যায়, জেলায় ২ হাজার ৭শ ৩৫ হেক্টর জমিতে নারিকেল
বাগান রয়েছে। বাগান ও বাড়ি থেকে বছরে প্রায় সাড়ে ৫ থেকে ৬ কোটি শুকনো নারিকেল আহরণ
করা হয়। প্রসেসিং কারখানাগুলোতে শুকনো নারিকেলের ছোবড়া থেকে কোকো ফাইবার বা আশঁ এবং
ছোবড়ার গুড়া বা কোকোডাস্ট তৈরি করা হয়।
ইতিমধ্যে ছোবড়া
প্রসেসিং কারখানা গড়ে ওঠেছে জেলার রায়পুর উপজেলার হায়দরগঞ্জ, সদর উপজেলার দালাল বাজার,
জকসিন, মান্দারী, চন্দ্রগঞ্জ, রামগঞ্জ উপজেলার পানপাড়া, মীরগঞ্জ, সোনাপুর, কমলনগর উপজেলার
হাজিরহাট, রামগতির আলেকজান্ডার ও জমিদারহাটে। এসব এলাকায় ছোট বড় ৩০টি কারখানা রয়েছে।
প্রতিটি কারখানায় নারী পুরুষ মিলে কমপক্ষে ১০-১৫ জন শ্রমিক কাজ করেন।
জকসিন এলাকার
ছোবরা কারখানা শ্রমিক রহিম জানান, আগে নারিকেলের ছোবড়ার আশঁ দিয়ে জাজিম, পাপোস, রশি,
সোফা ও চেয়ারের গদিসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য তৈরি করা হতো। বেডিং শিল্পেও ছোবড়ার ব্যবহার
ছিলো। আর ছোবড়া থেকে ফাইবার তৈরির সময় যে গুড়া পাওয়া যেতো তা কোন কাজে লাগতো না। কিন্তু
এখন কোকো ফাইবার নামে ছোবড়ার আশঁ এবং কোকোডাস্ট নামে ছোবড়ার গুড়ার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
রায়পুর উপজেলার
হায়দরগঞ্জ বাজারের নারিকেল ব্যবসায়ী আবদুর রহিম জানান, প্রতিটি কারখানায় প্রতিদিন কয়েক
টন ছোবড়াকে আঁশে পরিণত করা হয়। ব্যাপক চাহিদা থাকায় জেলার বিভিন্ন স্থানে প্রতিবছর
ছোবড়া প্রক্রিয়াকরণ কারখানা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ছোবড়া থেকে মেশিনের সাহায্যে বের করা
হয় আঁশ বা ফাইবার। ছোবড়া সংখ্যা হিসেবে ক্রয় করা হয়। এক হাজার নারকেলের ছোবড়ায় কমপক্ষে
৮০ কেজি আঁশ বা ফাইবার পাওয়া যায়। তিনি আরো জানান, প্রতিটি কারখানা থেকে বছরে প্রায়
দেড় থেকে ২ কোটি টাকার ফাইবার বিক্রি করা হয়।
দালাল বাজার
এলাকার ছোবরা ব্যবসায়ী সততা ট্রেডার্সের মালিক মোঃ জাকির হোসেন জানান, গত ২ বছর আগেও
প্রতিটি নারিকেলের ছোবড়া কেনা হতো ৫০ পয়সা দরে। এখন মানভেদে প্রতিটি নারিকেলের ছোবড়া
৫-৭ টাকায় কেনা হয়। ছোবড়া থেকে ফাইবার তৈরির পর প্রতি ২০ কেজি ওজনের এক একটি ফাইবার
বান্ডেল বিক্রি করে থাকেন ৫শ-৬শ টাকা দরে। প্রতিটি কারখানায় সপ্তাহে ৪-৬ ট্রাক
ফাইবার উৎপাদন হয়। প্রতি ট্রাকে কমপক্ষে দুইশত বান্ডেল ফাইবার বহন করে। বিভিন্ন কোম্পানীগুলো
ফাইবার নিয়ে তোশকের ভেতরের অংশ ম্যাট্রেস বা কয়ার ফেল্ট তৈরি। সে কারণে বর্তমানে ছোবড়ার
আশঁ বা ফাইবারের ব্যাপক চাহিদা। তিনি আরো জানান, সব খরচ বাদে এক একটি কারখানায় মাসে
৫০ হাজারের বেশি আয় হয়ে থাকে।
অন্যদিকে নার্সারি
ব্যবসায়ী মো: আনোয়ার হোসেন জানান, ছোবড়া থেকে ফাইবার তৈরির সময় যে গুড়া বের হয় তা দিয়ে
শাকসবজি চাষ, আধুনিক গ্রীণ হাউজ ও ছাদ বাগানের জন্য কোকোমাস ও কোকোডাস্ট তৈরি করা হয়।
চারা উৎপাদনের জন্য এখন মাটির পরির্বতে কোকোডাস্ট খুবই জনপ্রিয়। এক হাজার নারকেলের
উপজাত হিসেবে বের হয় ১৬০ কেজির মতো গুঁড়া বা কোকোডাস্ট। ২০ কেজির প্রতি বস্তা কোকোডাস্ট
১৪০-১৬০ টাকায় পাইকারি বিক্রি করা হয়।
লক্ষ্মীপুর
বিসিক শিল্প নগরীর সম্প্রসারণ কর্মকর্তা শাহরিয়ার ইসলাম খাঁন জানিয়েছেন, ফেলনা নারিকেল
ছোবড়া থেকে লক্ষ্মীপুরে অনেকগুলো কারখানা তৈরি হয়ে বহু মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি
হয়েছে। পাশাপাশি বছরে প্রায় অর্ধশত কোটি টাকা আয় হচ্ছে কোকো ফাইবার ও কোকোডাস্ট থেকে।
প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান
বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭