ইনসাইড বাংলাদেশ

জটিল অঙ্কের হিসেব-নিকেশে জাহাঙ্গীর-আজমত উল্লা


প্রকাশ: 21/05/2023


Thumbnail

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের শেষ মুহূর্তে প্রচার প্রচারণা চলছে। এই প্রচার-প্রচারণা এখন তুঙ্গে। এই সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত কে হাসবে? আজমত উল্লা নাকি জাহাঙ্গীর? সেই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে ২৫ মে। তবে নির্বাচনের আগে নানা রকম জটিল সমীকরণ মেলাতে হচ্ছে, চলছে জটিল অংকের হিসেব-নিকেশ। নানা কারণে এই নির্বাচনে একদিকে যেমন স্বতন্ত্র প্রার্থী জাহাঙ্গীরের মা শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বীতা গড়ে তুলছেন আবার নানা হিসেব-নিকেশে ২৫ মে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আজমত উল্লা'র বিজয় মোটামুটি সুনিশ্চিত। 

এবার সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে জাহাঙ্গীর আলম এবং আজমত উল্লা দুজনই আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন। জাহাঙ্গীর আলম ২০১৮ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান এবং তিনি মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। কিন্তু মেয়রের দায়িত্ব পালন করার পর তিনি নানা রকম অনিয়ম, বিশৃঙ্খলা, দুর্নীতি এবং নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়েন। এ কারণেই তাকে শেষ পর্যন্ত মেয়রের দায়িত্ব থেকে পদচ্যুত  করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। একইসাথে জাহাঙ্গীর আওয়ামী লীগের গাজীপুর মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকেও বহিস্কৃত হন। এরপর তিনি সাধারণ ক্ষমা চেয়ে আবার আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ফিরে আসেন। কিন্তু এবার মেয়র নির্বাচনে তাকে মনোনয়ন দেয়নি আওয়ামী লীগ। বরং তার বদলে দলের ত্যাগী পরীক্ষিত নেতা আজমত উল্লাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। এই মনোনয়নের সিদ্ধান্ত জাহাঙ্গীর মেনে নেননি। তিনি নিজে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন। একইসাথে তার মাকেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করিয়েছিলেন। 

জাহাঙ্গীর ঋণখেলাপি হওয়ার কারণে তার মনোনয়ন বাতিল হয়ে যায়। এই মনোনয়ন বাতিলের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আদালতের লড়াই করেও হেনে যান জাহাঙ্গীর। ফলে তিনি তার মাকে প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন। এবার নির্বাচনে আজমত উল্লা সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী জাহাঙ্গীরের মা জায়েদা খাতুন। আসলে ভোটারদের কাছে জায়েদা খাতুন নয় বরং জাহাঙ্গীরই আজমত উল্লা'র বিদ্রোহী প্রার্থী। নানা অপকর্মের পরও একাধিক কারণে জাহাঙ্গীরের মায়ের অবস্থান কিছুটা সুবিধাজনক। 

১. জাহাঙ্গীরের পক্ষে কাজ করছেন বিদায়ী ওয়ার্ড কমিশনাররা: যে সমস্ত ওয়ার্ড কমিশনাররা গত সিটি করপোরেশনে আওয়ামী লীগের  মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন তারা গোপনে গোপনে জাহাঙ্গীরের মায়ের পক্ষে কাজ করছেন। এটা নির্বাচনে একটা ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াতে পারে। 

২. জাহাঙ্গীরের নাটক জাহাঙ্গীর: জাহাঙ্গীর প্রতিদিনই নাটক করছেন তাকে বাধা দেয়া হচ্ছে, হামলা করা হচ্ছে ইত্যাদি নানা অভিযোগ করছেন। কিছু কিছু মানুষ এ ধরনের অভিযোগ গুলো বিশ্বাস করছে। বিশেষ করে দুর্নীতি দমন কমিশনে তাকে তলবের বিষয়টি এক ধরনের 
সহানুভূতি তৈরি করেছে কারো কারো মধ্যে। 

৩. জাহাঙ্গীরের বিপুল অর্থ: জাহাঙ্গীর বিপুল অর্থের মালিক এবং এবার নির্বাচনে তিনি টাকা উড়াচ্ছেন। গাজীপুরে বস্তি এবং নিম্ন আয়ের মানুষের কাছে এ সমস্ত টাকা পৌঁছলেন জাহাঙ্গীরের মায়ের জন্য তা ইতিবাচক হতে পারে বলে কেউ কেউ মনে করছেন। 

তবে এই নির্বাচনে আজমত উল্লা'রও অনেকগুলো ইতিবাচক দিক রয়েছে। 

১. ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগ: প্রথমবারের মতো আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে তাদের প্রার্থী  আজমত উল্লা'র পক্ষে। বিশেষ করে মনোনয়ন না পাওয়ার পর জাহাঙ্গীর যে সমস্ত কাণ্ডকারখানা করেছেন তাতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ। তারা জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে একাট্টা হয়েছেন। পাশাপাশি গত দুই বছরে গাজীপুরে প্রতিটি ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের কমিটি হয়েছে। কমিটিগুলোকে কিছু প্রমাণ করতে হবে এবং এবং এবারের নির্বাচন সেই প্রমাণের একটা বড় প্ল্যাটফর্ম। 

২. সাধারণ মানুষের সমর্থন: আজমত উল্লা তার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে সাধারণ মানুষের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় নেতা ছিলেন। নির্লোভ, সৎ একজন ব্যক্তি হিসেবে তিনি জনগণের কাছে পরিচিত। এ কারণেই জনগণ এবার তার আপন মানুষকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করতে চায়। আওয়ামী লীগ-বিএনপির বাইরে একটা বিরাট জনগোষ্ঠী আজমত উল্লা'র পক্ষে রয়েছে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। 

৩. জাহাঙ্গীরের অপকর্ম: সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে জাহাঙ্গীর তিন বছরের বেশি সময় যে অনিয়ম স্বেচ্ছাচারিতা দুর্নীতি করেছে তা গাজীপুরবাসী ভালো মতই জানে। আর এ কারণেই তারা এখন জাহাঙ্গীরের কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। তারা জাহাঙ্গীরের অসৎ আচরণ, ঔদ্ধত্য এবং এবং মাস্তানিকে প্রতিহত করতে চায় নির্বাচনের মধ্য দিয়ে। এই কারণে আজমত উল্লা তাদের প্রথম পছন্দ। এই জটিল সমীকরণে পক্ষে-বিপক্ষে নানারকম হিসেব-নিকেশ শেষে কে নির্বাচনে জয়ী হবে তার অপেক্ষায় গাজীপুরবাসী, গোটা বাংলাদেশ। 


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭