বরিশাল আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ সংকট নিয়ে যেন একটা হ য ব র ল হওয়ার অবস্থা তৈরি হয়েছে। দলের মধ্যে কোনো 'চেইন অব কমান্ড' নেই। আওয়ামী লীগ আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এক পক্ষ আরেক পক্ষের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করছে। কোথাও কোথাও ঘটছে সহিংসতা।
বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচন তদারকির জন্য আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর নেতৃত্বে ৯ সদস্যের যে কমিটি গঠন করা হয়েছে সেই কমিটির আস্তে আস্তে অকার্যকর হয়ে পড়েছে। উভয় পক্ষই একে অপরকে দেখে নেওয়ার মানসিকতার কারণে নির্বাচনের আগেই যেন বরিশালে আওয়ামী লীগ কোণঠাসা হয়ে গেছে। আর এর কারণ হলো ঘরের শত্রুরাই বিভীষণ হয়ে উঠেছে। যখন বরিশাল সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে সাদিক আব্দুল্লাহকে মনোনয়ন না দিয়ে খোকন সেরনিয়াবাতকে মনোনয়ন দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ড তখন থেকেই এই বিরোধের শুরু।
বরিশালে যারা আবুল হাসনাত আবদুল্লাহপন্থি ছিলেন এই ঘটনায় তারা কোণঠাসা হয়ে পড়েন। অন্যদিকে দীর্ঘদিন ধরে সাদিক আব্দুল্লাহর বাড়াবাড়ি, অনিয়ন্ত্রিত উশৃঙ্খল আচরণের কারণে যারা কোণঠাসা ছিলেন আওয়ামী লীগে, যারা রাজনীতি থেকে নিজেদেরকে গুটিয়ে নিয়েছিলেন খোকন সেরনিয়াবাত এর মনোনয়নের পরপরই তারা লাফিয়ে ওঠে। এরপর তারা ১২ জুন পর্যন্ত অপেক্ষা করার সময় নেই, তারা এখনই সাদিক আব্দুল্লাহ এবং আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ পন্থিদেরকে দেখে নেওয়ার প্রয়াস শুরু করেন। ফলে শুরু হয় পাল্টাপাল্টি অবস্থান। আবুল হাসনাত আবদুল্লাহপন্থিরা মনে করেন যদি শেষ পর্যন্ত এই নির্বাচনে খোকন সেরনিয়াবাত জয়যুক্ত হয় তাহলে তাদের রাজনীতির শেষ হয়ে যাবে।
আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ কেন্দ্রীয় নেতা। সাদিক আব্দুল্লাহ প্রধানমন্ত্রীর আত্মীয় কাজেই তাদের হয়তো শেষ পর্যন্ত কিছু হবেনা। কিন্তু যারা আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর পক্ষ অবলম্বন করে বরিশালের রাজত্ব করেছেন তাদের বরিশালে টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়বে। এ কারণে যে কোনো মূল্যে তারা খোকন সেরনিয়াবাতকে নির্বাচনে পরাজিত করার মিশনে নেমেছেন এবং এই মিশন শুধুমাত্র যে গোপনে গোপনে তা নয়, প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে তাদের এই বিরুদ্ধাচারণ।
অন্যদিকে খোকন সেরনিয়াবাত এর পক্ষে মূলত রয়েছেন যারা আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ বিরোধিতা করেছেন এতদিন। এই বিরোধিতাকারীরা আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ কাছে কোণঠাসা হয়ে থাকা নেতৃবৃন্দ এখন মনে করছেন এটাই উপযুক্ত সময়। যে কোনো মূল্যে হাসনাত পন্থিদেরকে বরিশাল থেকে ঝেটিয়ে বিদায় করতে চান। নির্বাচন পর্যন্ত তারা অপেক্ষা করতে চান না। বরং নির্বাচনের আগেই যেন হাসনাতের সমর্থক মুক্ত একটা বরিশাল গঠন করা হয় সেই প্রচেষ্টাতে তারা ব্যস্ত, নির্বাচনের দিকে তাদের কোন মনোযোগ নেই। আর এই ধারণার বশবর্তী হয়ে যারা কাজ করছেন তাদেরকে সমর্থন দিচ্ছেন আওয়ামী লীগের কিছু কেন্দ্রীয় নেতা। ফলশ্রুতিতে নির্বাচনে জয়-পরাজয় না, এক পক্ষ আরেক পক্ষকে দেখে নেয়ার সংগ্রাম এবং যুদ্ধে লিপ্ত রয়েছে। যার পরিণাম বরিশালে আওয়ামী লীগের অবস্থা এখন হতশ্রী আকার ধারণ করেছে। কিছুতেই এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে পারছে না আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বলছেন যে হাসানাত আব্দুল্লাহকে দায়িত্ব দেওয়া হলেও তিনি যে খোকন সেরনিয়াবাত এর পক্ষে কাজ করবেন না এটি মোটামুটি নিশ্চিত। তবে এখন পর্যন্ত আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ তার রাজনৈতিক মস্তিস্ক ঠিক করেছেন। এসব বিরোধের মধ্যে তিনি প্রকাশ্যে জাড়াননি। তবে হাসনাতপন্থিরা এবং হাসনাত বিরোধীদের পরস্পর মুখোমুখি অবস্থানের কারণে বরিশালে আওয়ামী লীগের ব্যাপারে একটা নেতিবাচক ধারণা তৈরি হচ্ছে।