ইনসাইড পলিটিক্স

আন্দোলনে বাতাস দেবে বিদ্যুৎ-দ্রব্যমূল্য-অর্থনীতি?


প্রকাশ: 21/05/2023


Thumbnail

বিদ্যুৎ নিয়ে সাধারণ মানুষের বিরক্তি এখন বেড়েই চলেছে। বিদ্যুৎ আসছে-যাচ্ছে সেটা বড় কথা নয়। সরকার শুরুতে যেমন লোডশেডিং এর একটি সিডিউল ঘোষণা করেছিল কখন বিদ্যুৎ যাবে, কখন বিদ্যুৎ থাকবে সে সম্পর্কে আগাম ঘোষণা দেয়া হয়েছিল। সেই সিডিউল বলে কোনো কিছু নেই। বিদ্যুৎ একেক স্থানে একেক রকম ভাবে যাচ্ছে। মনের খেয়ালখুশিমতো বিদ্যুৎ যাচ্ছে এবং আসছে। কোথাও ১৫ মিনিট থাকার পর আবার চলে যাচ্ছে, এসে আবার পাঁচ মিনিট থেকে চলে যাচ্ছে। এরকম একটি ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে ঢাকাসহ সারাদেশে। 

ঈদের পর ঢাকার বাইরে বিদ্যুৎ সংকট ছিল। কিন্তু ঢাকায় বিদ্যুতের লোডশেডিং ছিল মোটামুটি সহনীয় পর্যায়ে। কিন্তু গত এক সপ্তাহে ঢাকাতে এখন কোনো নিয়ম নীতির বালাই নেই। বিদ্যুৎ কখন যাবে, কখন আসবে কেউ জানেনা। এর ফলে মানুষের মধ্যে এক ধরনের অস্থিরতা, অস্বস্তি এবং বিরক্তি তৈরি হচ্ছে। ঘরে যখন বিদ্যুৎ নিয়ে মানুষের মধ্যে বিরক্তি তখন বাজারেও সুখবর নেই। পেঁয়াজের দাম, চিনির দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে এবং এটির উপর কোনো নিয়ন্ত্রন নেই কারো। 

বাংলাদেশের চিনির দাম কেন এত বেশি হবে—এ নিয়ে প্রশ্ন উঠছে এখন নাগরিক মহলে। বিশেষ করে সাধারণ মানুষ তাদের বাজারের হিসাব মিলাতে পারছেন না। বিদ্যুতের পাশাপাশি দ্রব্যমূল্য নিয়েও মানুষের মধ্যে এখন চাপা উত্তেজনা তৈরি হচ্ছে এবং এই উত্তেজনা ক্ষোভে রূপ নিতে শুরু করেছে। অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ভালো নয়। বিশেষ করে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে গেছে। আমদানির ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা নানা প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হচ্ছেন। ব্যাংকে ঋণ খেলাপিদের রেকর্ড হয়েছে। এরকম একটি বিমর্ষ অর্থনীতির চিত্র নিয়ে নতুন বাজেট উপস্থাপন করতে যাচ্ছে বর্তমান সরকার। যেটি এই সরকারের আমলে শেষ বাজেট হবে। 

দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি এবং অর্থনীতি নিয়ে যখন এরকম হতাশার চিত্র সেই সময় সরকারের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি সহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঘোষণা করেছেন, দাবি এখন একটাই সেটি হলো এক দফা দাবি। আর এই এক দফা দাবি অর্জন করতে করার জন্য এখন তারা আন্দোলন করবেন—এমন কথা বলছে। বিএনপি ১৬ বছর ধরে সরকার থেকে দূরে আছে। গত ১৬ বছরে বিএনপি এখন পর্যন্ত কোনো বড় ধরনের আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেনি। এ আন্দোলন গড়ে তুলতে না পারার বিএনপির যেমন ব্যর্থতা আছে তেমনি রয়েছে সরকারের সফলতা। 

গত ১৪ বছরের বেশি সময় সরকার দেশের অর্থনীতিকে একটি শক্ত মজবুত অবস্থানে দাঁড় করিয়েছে। বাংলাদেশের মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বেড়েছে জীবনমান উন্নত হয়েছে এবং অর্থনৈতিক সুফল প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। যার ফলে ২০১৪ বা ২০১৫ সরকারবিরোধী আন্দোলনে মানুষ সায় দেয়নি। এমনকি ২০১৪ সালে বিএনপি-জামায়াত নির্বাচন বয়কট করলেও একতরফা নির্বাচনকে ইতিবাচকভাবে নিয়েছে সাধারণ জনগণ। অর্থনীতির চাকা সচল থাকা, মানুষের জীবন-জীবিকা, আয়-উপার্জন, একটি ভালো অবস্থায় থাকার কারণেই তারা সরকারকে সমর্থন দিয়ে গেছে এবং বিরোধী আন্দোলন থেকে দূরে সরে নিজেদের গুটিয়ে রেখেছে। কিন্তু এবার যেভাবে একের পর এক নাগরিক জীবনের নানা রকম দুর্ভোগ তৈরি হচ্ছে তাতে সরকারবিরোধী আন্দোলনে কি সাধারণ মানুষ যোগ দিবে? দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি বা বিদ্যুৎ থাকের ভোগান্তি নিয়ে তিক্ত বিরক্ত মানুষ কি রাজপথে নামবে—এমন প্রশ্ন গুলো উঠছে। যদিও এখন পর্যন্ত বিরোধী দলের আন্দোলনে সাধারণ মানুষের কোন সাড়া নেই। এই আন্দোলনের ব্যাপারে সাধারণ মানুষের কোনো উৎসাহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। কিন্তু বাংলাদেশে হঠাৎ করেই অনেক কিছু হয়ে যায়। কাজেই দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি ঊর্ধ্বগতিসহ পরিস্থিতি গুলোকে এখনই সরকারের সামাল দিতে হবে। আগামী নির্বাচনের আগে একটি সহনীয় পরিস্থিতি এবং পরিবেশ তৈরি করতে হবে বলেই মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭