ইনসাইড পলিটিক্স

আওয়ামী লীগ কেন বন্ধুহীন হয়ে পড়ছে?


প্রকাশ: 22/05/2023


Thumbnail

বাংলাদেশের ৭৫ পরবর্তী রাজনীতিতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারক-বাহক বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দলগুলো ভুলভ্রান্তি সত্বেও আওয়ামী লীগের পাশে থেকেছে। বুদ্ধিজীবী মহল, শিক্ষিত জনগোষ্ঠী, শিক্ষক এবং বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষরা আওয়ামী লীগকেই একটি অস্থাভাজন রাজনৈতিক দল হিসেবে বিবেচনা করেছে। কিন্তু সেই আওয়ামী লীগ গত ১৪ বছরে ক্ষমতায় যেন আস্তে আস্তে বন্ধুহীন হয়ে পড়েছে। আওয়ামী লীগ যখন বিজয়ী হয়, তখনই একা হয়, আর যখন পরাজিত হয় তখন সে দলটি বন্ধু খোঁজে- এমন সমালোচনা আওয়ামী লীগ সম্পর্কে করেন কেউ কেউ। বাস্তবে কি তাই? 

১৯৯৬ সালে ২১ বছর পর ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। জাতির পিতার হত্যাকাণ্ডের পর এই প্রথম দলটি দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পায়। ৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করবার পর প্রধানমন্ত্রী হন শেখ হাসিনা। তিনি ঐক্যমতের সরকার গঠন করেন এবং জাতীয় পার্টি থেকে আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, জাসদ থেকে আ স ম আব্দুর রবকে মন্ত্রীসভায় অন্তর্ভূক্ত করেন। কিন্তু জাতীয় ঐক্যমতের এই ধারা আওয়ামী লীগ ২০১৮-এর সরকার গঠন পর্যন্ত বজায় রেখেছিল। 

২০০৯-এ আওয়ামী লীগ বিপুল বিজয় অর্জন করে দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসে। ওই সময় আওয়ামী লীগ মহাজোটের ব্যানারে নির্বাচন করে। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াতের বিজয়ের পর আওয়ামী লীগের উপর নেমে আসে নির্মম হত্যাচার। আওয়ামী লীগের নেতাদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়, হত্যা করা হয়। সারাদেশে বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীরা আওয়ামী লীগের উপর তাণ্ডব চালায়। এরকম একটি বাস্তবতায় আওয়ামী লীগ ঐক্যের সন্ধান করে। প্রথমে আদর্শভিত্তিক রাজনৈতিক জোট গঠন করে- যেটি ১৪ দল হিসেবে পরিচিত। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি চর্চা করে- এমন রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়েই আওয়ামী লীগ ১৪ দলীয় জোট গঠন করে। এর মধ্যে ওয়ার্কারস পার্টি, জাসদও এরমধ্যে অন্তর্ভূক্ত ছিল। 

কিন্তু ১৪ দলের মাধ্যমে জোটগত আন্দোলনের পাশাপাশি আওয়ামী লীগ নির্বাচনের জন্য একটি মহাজোট গঠন করে। সেই মহাজোটে জাতীয় পার্টিকে ভেড়াতে সক্ষম হয়। বিএনপি এবং জামায়াতকে একঘরে করে অন্যসব রাজনৈতিক দলগুলোকে মোটামুটি এক ছাতার নিচে নিয়ে আসার কৃতিত্ব দেখায় আওয়ামী লীগ। আর এ কারণেই ২০০৯-এর নির্বাচনে ভূমিধ্বস বিজয় পেয়েছিল। ওই নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর আওয়ামী লীগ মহাজোটের সকল রাজনৈতিক দলগুলোকে মন্ত্রীসভায় অন্তর্ভূক্ত করে। জিএম কাদের যেমন মন্ত্রী হন, তেমন মন্ত্রী হন দিলীপ বড়ুয়াও। 

২০১৪-এর নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ একটি নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করে। সেই সরকারে আওয়ামী লীগ মহাজোটের অংশগ্রহণ আরও বাড়িয়ে দেয়। এ সময় মহাজোট থেকে রওশন এরশাদসহ আরও কয়েক জন মন্ত্রী হন এবং রাশেদ খান ও হাসানুল হক ইনুকেও মন্ত্রী করা হয়। ২০১৪-এর নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ একই ধারায় ঐক্যমতের সরকার গঠন করে, যে সরকারে জাতীয় পার্টি, ওয়ার্কারস পার্টি, জাসদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকে সম্পৃক্ত করা হয়েছিল। কিন্তু ২০১৮’র নির্বাচনের পর থেকে আওয়ামী লীগ একলা চলো নীতি নিয়েই চলছে। এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের মন্ত্রীসভায় অন্য কোনো সদস্য নেই। 

মন্ত্রীসভায় সদস্য না-ও থাকতে পারে। কিন্তু রাজনৈতিক পরিস্থিতি মোকাবিলার ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ যেন বন্ধুহীন অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে। ১৪ দল থেকেও নেই। সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপি যখন রাজপথে আন্দোলন করছে এবং বিভিন্ন ইস্যুতে তারা কথা বলছে, তখন ১৪ দলের কোনো সক্রিয় কার্যক্রম চোখে পড়ে না। আবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যখন সরকারের টানাপোড়েন চলছে, তখন আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের মিত্র বামরাও আওয়ামী লীগের পাশে নেই। 

আওয়ামী লীগের সঙ্গে সুশীল বুদ্ধিজীবীদের সম্পর্কের দূরত্ব তৈরি করা হয়েছে। তাদের অনেকেই এখন আওয়ামী লীগের সমালোচক। আওয়ামী লীগের এই বন্ধুহীন হয়ে পড়াকে অনেকেই বিপজ্জনক মনে করছেন। তারা বলছেন, মুক্তিযুদ্ধের এই সপক্ষের শক্তিগুলোকে যদি একত্রিত না করা যায়, তাহলে স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তিকে প্রতিহত করা যাবে না। সাম্প্রতিক সময়ে সরকার বিরোধী আন্দোলনের নামে স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তিগুলো আবার মাথাচাড়া দিয়ে ওঠেছে। আওয়ামী লীগের বন্ধুহীন হয়ে থাকার সুযোগ নিচ্ছে তারা। 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭