ইনসাইড বাংলাদেশ

কি হচ্ছে গাজীপুরে


প্রকাশ: 23/05/2023


Thumbnail

আগামী ২৫ মে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচন। আজ (২৩ মে) মধ্যরাত থেকে নির্বাচনী প্রচারণা বন্ধ হচ্ছে। গাজীপুর নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করছে না। কিন্তু তারপরও এই নির্বাচনকে ঘিরে টানটান উত্তেজনা। আন্তর্জাতিক মহল বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো এ নির্বাচন গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। আজমত উল্লা নাকি জাহাঙ্গীরের মা জায়েদা খাতুন এ নির্বাচনে জয়ী হবে তা নিয়ে নানামুখী আলাপ-আলোচনা। গাজীপুর নির্বাচন নানা কারণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ; 

প্রথমত, এই নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ প্রমাণ করতে পেরেছে যে বিএনপিকে ছাড়াও একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ অংশগ্রহণমূলক এবং উৎসবমুখর নির্বাচন করা যায়। গাজীপুর নির্বাচনের ফলাফল যাই হোক না কেন এই নির্বাচনকে ঘিরে গাজীপুরে যে উত্তেজনা এবং উৎসাহ-উদ্দীপনা তা বিএনপিকে ছাড়া আরেকটি নির্বাচনের ব্যাপারে আওয়ামী লীগকে উৎসাহিত করবে।

দ্বিতীয়ত, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের ফলাফলের উপরও জাতীয় নির্বাচন অনেকখানি নির্ভর করছে। এই নির্বাচন যদি শেষ পর্যন্ত অবাধ-সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ বিবেচনায় সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য হয় তাহলে সেটি হবে আওয়ামী লীগের জন্য ইতিবাচক ঘটনা। তাহলে আওয়ামী লীগ প্রমাণ করতে পারবে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়াও তারা সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারে। আর এর ফলে আন্তর্জাতিক মহলে বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি দুর্বল হয়ে পড়বে। 

তৃতীয়ত, গাজীপুরে নির্বাচনে যদি শেষ পর্যন্ত পেশী শক্তির প্রয়োগ হয়, কারচুপির অভিযোগ ওঠে বা সরকার সমর্থিত প্রার্থীকে জোর করে জয়ী করার জন্য অন্য কোনো দৃশ্যমান অপতৎপরতা প্রমাণিত হয় সেক্ষেত্রে সরকারের জন্য তা হবে এক ধরনের কঠিন পরীক্ষার মতো। এর ফলে জাতীয় নির্বাচনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আরও শক্তিশালী হবে। দলীয় সরকারের অধীনে অবাধ-সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ নির্বাচন করা যায় না এই মতবাদটি আরও শক্ত পোক্ত হবে। এটি হবে আওয়ামী লীগের জন্য একটি চরম বিপর্যয়।

চতুর্থত, গাজীপুর নির্বাচনে যদি অবাধ-সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ নির্বাচনের পর আজমত উল্লা'র জয় হয় তাহলে আওয়ামী লীগের জন্য সেটি হবে বোনাস পাওয়ার মতই। কারণ তাহলে আওয়ামী লীগ বলতে পারবে ১৪ বছরের বেশি সময় ক্ষমতায় থাকার পরও আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা ধস নামেনি। আওয়ামী লীগ এখন পর্যন্ত জনপ্রিয় দল গাজীপুরের নির্বাচন তার প্রমাণ। এই নির্বাচনে বিজয়ের ফলে আওয়ামী লীগের মধ্যে আরেকটি বিষয় প্রমাণিত হবে তা হলো দলের ত্যাগী পরীক্ষিত এবং দুঃসময়ের কান্ডারীরাই মনোনয়ন পাওয়ার যোগ্য। বাইরে থেকে আমদানি করা অনুপ্রবেশকারী হাইব্রিডদেরকে নির্বাচনে প্রার্থী করা হলে সেটি দলের জন্য ভবিষ্যতে ক্ষতিকর হয়।

গাজীপুর নির্বাচনের যদি আজমত উল্লা বিজয়ী হন তাহলে সারাদেশে আওয়ামী লীগের মধ্যে যে বিভক্তি, কোন্দল ইত্যাদি অনেকটাই কমে যাবে এবং একটি ঐক্যের তাগিদ অনুভব করবেন নেতাকর্মীরা। কারণ দল থেকে বিচ্যুত হলে শেষ পর্যন্ত তার পরিণতি কি হয় জাহাঙ্গীর সেটার প্রমাণ। এই বিবেচনা থেকে দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল উল্লেখযোগ্য হারে কমবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে  নির্বাচনে যদি শেষ পর্যন্ত জাহাঙ্গীরের মা ভালো ফলাফল করেন তাহলে আওয়ামী লীগের জন্য সেটিও হবে একটি বড় ধরনের বিপর্যয়কর ঘটনা। কারণ এর ফলে সারাদেশে বিদ্রোহী প্রার্থীদের মহামারী শুরু হবে। যে যার মতো করে ইচ্ছা দাঁড়াতে থাকবে। দলীয় আদর্শবিহীন হঠাৎ টাকাওয়ালা ব্যক্তিরা নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার জন্য শক্ত দাবিদার সেটি আরেকবার প্রতিষ্ঠিত হবে। এর ফলে শুধু গাজীপুরের আওয়ামী লীগ ক্ষতিগ্রস্ত হবে না সারাদেশে আওয়ামী লীগের মধ্যে এক ধরনের বিশৃঙ্খলা তৈরি হবে। এ কারণে গাজীপুর নির্বাচনের ফলাফল কি হতে যাচ্ছে তার ওপর আগামী দিনের রাজরীতি বিশেষ করে আওয়ামী লীগের রাজনীতির অনেক কিছু নির্ভর করছে। 


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭