ইনসাইড পলিটিক্স

বিএনপি আর অপেক্ষা করতে চায় না


প্রকাশ: 24/05/2023


Thumbnail

নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্বাবধায়ক সরকারের দাবীতে আন্দোলন করছে বিএনপি। কিন্তু তাদের আন্দোলন ক্রমশ সহিংস হয়ে পড়ছে। গত কিছুদিন ধরে ঢাকা এবং বিভিন্ন জেলায় বিএনপি’র সঙ্গে পুলিশ এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহিংসতার খবর পাওয়া গেছে এবং এ সহিংসতা আরও বাড়তে পারে বলেও ধারণা করা হচ্ছে। বিএনপি’র পরিকল্পনা ছিল, সেপ্টেম্বর অক্টোবর থেকে তারা চূড়ান্ত আন্দোলনে যাবে এবং সেই সময় তারা হরতাল ঘেরাও কর্মসুচি পালন করবে। কিন্তু সেই অবস্থান থেকে বিএনপি সরে গেছে। বিএনপি’র মধ্যে যারা উগ্রপন্থী রয়েছেন, যারা ধ্বংসাত্মক রাজনীতি আবার ফিরিয়ে আনতে চান, তারা আর অপেক্ষা করতে চায় না। বিএনপি’র একাধিক নেতা বলছেন যে, সেপ্টেম্বর অক্টোবরে আন্দোলন করলে নির্বাচন বাধা দেয়া যাবে না এবং সরকারেরও পতন হবে না। তাই তখন নির্বাচনে অংশগ্রহণের কোন বিকল্প থাকবে না। একারণেই বিএনপি আর অপেক্ষা করতে রাজি নয়। তারা এখনই আন্দোলন করছে। আর এই আন্দোলোন তারা আপাতত জোটবদ্ধভাবে করবেন না বলেও জানা গেছে।

উল্লেখ্য যে, বিএনপি গত এক বছর ধরেই সরকার পতনের দাবীতে ধাপে ধাপে আন্দোলন করছে। গত বছর নভেম্বর ডিসেম্বর মাসে তারা সারা দেশে বিভাগীয় সমাবেশ করে। এই বিভাগীয় সমাবেশের পর ঢাকা থেকে চূড়ান্ত আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে এমনটি জানিয়েছিল বিএনপি। ঢাকায় সমাবেশের তারিখ ছিল গত বছর ১০ ডিসেম্বর। ঐ সমাবেশের আগে বিএনপি নেতা আমানুল্লাহ আমান বলেছিলেন, ১০ ডিসেম্বরের পর সরকার থাকবে না। খালেদা জিয়ার কথায় সবকিছু চলবে। ১০ ডিসেম্বরকে ঘিরে বিএনপির নাশকতা এবং এক ধরণের ষড়যন্ত্রের পরিকল্পনাও ছিল বলে মনে করেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ সদস্যরা। তাদের বক্তব্যের সত্যতা মেলে যখন ৭ ডিসেম্বর বিএনপি নেতারা নয়া পল্টনে বিএনপি’র কার্যালয়ের জড়ো হয় এবং সেখানে কর্মীদের জমায়াত করতে শুরু করে। কিন্তু পুলিশ তাতে বাধা দেয়। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ একাধিক নেতাদের গ্রেফতার করা হয়। এরপর বিএনপি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রস্তাবিত স্থানেই সামাবেশ করতে রাজি হয় এবং সেই সমাবেশ থেকে বিএনপি তাদের ৬ জন সংসদ সদস্যের পদত্যাগের ঘোষণা দেয়।

সেদিনের সমাবেশ থেকে কোন চূড়ান্ত আন্দোলনের কর্মসূচি বিএনপি ঘোষণা করতে পারেনি। এর পর থেকেই বিএনপি’র আন্দোলন স্থবির হয়ে পরে। এটি নিয়ে বিএনপি’র মধ্যে একধরণের উত্তেজনা তৈরি হয়। বিএনপি’র অধিকাংশ কর্মীরা মনে করছিলেন যে, তাদের নেতারা বোধহয় সরকারের সাথে আপোষের পথ খুঁজছে। এ জন্যই তারা এখন আন্দোলনের লাগাম টেনে ধরেছেন। আর এর ফলে বিএনপি’র ভেতরে চাপ বেড়ে যায়। এখন বিএনপি’র শীর্ষ নেতাদের মধ্যেও এক ধরণের অস্বস্তি দেখা দিয়েছে। তারা মনে করছেন, নির্বাচনের আর বাকি আছে ৭ মাসেরও কম সময়। এই সময়ের মধ্যে সরকারের উপর বড় ধরণের কোন চাপ যদি সৃষ্টি করা না যায়, তাহলে সরকারের পতন অসম্ভব হয়ে যাবে এবং সরকার বিএনপিকে ছাড়াই নির্বাচন করবে।

বিএনপি’র অনেক নেতাই মনে করেন সরকার এখন একটি ছক কষে এগোচ্ছে। তারা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপিকে বাইরে রেখে অন্যন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে করার পরিকল্পনা করছে। একই সাথে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করলে নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হবে। ফলে আন্তর্জাতিক মহলে তারা এটি দেখাতে সক্ষম হবে যে, নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়েছে। আর এ কারণেই বিএনপি আর অপেক্ষা করতে রাজি নয়। তারা এখন থেকেই চূড়ান্ত আন্দোলন করতে চায়। চূড়ান্ত আন্দোলন বলতে তারা সহিংস অবস্থায় আন্দোলনকে ফিরিয়ে আনতে চায় এবং সেই সহিংসতার মাধ্যমে তারা নির্বাচনকেই অনিশ্চিত করতে চায়। এখন দেখার বিষয় বিএনপি’র এই কৌশল সফল হয় কিনা।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭