ইনসাইড বাংলাদেশ

কি হবে ড. ইউনূসের?


প্রকাশ: 24/05/2023


Thumbnail

সরকারের অনেকগুলো মাথাব্যাথার মধ্যে ড. ইউনূসের বিষয়টি অন্যতম। ড. ইউনূস সরকারের বিরুদ্ধে দেশে বিদেশে নানা রকম অপ্রপচারে লিপ্ত। বিশেষ করে বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে সূশীল সমাজকে ক্ষেপিয়ে তোলা এবং একটি অনির্বাচিত সরকারকে আবার ক্ষমতায় আনার পেছনে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে বলে সরকারের নীতি-নির্ধারকরা মনে করেন। অন্যদিকে ড. ইউনূস মনে করেন, সরকার প্রতিহিংসাবশত তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন। ইউনূসের পক্ষে কয়েকজন আন্তর্জাতিক ব্যক্তি ওয়াশিংটনপোস্টে একটি বিজ্ঞাপনও প্রচার করেছিল কিছুদিন আগে। 

কিন্তু তর্ক-বিতর্ক এখন আদালত পর্যন্ত দাঁড়িয়েছে এবং ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে আয়কর ফাঁকির যে মামলাটি- তা হাইকোর্টে শুনানি শেষ হয়েছে। আগামী ৩১ মে এই মামলার রায় প্রদান করা হবে। এ রায়ের আইনগত দিক যাই হোক না কেন- এর একটি গভীর রাজনৈতিক তাৎপর্য রয়েছে। ড. ইউনূসের সাথে সরকারের টানাপোড়েন শুরু হয় ২০০৬ সালে- যখন তিনি শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেয়ে একটি রাজনৈতিক দল গঠনের ঘোষণা দেন এবং সেই সময়ে তিনি বাংলাদেশের প্রচলিত রাজনীতির ধারার প্রচুর সমালোচনা করেন। 

অনেকেরই ধারণা, বাংলাদেশে এক-এগারো আনার ক্ষেত্রে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। আর এ কারণেই ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে বিরাজনীতিকরণের প্রধান পৃষ্ঠপোষক মনে করা হয়। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগের সাথে এই টানাপোড়েন সম্পর্ক আস্তে আস্তে প্রকাশ্য রূপ নিতে শুরু করে। এ সময় ড. ইউনূসও সরকারের বিরুদ্ধে দেশে-বিদেশে নানা অপপ্রচারে লিপ্ত হন। ড. ইউনূসের চাকরির বয়সসীমা উত্তীর্ণ হলে তাকে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক থেকে অপসারণ করা হলে তিনি তার বিরুদ্ধে আইনী লড়াইয়ে যান এবং ওই মামলায় তিনি হেরে যান। 

এরপর তিনি এ নিয়ে তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের কাছে নালিশ করেন। বিশ্বব্যাংক যেন পদ্মাসেতুতে অর্থায়ন না করে, সেজন্য লবিং করেন। কিন্তু এ সমস্ত তৎপরতার ফলে ড. ইউনূসের তেমন লাভ হয়নি বটে। অন্যদিকে সরকারও এর ফলে নিজের ইমেজ বৃদ্ধি করতে সক্ষম হন এবং ড. ইউনূস যে দেশের স্বার্থবিরোধী কর্মকান্ডের সাথে যুক্ত আছে- এটি প্রমাণে সক্ষম হয়। তবে ড. ইউনূস নিজের জালে নিজেই ফেঁসে যান। গ্রামীণ টেলিকমের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ন্যায্য পাওনা না দেওয়ার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা হয়। এই মামলায় কেঁচো খুরতে সাপ বেড়িয়ে আসে। তারপর দেখা যায়, তিনি সরকারের আয়কর নীতি এবং রাজস্ব নীতিকে লঙ্ঘন করে নানা রকম ছলচাতুরির মাধ্যমে আয়কর ফাঁকি দিয়েছেন।

ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে ১১শ’ কোটি  টাকার অয়কর ফাঁকির মামলা এখন চূড়ান্ত রায়ের অপক্ষোয়। দেখা গেছে যে, ড. মুহাম্মদ ইউনূস যখন গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন, তখন গ্রামীণ ব্যাংকের টাকা দিয়ে তিন গ্রামীণ ব্যাংকের বোর্ড সভার অনুমোদন নিয়ে গ্রামীণ কল্যাণ গঠন করেন এবং সেখানে গ্রামীণ ব্যাংকের টাকা স্থানান্তর করা হয়। অথচ গ্রামীণ কল্যাণ একটি লিমিটেড কোম্পানি- যার কোনো মালিকানা সরকারের কাছে নাই। কিন্ত গ্রামীণ ব্যাংকের বোর্ড সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল গ্রামীণ ব্যাংকের দু’জন ৯ সদস্যের পরিচালনা পর্ষদে থাকবে। শুধু তাই নয়, চেয়ারম্যান হবেন গ্রামীণ ব্যাংক থেকে মনোনীত একজন ব্যক্তি। 

২০২১ সাল থেকে গ্রামীণ ব্যাংকের কোনো প্রতিনিধি গ্রামীণ কল্যাণে নাই, অথচ ইউনূস তার চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। শুধু তাই নয়, এই গ্রামীণ কল্যাণের টাকা দিয়েই গ্রামীণ টেলিকম গঠন করা হয় এবং গ্রামীণ টেলিকম গ্রামীণ ফোনের ৩৪ শতাংশ শেয়ারের মালিক। এখান থেকে যে হাজার হাজার কোটি টাকা পাওয়া যায়, সেই টাকাটি তিনি বিভিন্ন ট্রাস্ট এবং প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তসরূপ করেছেন, কর ফাঁকি দিয়েছেন- এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে। তার ব্যক্তিগত উপার্জিত অর্থ- কর ফাঁকি দেওয়ার জন্য তিনি ইউনূস ট্রাস্ট গঠন করেছেন- এমন অভিযোগও রয়েছে। 

সবকিছু মিলিয়ে তার বিরুদ্ধে যে ১১শ’ কোটি টাকা কর ফাঁকির মামলা রয়েছে, সে মামলাটির রায়ের ওপর নির্ভর করছে অনেক কিছুই। বাংলাদেশ-মার্কিন সম্পর্কের টানাপোড়েনের ক্ষেত্রে একটি বড় কারণ হলো ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আবার ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কারণেই সরকার একটি স্বাতন্ত্র এবং শক্ত অবস্থান গ্রহণ করতে পেরেছে। এরকম একটি পরিস্থিতিতে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পরিণতি কি হয়, তার ওপর বাংলাদেশের রাজনীতির আগামী অনেকখানি নির্ভর করছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন।   



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭