ইনসাইড বাংলাদেশ

বারবার বিভ্রান্ত হচ্ছেন ব্যারিস্টার এম আমির উল ইসলাম!


প্রকাশ: 25/05/2023


Thumbnail

সম্প্রতি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ও বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের সদস্য সচিব ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসের দেয়া একটি বক্তব্য প্রধান বিচারপতির নজরে এনেছেন সুপ্রীম কোর্টের জেষ্ঠ্য আইনজীবী ব্যারিস্টার এম আমির উল ইসলাম। ওই দিন প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন তিন বিচারপতির আপিল বিভাগের ডায়াসে দাঁড়িয়ে তিনি গণমাধ্যমে প্রকাশিত মেয়র তাপসের বক্তব্য নিয়ে করা একটি প্রতিবেদন আইনজীবীদের পড়ে শোনান। এ ঘটনার পর থেকেই রাজনৈতিক মহলে তাকে নিয়ে শুরু হয়েছে নানা আলোচনা। 

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ক্ষুদ্র লোভে পড়ে বারবার বড় বড় ভুলগুলো করছেন তিনি। তিনি বারবার বিভ্রান্ত হচ্ছেন। তিনি আওয়ামী লীগের লোক হয়ে, এক সময়ে বঙ্গবন্ধুর সাথে রাজনীতি করেও ক্ষুদ্র স্বার্থের জন্য আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে বিভ্রান্তি ছড়ানোর জন্যই এসব কাজ করছেন। তিনি বারবার নিজেও বিভ্রান্ত হয়েছেন এবং আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধেও বিভ্রান্ত ছড়িয়েছেন। এ ঘটনাটিও তার একটি নমুনা।  

সূত্র বলছে, আওয়ামীপন্থী আইনজীবী হিসেবেই পরিচিত ব্যারিস্টার এম আমীর উল ইসলাম। চলতি বছরের ১৫ ও ১৬ই মার্চ সুপ্রীম কোর্ট বারের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যে ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েছিল বিএনপি-জামায়াতপন্থী আইনজীবীরা- এ ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়। কিন্তু গত ২২ মে (সোমবার) তিনি এই বিএনপি-জামায়াতপন্থী শীর্ষ আইনজীবীদের জামিন আবেদনের পক্ষে উচ্চ আদালতে শুনানি করেছেন। অন্যতম এই সংবিধান প্রণেতা ব্যারিস্টার এম আমীর উল ইসলাম এই শুনানিতে বিএনপি-জামায়াতপন্থী আইনজীবীদের ২৫ জন নেতাকর্মীকে জামিন করান।

তাই রাজনৈতিক অঙ্গণে প্রশ্ন ওঠেছে, ব্যারিস্টার এম আমীর উল ইসলাম একজন প্রবীণ মানুষ। তিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা, তিনি বঙ্গবন্ধুর সাহয্যার্থে ছিলেন। এ ধরনের কাজ করা তার কি মানায়? ক্ষুদ্র কিছু লোভে পড়ে তিনি বারবার বড় বড় ভুলগুলো করেন, এটা তার মতো একজন বয়জেষ্ঠ্য ব্যক্তির জন্য করা উচিৎ?     

গত ২৪ মে (বুধবার) সুপ্রীম কোর্টে ‘একজন চিফ জাস্টিসকেও নামিয়ে দিয়েছিলাম’- ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের দেওয়া এমন বক্তব্যকে আপিল বিভাগের নজরে আনেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার এম আমীর উল ইসলাম। বুধবার (২৪ মে) এ বিষয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আপিল বিভাগের নজরে আনেন এই আইনজীবী। এ সময় গত রোববার (২১ মে) বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে দেয়া মেয়র তাপসের বক্তব্য নিয়ে করা পত্রিকার প্রতিবেদনটি বিচারপতিদের পড়ে শোনান তিনি। উত্তরে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেন, ‘আমরা একটু দেখি। এখন কোর্টের কাজ করি।’ 

পরে মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের বক্তব্যের বিষয়টি নিয়ে আর কোনো আলোচনা হয়নি। এ সময় জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি এ জে মোহাম্মদ আলী, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মাহবুব উদ্দিন খোকন, বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক আইনজীবী কায়সার কামাল, সমিতির সাবেক সম্পাদক এম বদরুদ্দোজা ও মো. রুহুল কুদ্দুসসহ বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন। অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ও রাষ্ট্রের আইন কর্মকর্তারা এবং সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি মোমতাজ উদ্দিন ফকিরও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।  

এদিকে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ২১ মে সুপ্রিম কোর্টে আইনজীবী সমিতির মিলনায়তনে আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ। সংগঠনটির সদস্য সচিব হিসেবে সেই অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন মেয়র তাপস। সেই অনুষ্ঠানে দেওয়া মেয়র তাপসের বক্তব্য জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত হয়। বক্তব্যে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি নগর ভবন থেকে শুনি যে, (সুপ্রিম কোর্টে) আমার নেতাকর্মীদের গায়ে হাত দেওয়া হয়। মনটা চায় (মেয়র পদ থেকে) ইস্তফা দিয়ে আবার (সুপ্রিম কোর্টে) ফিরে আসি। একজন চিফ জাস্টিসকেও নামিয়ে দিয়েছিলাম।’

আর এই বক্তব্যের প্রেক্ষিতে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন সর্বোচ্চ আদালতের নজরে আনেন আমীর-উল ইসলাম। আদালত থেকে বেরিয়ে এক ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, ‘এটি বড় রকমের অবক্ষয়। এজন্য আমরা প্রধান বিচারপতির কাছে গিয়েছিলাম। আদালত বলেছেন, তারা দেখবেন। আমরা প্রত্যাশা করছি পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ এটি দেখে সিদ্ধান্ত নেবেন। মেয়র তাপস সুশীল সমাজ সম্পর্কেও কটাক্ষ করে কথা বলেছেন। বারের সিনিয়র আইনজীবীদের নিয়েও কটাক্ষ করেছেন। বিচার বিভাগকে হেয় করেছেন। তার এ বক্তব্য আদালত অবমাননাকর।’

সূত্র জানায়, ব্যারিষ্টার আমীর উল ইসলাম ছিলেন বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রীসভার একজন সদস্য। কিন্তু বার বার তিনি ভুল পথে যেয়ে নিজের ক্যারিয়ারটা নষ্ট করেছেন। তিনি একটা রাজনৈতিক স্থিতিশীল চরিত্র হতে পারেন নাই। তিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা, অন্যতম সংবিধান প্রণেতা, সংবিধান প্রণয়ন কমিটির সদস্য ছিলেন তিনি। কিন্তু ৭৫’র পরে তার ভূমিকা ছিল রহস্যময়। তিনি বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের সময়ে বিদেশিদের কাছ থেকে চাঁদা তুলেছেন। সেই চাঁদার তহবিল তসরূপের অভিযোগও ওঠেছিল তার বিরুদ্ধে। 

সূত্রমতে, ১৯৯১ সালে যখন ড. কামাল হোসেনরা আওয়ামী লীগ থেকে চলে গেলেন। তখন তিনি আরেকবার বিভ্রান্ত হয়েছিলেন। তখন তিনি গণফোরামে যোগ দিয়েছিলেন। পরে আবার তিনি আওয়ামী লীগে ফিরে এসেছিলেন। আওয়ামী লীগে ফিরে আসার পর ২০০৭ সালে তিনি সংস্কারপন্থী হয়ে গেলেন। তিনি মাইনাস টু ফর্মুলার দিকে ধাবিত হয়েছিলেন। শেখ হাসিনার মামলাগুলোও তিনি ছেড়ে দিয়েছিলেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে যারা রাজনীতি করেছেন, তাদের মধ্যে যারা এখনও বেঁচে আছেন, তাদের মধ্যে ব্যারিষ্টার আমীর উল ইসলাম একজন। এখন তিনি সমস্ত রাজনৈতিক পরিচয় জলাঞ্জলী দিয়ে বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছেন। তার মতো একজন বয়জেষ্ঠ্য ব্যক্তির জন্য বারবার বিভ্রান্ত হয়ে, ক্ষুদ্র স্বার্থের লোভে এ ধরনের নীতি বিরোধী কাজ করা সত্যিই খুব দুঃখজনক। 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭