ইনসাইড পলিটিক্স

ভুল কৌশলে বিপর্যস্ত বিএনপি


প্রকাশ: 26/05/2023


Thumbnail

নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন করছে বিএনপি। বিএনপি বলেছে, তাদের দাবি একটাই বর্তমান সরকারের পতন ছাড়া তারা ঘরে ফিরে যাবে না। বিএনপির কোনো কোনো নেতা এটাও বলেছেন যে ডু অর ডাই। কিন্তু রাজনীতির এক গোলকধাঁধার মধ্যে পড়ে গেছে বিএনপি এবং তাদের ভুল কৌশলের কারণে একদিকে যেমন তাদের সংগঠন দুর্বল হয়ে যাচ্ছে অন্যদিকে নির্বাচন ছাড়া তাদের সামনে আর কোন পথ খোলা থাকছে না। বিএনপির নেতারাও এখনও বলছেন যে তারা ফাঁদে পড়েছেন এবং এই ফাঁদ থেকে বেরোনোর পথ নেই। গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন বিএনপির জন্য বুমেরাং হয়ে গেছে। বিএনপি মনে করেছিল যে তারা নির্বাচন বর্জন করলে এই নির্বাচন হয়ে পড়বে একটা প্রহসন। জনগণের অংশগ্রহণ থাকবে না এবং অবাধ-সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ নির্বাচন হিসেবে এটি স্বীকৃতি পাবে না। 

বিএনপির কোনো কোনো এটাও মনে করেছিলেন যে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত প্রশাসন এবং সরকার প্রভাব বিস্তার করবে এবং দলীয় প্রার্থীকে জয়ী করবে। তখন আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত নেতাই নির্বাচনের কারচুপির অভিযোগ আনবে। ফলে তাদের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি বিশ্বাসযোগ্যতা পাবে। কিন্তু গাজীপুর নির্বাচনের ফলাফল হয়েছে উল্টো। এই নির্বাচনে সরকার কোনো হস্তক্ষেপ করেনি, প্রশাসন নিরপেক্ষ ছিল। নির্বাচন কমিশন শক্ত হাতে নির্বাচন পরিচালনা করেছে। ফলে একটি অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মডেল হয়েছে গাজীপুর। লোকজন উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দিয়েছে। প্রায় ৫০ শতাংশ ভোট পড়েছে। এই নির্বাচনের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে বিএনপি ছাড়াও অবাধ-সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ নির্বাচন করা সম্ভব এবং সেই নির্বাচনে জনগণের মতামতের প্রতিফলনও ঘটতে পারে। আর তাই বিএনপির জন্য চাপ বেড়ে গেল।

গাজীপুরের নির্বাচনে যদি বিএনপির প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করত এবং আজমত উল্লা যদি সেখানে প্রার্থী হতেন তাহলে শেষ পর্যন্ত হয়তো  বিএনপি প্রার্থীর একটি নাটকীয় উত্থান ঘটতে পারত। এটি বিএনপির রাজনীতির জন্য লাভজনক হত, নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত হত, দল সংঘটিত হত। কিন্তু বিএনপির ভুল কৌশলের কারণে গাজীপুরের নিয়ন্ত্রণ আওয়ামী লীগের হাতে থাকল। বিএনপি এখানে এখন সংকুচিত হতে হতে প্রায় নি:শেষ হয়ে গেল। গাজীপুর না, পুরো দেশের অবস্থাও একই রকম হয়েছে। 

বিএনপির একজন নেতা স্বীকার করেছেন যে ক্ষমতায় যাওয়ার একমাত্র রাস্তা নির্বাচন। সংগঠন গড়ে তোলার একমাত্র পথ নির্বাচন। কাজেই আমরা নির্বাচনকে দূরে রেখে সংগঠন কিভাবে গুছাতে পারি সেটি এখন প্রশ্ন। বিএনপি তাদের দ্বিতীয় ভুল কৌশল করেছে বিদেশ নির্ভরতার কারণে। তারা মনে করেছিল যে পশ্চিমা দেশগুলো বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদেরকে নির্বাচনে জিতিয়ে দেবে। আর এই কারণেই তারা বারবার মার্কিন দূতাবাসে ধরনা দিয়েছে। কিন্তু সর্বশেষ মার্কিন ভিসা নীতি এবং নির্বাচন নিয়ে মার্কিন অবস্থান সুস্পষ্ট করেছে যে তারা নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিকে সমর্থন করে না। এমনকি কোন দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলো না করলো সেটি নিয়েও তাদের মাথাব্যাথা নাই বলে তারা সাফ জানিয়ে দিয়েছে। তারা দেখতে চায় একটি উৎসবমুখর অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। 

গাজীপুরের নির্বাচন সরকারের জন্য একটি সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে। বিএনপিকে বাদ দিয়েও বিভিন্ন জনপ্রিয় ব্যক্তি, দলকে নিয়ে একটি উৎসবমুখর, অবাধ-সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ নির্বাচন করা যায়। বিএনপি যদি নির্বাচনে না আসে তাহলে সরকার সে পথে হাঁটবে এবং সে নির্বাচন অগ্রহণযোগ্য হবে বলে রাজনৈতিক মহল মনে করছেন না। আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা নীতিতে সুষ্ঠু নির্বাচনে যদি কেউ বাধা দেয় তাহলে তার বিরুদ্ধে মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে। সে ক্ষেত্রে নির্বাচনের সময় নির্বাচন বয়কট করা, ভাঙচুর অগ্নিসংযোগ করা, জনগণকে ভোটদানে বিরত রাখা বা সুষ্ঠু নির্বাচনের পক্ষে যে কোন বাধাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্র বিনাশী তৎপরতা হিসেবে বিবেচনা করবে এবং সেই তৎপরতার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা নামবে ঐ সমস্ত রাজনৈতিক দলের নেতাদের ওপর। আর এ কারণেই এখন বিএনপিকে আটসাট আন্দোলন করতে হবে, জ্বালাও-পোড়াও-সহিংসতা পথে বিএনপি যেতে পারবেনা। হাতে সময় আছে ছয় মাস। এই সময়ের মধ্যে বিএনপি কি করবে এটা এখন বিএনপির প্রশ্ন। বিএনপির পথ ক্রমশ সংকুচিত হয়ে আসছে। তারা আন্দোলন করতে পারবে না, তারা নির্বাচনে যাবে না তাহলে বিএনপি কিভাবে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায় করবে এই প্রশ্ন উঠেছে এখন বিএনপির মধ্যে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭