ইনসাইড বাংলাদেশ

বাংলাদেশ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র কি একলা হয়ে যাচ্ছে?


প্রকাশ: 28/05/2023


Thumbnail

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন নিয়ে যারপরনাই ব্যস্ত। মার্কিন দূতাবাসে বিভিন্ন সময়ে আওয়ামী লীগ, বিএনপি এবং জাতীয় পার্টির নেতাদেরকে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে। আগামী নির্বাচন নিয়ে নানা রকম কথাবার্তা বলা হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করেছে। এই ভিসা নীতিতে বলা হয়েছে, যারা বাংলাদেশের নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করবে তাদেরকেেএবং তাদের পরিবারকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিসা দেবে না।

এই ভিসা নীতি নিয়ে আওয়ামী লীগ-বিএনপির পাল্টাপাল্টি অবস্থান লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ বলছে, এর ফলে বিএনপির জ্বালাও-পোড়াও, ধ্বংসাত্মক রাজনীতি বন্ধ হবে। অন্যদিকে বিএনপি বলছে যে এই ভিসা নীতি বাংলাদেশের জন্য লজ্জার। দুই পক্ষই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এ ঘোষণাকে নিজেদের বিজয় হিসেবে চিহ্নিত করার চেষ্টা করছে। এটি নিয়ে চলছে এক ধরনের রাজনৈতিক কৌশলের খেলা। তবে এটা সুস্পষ্ট মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনের ব্যাপারে মাত্রাতিরিক্ত আগ্রহী এবং এই নির্বাচনে রেফারির ভূমিকা নিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহের কোনো কমতি নাই। 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই ধরনের একটি অবস্থানে থাকলেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নেই তার আন্তর্জাতিক মিত্ররা। ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ইতিমধ্যে জানিয়ে দিয়েছে যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতির পথে হাঁটবে না তারা। বরং আগামী নির্বাচনের ব্যাপারে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তারা আগামী নির্বাচনের আগে একটি প্রার্ক পর্যবেক্ষক দল পাঠাবে। নির্বাচন কতটুকু নিরপেক্ষ হচ্ছে এবং কতটুকু লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড হয়েছে সেগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবে। তার ভিত্তিতে তারা নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবে। অন্যদিকে যুক্তরাজ্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পথে হাঁটছে না। বরং যুক্তরাজ্য বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থা কিভাবে হয় সেটি পর্যবেক্ষণেই বেশি আগ্রহী। বাংলাদেশকে আগাম কোন উপদেশ বা সতর্কবার্তা দিতে আগ্রহী নয়। 

চীন এখন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক পার্টনার। এখন এই মুহূর্তে চীনা ভাইস মিনিস্টার বাংলাদেশ সফর করছেন। আজকে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। বাংলাদেশের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্ক যখন টানাপোড়েন সেই সময়ে আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধিদল চীন সফর করে এসেছেন। এছাড়াও চীনের মন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীকে চীন সফরের আমন্ত্রণও জানিয়েছেন। অন্যদিকে বাংলাদেশের প্রধান প্রতিবেশী ভারতও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পথে হাঁটছে না। বরং বাংলাদেশের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র পৃথিবীর সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক দেশ ভারত মনে করছে বাংলাদেশের নির্বাচন তার অভ্যন্তীণ বিষয়। ভারত অবশ্যই প্রত্যাশা করে বাংলাদেশের নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ হোক। এই নির্বাচনে জনমতের প্রতিফলন ঘটুক। তবে নির্বাচন কোন প্রক্রিয়ায় ঘটবে এবং কারা অংশগ্রহণ করবে না করবে- এটি একান্তই বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিষয়।

কাজেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে বাংলাদেশের ব্যাপারে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছে বাংলাদেশের নির্বাচন এখন থেকেই নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে এবং নির্বাচন প্রক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে, ভয়-ভীতি হুমকি দিচ্ছে এবং নির্বাচন যদি অবাধ-সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ না হয় তাহলে কি কি করা হবে সে সম্পর্কেও আগাম হুঁশিয়ারি দিচ্ছে তখন তার আন্তর্জাতিক মিত্ররা খানিকটা দূরে দাঁড়িয়ে পুরো পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। এর ফলে বাংলাদেশ নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একলা হয়ে গেছে। এরকম একটি পরিস্থিতিতে একা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কি পারবে বাংলাদেশের নির্বাচনের ব্যাপারে নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব স্থাপন করতে। সবগুলো রাজনৈতিক দলকে অনুগত করতে এবং তারা যেভাবে চায় সেভাবে বাংলাদেশের নির্বাচন করাতে এটি এখন রাজনৈতিক অঙ্গনের সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭