ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

মার্কিন নিষেধাজ্ঞার ভাইরাসে আক্রান্ত হলেও লড়ছে কিউবা


প্রকাশ: 29/05/2023


Thumbnail

যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক অবরোধের ৬০ বছর গতকাল পূর্ণ করেছে কমিউনিস্ট–শাসিত কিউবা। এমন প্রেক্ষাপটে দেশটি নিষেধাজ্ঞাবিরোধী প্রচারণা চালাচ্ছে। ছয় দশক ধরে চলা যুক্তরাষ্ট্রের এই নিষেধাজ্ঞা লাতিন আমেরিকার দেশ কিউবার অর্থনৈতিক অবস্থাকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে। আর এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হওয়ার কোনো লক্ষণ এখনো দেখা যাচ্ছে না।

১৯৬২ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি কিউবার সঙ্গে সব ধরনের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের ওপর নিষেধাজ্ঞার আদেশ দেন। ঘোষণার চার দিন পর নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হয়। কেনেডির নির্বাহী আদেশে বলা হয়েছিল, এই নিষেধাজ্ঞার উদ্দেশ্য হলো কমিউনিস্ট শক্তির সঙ্গে দ্বীপরাষ্ট্রটির সম্পর্কের ফলে সৃষ্ট হুমকি হ্রাস করা। নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও হাভানা তার অবস্থান বদল করেনি, ফলে মার্কিন নিষেধাজ্ঞাও প্রত্যাহার হয়নি।

কিউবার কর্তৃপক্ষের হিসাব অনুযায়ী, মার্কিন নিষেধাজ্ঞার ফলে দেশটির অর্থনীতির যে ক্ষতি এখন পর্যন্ত হয়েছে, তা প্রায় ১৫০ বিলিয়ন ডলারের সমান। ৩০ বছরের মধ্যে কিউবা এখন সবচেয়ে বাজে অর্থনৈতিক সংকটের মুখোমুখি। দেশটির মুদ্রাস্ফীতি ৭০ শতাংশ। কিউবার আয়ের অন্যতম প্রধান উৎস পর্যটন। এই খাতের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে করোনা মহামারি। কিউবা খাদ্য ও ওষুধের তীব্র সংকটে ভুগছে। দেশটিতে অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের জন্য মানুষের দীর্ঘ সারি এখন সাধারণ দৃশ্য হয়ে উঠেছে।

মধ্য আমেরিকার এই দেশ থেকে আমেরিকার দূরত্ব একটি খালের বলা যায়। বর্তমান বাস্তবতায় উন্নত-উন্নয়নশীল সব দেশেই অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকট তৈরি হয়েছে। সমাজতান্ত্রিক ও ফিদেলের কিউবা তা থেকে মুক্ত এমনটা ভাবার কোনো করার কারণ নেই। ছয় দশক ধরে মার্কিন ও তার মিত্রদের অবরোধের মধ্যে থাকা কিউবার সংকট আরও বেশি থাকার কথা। কিন্তু সে সংকটের মধ্যেও কিউবা শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, শিল্প, মানবিক ও সামাজিক উন্নয়নে অভূতপূর্ব অগ্রগতি ঘটিয়েছে। বিশ্বের দুইশ দেশের মধ্যে মানবিক উন্নয়নে তাদের অবস্থান ৭০তম।  

কিউবার সীমাবদ্ধতা দীর্ঘ একদলীয় শাসন, বাক ও ব্যক্তিস্বাধীনতার সীমাবদ্ধতা। অতঃপর দীর্ঘ অর্থনৈতিক-বাণিজ্যিক অবরোধের কারণে এক ধরনের সংকটের মধ্যে দিয়ে তো তারা যাচ্ছেই। অনেকেই কিউবায় নাগরিক ও শ্রমিক বিক্ষোভকে পুরোপুরি বা শতভাগ মার্কিন ষড়যন্ত্র ও মদদে হচ্ছে বলে মনে করছেন। যেমন- জো বাইডেন বলছেন, কিউবার জনগণ একনায়কতন্ত্রের হাত থেকে মুক্তি চায়। সেদেশের জনগণের পাশে যুক্তরাষ্ট্র আছে। কাজেই তাদের সে অভিযোগের অনেকাংশে সত্যতা আছে, কিন্তু তার মানে এই নয় যে, সেখানকার সাধারণ নাগরিকদের সরকারের প্রতি কোনো ক্ষোভ-বিক্ষোভ, দাবি-দাওয়া নেই, বিষয়টা এমন নয়। সেটা জানার সহজ উপায়ও নেই। কারণ সেখানে প্রতিপক্ষের বাদ-প্রতিবাদের অধিকার-প্রচার সেভাবে স্বীকৃত নয়। 

কিউবায় সরকারবিরোধী বিক্ষোভ ও দাবি-দাওয়া নিয়েও বিভ্রান্তিকর সংবাদ প্রচার করা হচ্ছে। নাগরিক বিক্ষোভের যে বিষয়গুলো প্রচার করা হচ্ছে, তা হচ্ছে করোনা পরিস্থিতি, খাদ্যদ্রব্যের সংকট ও মূল্যবৃদ্ধি প্রধানত। বিক্ষোভকারীরা ইন্টারনেট সুবিধা থাকায় সামাজিকমাধ্যমে নিজেদের যোগাযোগ ও মতামত প্রকাশ করতে পারছেন, যা পূর্বে ছিল না। আর এই সুযোগ মার্কিন বিভিন্ন সংস্থা-প্রতিষ্ঠান ও কিছু বিভ্রান্ত কিউবান নিচ্ছে এবং বিভ্রান্তি তৈরি করছে। তারমধ্যে ক্রমাগত ঘি ঢালছে ও লাকড়ি ঠেলছে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী প্রশাসন।

কিউবার অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক না গলাতে রাশিয়া, মেক্সিকো, ভেনিজুয়েলা, বলিভিয়াসহ বিভিন্ন দেশ যুক্তরাষ্ট্রকে হুঁশিয়ার করেছে এবং সেখানে তাদের বিরুদ্ধে সহিংসতা উস্কে দেয়ারও অভিযোগ এনেছে। মার্কিন ও পশ্চিমা শাসকদের যদি প্রকৃতই কিউবার জনগণের প্রতি দরদ থাকে, তাহলে কিউবার বিরুদ্ধে আরোপিত দীর্ঘ অবরোধ প্রত্যাহার করুক।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭