ইনসাইড আর্টিকেল

জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবসের তাৎপর্য


প্রকাশ: 29/05/2023


Thumbnail

২৯ মে আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবসটি এদেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ বাংলাদেশ বর্তমানে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে শীর্ষ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ। সশস্ত্রবাহিনী থেকে এ অবধি ১,৮৩,৩৭৮ জন শান্তিরক্ষী নিয়োজিত হয়েছেন।শান্তি রক্ষায় কাজ করার সময় নিহত হয়েছেন ১৩৯ জন,আহত হয়েছেন ২৪০ জন।২০২২ সালে এসে আমরা সশস্ত্রবাহিনী থেকে ৬৩২৪ জন সদস্যকে শান্তি রক্ষার কাজে নিয়োজিত দেখতে পাচ্ছি। এ ভেতর নারী সদস্য রয়েছেন ৩৭১জন। বর্তমানে ৯টি মিশনে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষী সদস্য কাজ করছেন।উল্লেখ্য, সশস্ত্রবাহিনী থেকে ৪৩টি দেশে এ পর্যন্ত শান্তিরক্ষী কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেছেন।এসব তথ্যই বলে দিচ্ছে আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবসটি কতটা গুরুত্ববহ। 

২. শান্তিরক্ষীদের সীমাহীন আত্মত্যাগকে স্মরণ করে ২০০৩ সাল থেকে দিবসটি বিশ্বব্যাপী উদযাপিত হচ্ছে। বর্তমানে রাশিয়ার আক্রমণের শিকার ইউক্রেনের শান্তিরক্ষী সংস্থা এবং ইউক্রেন সরকারের যৌথ প্রস্তাবনায় ১১ ডিসেম্বর, ২০০২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের গৃহীত ৫৭/১২৯ প্রস্তাব অনুযায়ী এ দিবসের রূপরেখা প্রণয়ন করা হয়। ১৯৪৮ সালে সংঘটিত আরব-ইসরাইল যুদ্ধকালীন যুদ্ধবিরতী পর্যবেক্ষণে গঠিত জাতিসংঘ ট্রুস সুপারভিশন অর্গ্যানাইজেশন (আন্টসো) দিনকে উপজীব্য করে ২৯ মে তারিখটি স্থির করা হয়েছে। উল্লেখ্য, জাতিসংঘ ট্রুপস সুপারভিশন অর্গ্যানাইজেশন (আন্টসো)-ই হচ্ছে প্রথম জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনী। এই হিসেবে(১৯৪৮ সাল থেকে) জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনী ৭৫ বছর পূর্ণ করল। এদিনে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীর কার্যক্রমে অংশগ্রহণকারী সকল পুরুষ-নারীকে শান্তি রক্ষার লক্ষ্যে সর্বোৎকৃষ্ট পেশাদারী মনোভাব বজায়, কর্তব্যপরায়ণতা, নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তাঁদের আত্মত্যাগের ঘটনাকে গভীর কৃতজ্ঞতা ও যথোচিত সম্মানপূর্বক স্মরণ করা হয়। ২০০৯ সালে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষায় নারীদের অবদান ও ভূমিকার উপর সবিশেষ গুরুত্ব আরোপ করে। শান্তিরক্ষায় নারীর ভূমিকা ও লিঙ্গ-বৈষম্য দূরীকরণের লক্ষ্যেই ওই পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়।

আগেই উল্লেখ করেছি, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনী পূর্ণ করেছে ৭৫ বছর। পক্ষান্তরে জাতিসংঘের অধীনে চলতি বছর বাংলাদেশ শান্তিরক্ষী বাহিনী ৩৫ বছর পূর্ণ করল(১৯৮৮-২০২৩)। তবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৩ সালে যুদ্ধরত সিরিয়াতে একটি মেডিকেল টিম পাঠিয়ে শান্তি রক্ষায় মুসলিম দেশগুলোর সাথে তাঁর সরকারের বন্ধুত্ব স্থাপনের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন।১৯৭৪ সালে জাতিসংঘ বাংলাদেশের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমকে স্বীকৃতি দেয়। ইতোমধ্যে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা প্রশংসিত হয়েছেন দেশ-বিদেশে। যেমন, নিউইয়র্কে অবস্থিত জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা কোভিড-১৯(২০২০-২০২১)মহামারির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে শান্তিরক্ষীরা বিশ্বের সংঘাতপ্রবণ অঞ্চলে শান্তি, স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা বজায় রাখার ক্ষেত্রে অব্যাহত ও নিবেদিতভাবে যে প্রচেষ্টা চালিয়েছেন তার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন।শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে নারীর অংশগ্রহণ আরও  বৃদ্ধির ক্ষেত্রে শেখ হাসিনা সরকারের সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপসমূহের কথা তুলে ধরে তিনি বলেছিলেন, শান্তিরক্ষায় নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধির বিষয়টি বাংলাদেশের ‘নারী, শান্তি ও সুরক্ষা’ বিষয়ক জাতীয় কর্মপরিকল্পনার মূল কৌশলের একটি।এর আগে শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের অংশগ্রহণের ৩০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছিলেন, মানবাধিকার সুরক্ষার পাশাপাশি গোলযোগপূর্ণ অঞ্চলে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের সেনাদের ভূমিকা আমাকে মুগ্ধ করেছে। বাংলাদেশের মহিলা পুলিশ দল সোচ্চার রয়েছেন সামাজিক-সম্প্রীতি সুসংহত করতে। আমি কোনো মিশনে গেলেই উদাহরণ হিসেবে বাংলাদেশের সেনাদের কথা বলি।’ জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রশংসা অর্জন আমাদের জন্য সত্যিকার অর্থেই গৌরবের। এ সম্পর্কে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সেসময় বলেছিলেন, শান্তিরক্ষা মিশনে সশস্ত্রবাহিনীর অংশগ্রহণের ব্যাপক সুযোগ করে দেয়া আওয়ামী লীগ সরকারের অঙ্গীকার। তাঁর মতে, ‘বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আন্তর্জাতিক শান্তি আর সমৃদ্ধি ক্ষেত্রে অঙ্গীকারবদ্ধ ছিলেন। সে দীক্ষায় দীক্ষিত হয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বে সবাই বিশ্বশান্তি বিনির্মাণে বদ্ধপরিকর। সে আলোকেই বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা নিরলসভাবে কাজ করছেন।’ প্রকৃতপক্ষে নিজেদের জীবন বিপন্ন করে বিভিন্ন দেশের জাতিগত সংঘাত মোকাবেলা এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত বিচিত্র দেশের রাস্তাঘাট, অবকাঠামো নির্মাণ ও চিকিৎসা সেবায় আমাদের শান্তিরক্ষীরা অনুকরণীয় দায়িত্ব পালন করায় বিশ্বব্যাপী প্রসংশিত হচ্ছেন।

অর্থাৎ বাংলাদেশের সশস্ত্রবাহিনীর বড় অংশ এবং পুলিশ ও অন্যান্য সদস্যরা জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা রেখেছেন। ‘দেশের প্রতিরক্ষার জন্য প্রশিক্ষণ আর জনগণের জন্য ভালোবাসা’- এই দুটি বিষয়কে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে আমাদের সশস্ত্রবাহিনীর দেশপ্রেম। এখন বিশ্বের কাছে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী একটি পরিচিত ও আস্থার প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানটি পৃথিবীর যুদ্ধবিধ্বস্ত ও দুর্যোগময় পরিবেশে শান্তি স্থাপন করে অপরিচিত দেশের অচেনা মানুষের ভালোবাসা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। শান্তি রক্ষা মিশনে অংশগ্রহণকারী বেশ কিছু সেনা কর্মকর্তা তাঁদের অভিজ্ঞতা নিয়ে গ্রন্থ রচনা করেছেন। যেমন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল বায়েজিদ সরোয়ার লিখেছেন ‘কম্বোডিয়া’, ‘কুর্দিস্তানের দিনগুলি’ লিখেছেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামস। আরো অনেকের গ্রন্থ রয়েছে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ নিয়ে। ফলে শান্তি মিশনের অভিজ্ঞতা নিয়ে এদেশে ‘সামরিক সাহিত্যে’র একটি ভিন্ন ধারা সৃষ্টি হয়েছে।   

জাতিসংঘ সনদের ষষ্ঠ অধ্যায়ে আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষা এবং সপ্তম অধ্যায়ে শান্তি প্রয়োগের বিধান রয়েছে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রম সংঘর্ষে লিপ্ত দুপক্ষের সম্মতি এবং মতৈক্যের উপর ভিত্তি করে শুরু হয়। শান্তিরক্ষা বাহিনীকে সংশ্লিষ্ট পক্ষসমূহ কর্তৃক অনুমোদিত একটি শান্তি চুক্তি বা শান্তি ব্যবস্থা বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে মোতায়েন করা হয়। এ পর্যন্ত জাতিসংঘের ৬৮টি মিশনের মধ্যে ৪৩টিতে দেড় লাখের বেশি বাংলাদেশী শান্তিরক্ষী সদস্য



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭