ইনসাইড টক

‘গাজীপুরে ব্যর্থতার কারণ মূল্যায়ন করা হবে’


প্রকাশ: 31/05/2023


Thumbnail

‘বিষয়টায় কিছু অ্যাকশন নিতে হবে। আর ওই জায়গায় নিম্ন পর্যায়ে যে কমিটিগুলো আছে, যেখানে সম্মেলন করার সুযোগ আছে, সেগুলো পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয় নাই এবং এগুলো আহবায়ক কমিটি সবগুলোই। যেসব কমিটির লোকেরা বিদ্রোহ করেছে- এরা সবাই আহবায়ক কমিটির লোক।  অতএব দ্রুত সম্মেলন করে, যেগুলো বিশ্বাসঘাতক- এগুলোকে বাদ দিয়ে নতুন করে ঢেলে সাজালেই হবে। খুব সহজ কাজ। সম্মেলনের তারিখ দিয়ে এগুলোকে বাদ দিয়ে দিলেই হবে। কোনো সমস্যা নেই।’- বলছিলেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম এমপি।      

‘গাজীপুর নির্বাচন আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলটাকে প্রকাশ্য রূপ দিয়েছে বলে অনেকে মনে করছেন। এখন সামনে নির্বাচন, নির্বাচনের আগে একজন সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে আপনি এই অভ্যন্তরীণ কোন্দলটাকে কি রকম চ্যালেঞ্জ মনে করেন এবং কোন্দলটা মোকাবেলায় কি করা উচিৎ বলে আপনি মনে করেন, আপনার পরামর্শ কি?’ -এমন প্রশ্নের উত্তরে কথাগুলো বলছিলেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম এমপি।

সম্প্রতি শেষ হয়েছে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আজমত উল্লা খান ১৬ হাজারেরও বেশি ভোটে পরাজিত হয়েছেন। আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ দলীয় কোন্দলের কারণেই দলীয় প্রার্থীর নাটকীয় পরাজয় হয়েছে বলে মনে করছেন অনেকেই। সেই সঙ্গে এই পরাজয়ের মধ্য দিয়ে গাজীপুর আওয়ামী লীগের দলীয় কোন্দল সুস্পষ্ট হয়ে ওঠেছে। এসব বিষয় নিয়েই কথা হয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম -এর সঙ্গে। তিনি বাংলা ইনসাইডারের সাথে একান্ত আলাপচারিতায় জানিয়েছেন এই নির্বাচনে পরাজয়ে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কথা এবং এই কোন্দল নিরসনে কি করণীয়-সেসব কথা। পাঠকদের জন্য আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম -এর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বাংলা ইনসাইডার -এর নিজস্ব প্রতিনিধি।

মির্জা আজম বলেন, ‘এই নির্বাচনে পরাজয়ের জন্য মহানগর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে তারা নিজেরাও, এমপি, মন্ত্রী যারা আছে, তাদের সাথে নিয়ে একটা পর্যালোচনা বৈঠক সিরিজ, আসছে ১, ২, ৩ তারিখে করবে তারা।’ 

‘এটাতো হলো গাজীপুর। কিন্তু সারা বাংলাদেশেই এই রকম আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কথা শোনা যাচ্ছে। নির্বাচনের আগে এই কোন্দলতো আওয়ামী লীগের জন্য বড় ধরনের একটা মাথাব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।’- এমন প্রশ্নে মির্জা আজম বলেন, ‘আওয়ামী লীগ একটা অনেক বড় দল। এ জায়গায় আসলে কোন্দলটা ঠিক ওইভাবে নাই। গাজীপুরের ব্যাপারটা একটু আলাদা, ভিন্ন। সে জায়গায় আমাদের একজন লোককে বহিষ্কার করা হয়েছে। সে মেয়র ছিল। সবকিছু মিলিয়েই এটা হয়েছে। কিন্তু অন্য জায়গায় যে বিষয়গুলো রয়েছে, সেটা ছোটখাটো বিষয়। ওই জায়গায় বড় ধরনের কোনো কোন্দল নেই। নোমিনেশন যখন ঘোষণা হয়ে যাবে। তখন দেখা যাবে, সবাই একসাথে কাজ করছে, কোনো বিষয় হবে না, ইনশাল্লাহ।’

‘একটা বিষয়- বিএনপি এখন রাজপথে আন্দোলন করছে এবং বিএনপি এক দফা আন্দোলন ঘোষণা করবে বলে তারা জানিয়েছে- এ রকম অবস্থায় আপনাদের প্রস্তুতি কি?’ -এই প্রশ্নে মির্জা আজম বলেন, ‘বিএনপি যেটা নিয়ে আন্দোলন করতেছিল, তাদের আন্দোলনতো এখন অটো ফল্ট করবে। কারণ হচ্ছে, তাদের যে প্রভু, সে প্রভু তাদের যা বলছে, সে অনুযায়ী তাদের আবার কিসের জন্য আন্দোলন। ওদের প্রভুরা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ব্যাপারে কোনো কিছু উল্লেখ করে নাই। তারা বলেছে, যারা নির্বাচনে বাধাদান করবে, তাদেরকেও তারা ভিসা দিবে না। আমরাতো- আমেরিকা যা চাচ্ছে, ওই ধাঁচেই আওয়ামী লীগ এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আমেরিকার পক্ষ থেকে যে ভিসা নীতি ঘোষণা করেছে, সে ভিসা নীতিতে বিএনপি যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, তার জন্য তারা বাধার সৃষ্টি করছে। বিএনপি এখন এক দফা বলেন, সাত দফা বলেন- কিসের জন্য আন্দোলন করবে? তত্ত্বাবধায়ক সরকার? আমেরিকা যে ভিসা নীতি ঘোষণা করেছে, তার মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার নেইতো। তাহলে তারা কি নিয়ে আন্দোলন করবে। অতএব, তারা এখন নির্বাচনে আসবে নাকে ক্ষত দিয়ে। কাজেই এই নির্বাচনে আসার জন্য প্রস্তুতি নেওয়াটা তাদের জন্য এখন বুদ্ধিমানের কাজ।’ 

‘একজন রাজনৈতিক নেতা হিসেবে আপনি কি মনে করেন, দলীয় সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ হবে?’- এমন প্রশ্নে আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, ‘দলীয় সরকারের অধীনে গাজীপুরের নির্বাচনে প্রমাণ হয়েছে। দলীয় সরকারের অধীনে যে, একটি অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে পারে- গাজীপুর নির্বাচনে তা প্রমাণ হয়েছে।’ 

‘বিএনপি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে এবং নির্বাচন যদি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ হয়- তাহলে আওয়ামী লীগের একজন নেতা হিসেবে আপনারা জয়ের ব্যাপারে কতটুকু আশাবাদী?’- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘বিএনপি ২০০৮ সালে, তখনতো কোনো বাধা দেওয়া হয় নাই। ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে, তারা ২৯ আসন পেয়েছে। এবার নির্বাচন করছে, সুন্দর। ২৯ দু’গুণে ৫৮ আসন পেতে পারে। এর বেশি আমরা আশা করি না।’                  

‘একটি কথা আওয়ামী লীগ থেকে বলা হচ্ছে যে, আওয়ামী লীগের প্রচুর প্রার্থী পরিবর্তন করতে হবে। কারণ যারা গত দুইটা নির্বাচনে এমপি হয়েছেন, তারা অনেকেই এলাকায় যায় না।’- এমন প্রশ্নে মির্জা আজম বলেন, ‘এটা নেত্রী প্রকাশ্যে মিটিংয়ের মধ্যে বলেছেন যে, এবারের মনোনয়নের ব্যাপারে তিনি অত্যন্ত সজাগ থাকবেন এবং যারা এলাকায় জনপ্রিয়- তাদেরকে মনোনয়ন দেয়া হবে। যারা এলাকায় বিতর্কিত এবং দীর্ঘ সময় দায়িত্ব পালন করে আত্মীয়-স্বজন এবং হাইব্রিডদের নিয়ে পুণর্বাসন করেছে, দলের মধ্যে আবার দল অ্যান্টি দল বানিয়েছে, তাদেরকে  নির্বাচনে মনোনয়ন দেয়া হবে না, নেত্রী বলে দিয়েছেন।’

‘গাজীপুর নির্বাচন নিয়ে কি আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয়ভাবে কোনো মূল্যায়ন করবে বা এটার ব্যাপারে কোনো আলাপ-আলোচনা হবে?’- প্রশ্নে মির্জা আজম বলেন, ‘কেন্দ্রীয়ভাবে-তো মূল্যায়ন হবেই। আওয়ামী লীগের ওয়ার্কিং কমিটির সাথে কথাবার্তায়- তখনতো যার যার অভিমত ব্যক্ত করবেই। যদি সুযোগ থাকে আমরাও আমাদের অভিমত ব্যক্ত করবো। তবে ইতিমধ্যেই জেলার পক্ষ থেকে, মহানগরের পক্ষ থেকে এই নির্বাচনে পরাজয়ের বিভিন্ন মূল্যায়নটা আগামীকাল থেকে টানা তিন দিন- বিভিন্ন থানায় থানায় মিটিং করে, আমাদের এমপি, মন্ত্রীদের উপস্থিতিতে আলোচনা করে, পর্যালোচনা করে মূল্যায়নটা করা হবে যে- কি কি কারণে, কি ব্যর্থতার কারণে আমরা ফেল করেছি।’



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭