ইনসাইড পলিটিক্স

আন্দোলনে জয়ী না হলে কি হবে? বিএনপি’র তৃণমূলের প্রশ্ন


প্রকাশ: 01/06/2023


Thumbnail

বিএনপি এখন নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্বাবধায়ক সরকারের দাবীতে আন্দোলন করছে। বিএনপি’র নেতারা বলছেন শুধু দশ দফা নয়, এক দফা দাবীতে তারা আন্দোলন শুরু করতে চান। আর এটি শুরু করার জন্য তারা এখনই উপযুক্ত সময় মনে করছেন। এ নিয়ে বিএনপি’র মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। কোন কোন বিএনপি নেতা মনে করছেন যে আস্তে আস্তে আন্দোলনকে বেগবান করতে হবে। সেপ্টেম্বরকে টার্গেট করে তারা চুড়ান্ত আন্দোলন করতে চাইছেন। কিন্তু বিএনপি’র একটি অংশ মনে করছে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করা হবে বোকামি, এখনই চূড়ান্ত আন্দোলন শুরু করা দরকার।

বিএনপি যে সমস্ত শরিক রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলন করার জন্য নিয়মিত বৈঠক করছে, তারাও এখন দ্রুত আন্দোলন শুরু করার তাগাদা দিচ্ছে। বিশেষ করে নাগরিক মঞ্চসহ কিছু ছোট ছোট রাজনৈতিক দলও জুনেই এক দফা আন্দোলন শুরু করার কথা বলছে। এ নিয়ে বিএনপি জেলা পর্যায়ে তৃণমূল নেতাদের সাথে বৈঠক করেছে। এ বৈঠকে তৃণমূল নেতারা কিছু মৌলিক প্রশ্ন তুলেছে। তারা জানতে চেয়েছে যে, এক দফা আন্দোলন শুরু করার পর যদি আন্দোলনে জয়ী না হই তাহলে কি হবে? বিএনপি নেতারা আন্দোলনের কৌশল এবং আন্দোলনের বাস্তবতা নিয়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তুলেছেন। তারা বলছেন যে, আমরা আন্দোলন পক্ষে। কিন্তু আন্দোলনের বিকল্প কিছুও ভেবে রাখতে হবে।

বিএনপি’র জেলা পর্যায়ের একজন নেতা বলেছেন, আমাদের নেতাদের এবং কর্মীদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী, হয়রানি এবং মামলা হচ্ছে। এখন এ সমস্ত মামলার পরিধি বেড়েছে এবং ধরপাকড় আগের থেকে বেড়েছে। বিএনপি’র দুইজন কেন্দ্রীয় নেতার বিরুদ্ধে হাইকোর্টের মামলার প্রসঙ্গ উত্থাপন করে ওই জেলা পর্যায়ের নেতা বলেন, সামনের দিনগুলোতে আরও অনেক নেতার বিরুদ্ধেই মামলা হতে পারে এবং তারা দণ্ডিত হতে পারেন। তাহলে আমরা কি আন্দোলন করে জয়ী হতে পারব? আন্দোলনের গতি যতই তীব্র হবে ততই এ সকল গ্রেপ্তার এবং এ ধরণের মামলাগুলো নিষ্পত্তির প্রবণতা বাড়বে। সেরকম পরিস্থিতিতে বিএনপি নেতারা কি করবে? এমন প্রশ্ন করেছেন ওই জেলা নেতা।

অন্য একজন জেলা নেতার বক্তব্য হলো, আন্দোলনের পাশাপাশি নির্বাচনের প্রস্তুতিও বিএনপিকে রাখতে হবে। শেষ পর্যন্ত যদি একটি রাজনৈতিক সমঝোতা হয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যদি বিএনপিকেও নির্বাচনে যাবার জন্য একটি শর্ত আরোপ করে, কিংবা এই নির্বাচন যদি মার্কিন মধ্যস্থতায় হয় তাহলে বিএনপিকে আন্দোলনের মাঠ ছেড়ে দিয়ে নির্বাচনে যেতে হবে। তার প্রস্তুতি বিএনপি’র কতটুকু আছে? এসব প্রশ্নগুলোর উত্তরে বিএনপি নেতারা তেমন কিছুই বলতে পারেনি।

তবে বিএনপি তৃণমূলের নেতারা মনে করছেন যে, বিএনপি যতটা না আন্দোলনের উপর নির্ভরশীল হয়ে আছে, তার চেয়ে বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে পশ্চিমা দেশগুলো, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্তের উপর। এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যদি শেষ পর্যন্ত কোন কারণে বিএনপিকে নির্বাচনে যেতে বলে, তাহলে বিএনপি’র কি হবে সেটিই এখন ঘুরে ফিরে একটি বড় প্রশ্ন হিসেবে বিএনপি কর্মীদের কাছে এসেছে। তাছাড়া বিএনপি’র বিভিন্ন নেতাদের ধরপাকড় গ্রেফতারের ব্যাপারে এবং পুরনো মামলাগুলো চাঙ্গা হবার ব্যাপারেও বিএনপি যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না এমন অভিযোগ করছেন তৃণমূলের নেতারা। তাই চূড়ান্ত আন্দোলন শুরুর আগেই বিএনপি এক ধরণের চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়ছে।

বিশেষ করে বিএনপি’র নেতারা মনে করেন যে, বড় ধরণের আন্দোলন করতে গেলে আগে ঢাকায় আন্দোলন করতে হবে। কিন্তু ঢাকায় সেরকম শক্তিশালী সংগঠন না থাকা এবং আন্দোলন করার মত নেতা না থাকার বিষয়টি নিয়েও দলের ভিতর সমালোচনা হচ্ছে। এরকম বাস্তবতায় বিএনপি কি আন্দোলনে যাবে নাকি নির্বাচনের পথে হাঁটবে? সেটিই এখন বড় প্রশ্ন হিসেবে নেতাকর্মীদের সামনে এসেছে। 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭