ইনসাইড পলিটিক্স

বরিশালে কি হাল ছেড়ে দিল আওয়ামী লীগ?


প্রকাশ: 01/06/2023


Thumbnail

আগামী ১২ জুন বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচন। গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিপর্যয়ের পর বরিশালের জয় ছিনিয়ে আনার জন্য আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নীতি নির্ধারকদের উদ্যোগ ছিল, আগ্রহও আছে। কিন্তু আওয়ামী লীগের যারা বরিশাল নির্বাচনের দায়িত্বে আছেন, তাদের মধ্যে এক ধরণের উদাসীন ভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যক্রমও রহস্যজনক। তার ভোটের আগেই প্রশ্ন উঠেছে বরিশালে কি আওয়ামী লীগ হাল ছেড়ে দিল?

আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্থানীয় সরকার নির্বাচন সম্পর্কে তার কঠোর অবস্থান জানিয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, নির্বাচনে আর যাই হোক কোন কারচুপি করা যাবে না, প্রশাসনকে ব্যবহার করা যাবে না, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নিজেদের পক্ষে কাজে লাগানো যাবে না। আর এই বার্তা স্থানীয় মাঠ প্রশাসনেও দিয়ে দেয়া হয়েছে। কোন অবস্থাতেই যেন ভোটে কোন অনিয়ম না হয়, নির্বাচন নিয়ে যেন কোন প্রশ্ন না উঠে সে ব্যাপারে তিনি কঠোর সতর্কবার্তা দিয়েছে। আর এ কারণেই গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ ছিল। বরিশালেও যদি প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী একই ভূমিকা পালন করে তাহলে বর্তমান বাস্তবতায় আওয়ামী লীগ প্রার্থী খোকন সেরনিয়াবাতের বিজয় সেখানে কষ্টসাধ্য হয়ে উঠবে বলেই রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এবার মনোনয়নের ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ চমক আনে। বর্তমান মেয়র সাদিক আবদুল্লাহর বদলে মনোনয়ন দেয়া হয় তার চাচা খোকন সেরনিয়াবাতকে। খোকন সেরনিয়াবাত আবুল হাসনাত আবদুল্লাহর ছোট ভাই। কিন্তু ছোট ভাই হলেও তার মনোনয়ন দেয়ার বিষয়টি মেনে নেননি আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ ও তার ছেলে। আবুল হাসনাত আবদুল্লাহর নিজেও স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের একজন সদস্য ছিলেন। ওই মনোনয়ন বোর্ডের সিদ্ধান্তের বিরোধিতাও তিনি করেছিলেন এবং শেষ পর্যন্ত সাদিক আবদুল্লাহকে যেন মনোনয়ন দেয়া হয় সেজন্য নানা রকম যুক্তি দেখিয়েছিলেন। কিন্তু তার চেষ্টা সফল হয়নি। বরিশালে শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন পান খোকন সেরনিয়াবাত।

সাদিক আবদুল্লাহকে মনোনয়ন না দেয়ার পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ ছিল পাঁচ বছর মেয়র হিসেবে তার স্বেচ্ছাচারিতা, উশৃঙ্খলতা এবং দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করা। আর একারণেই আওয়ামী লীগ আসা করেছিল যে, খোকন সেরনিয়াবাতকে মনোনয়ন দিলে আওয়ামী লীগের জন্য তা ইতিবাচক হবে। জনগণের কাছে আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি যেমন উন্নত হবে, তেমনি জনগণ তাকে ভোট দেয়ার ক্ষেত্রেও আগ্রহী হবেন। কিন্তু এই নির্বাচনের মনোনয়ন দেয়া পর পরই বরিশালের রাজনীতিতে প্রকাশ্য বিরোধ দেখা দেয়। আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ এবং তার পক্ষের লোকজন এই নির্বাচনে এখন পর্যন্ত নিরবতা পালন করছে। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের চাপে কেউ কেউ নির্বাচন প্রচার অভিযানে নামমাত্র অংশগ্রহণ করছেন। কিন্তু শেখ পর্যন্ত তারা আসলে কি ধরণের ভূমিকা গ্রহণ করবেন তা নিয়ে খোদ খোকন সেরনিয়াবাতেরই সংশয় রয়েছে।

এই নির্বাচনে ইসলামী আন্দোলনের দ্বিতীয় প্রধান ব্যক্তি হাতপাখা প্রতীক নিয়ে প্রার্থী হওয়ায় নির্বাচন জমে উঠেছে। বিভক্ত আওয়ামী লীগ এই নির্বাচনে ইসলামী আন্দোলনের সঙ্গে পেরে উঠবে কিনা সেটি নিয়েও বরিশালে নানামুখী আলাপ আলোচনা চলছে।

এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ভোটের ব্যাপারে সর্বশক্তি প্রয়োগ করতে প্রেনি। জনগণের কাছে ভোট চাওয়ার চেয়ে নিজেদের হতাশার বিষয়টি নিয়েই তারা আলাপ আলোচনা করছে। দলের ভেতর বিভক্তি এমন প্রকাশ্য রুপ নিয়েছে যে, এক পক্ষ অন্য পক্ষের উপর আক্রমণ পর্যন্ত করছে। এই পরিস্থিতিতে নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পরিণতি কি হবে তা নিয়ে অনেকেই সংশয় প্রকাশ করছেন। অনেকেই মনে করছেন যে নির্বাচনের আগেই হয়ত আওয়ামী লীগ বরিশালে হাল ছেড়ে দিয়েছে।

আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার সাথে কথা বলে দেখা গেছে তারা বরিশালে জয়ের চেয়ে অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করার ব্যাপারে বেশি আগ্রহী। তারা বলছেন, এই নির্বাচনে হার জিত কোন বিষয় না। ৫টি সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ প্রমাণ করতে চায় যে, বর্তমান সরকারের অধীনে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব। আর তা প্রমানের জন্যই এই নির্বাচনটি সুষ্ঠু করা গুরুত্বপূর্ণ। জয়ী হওয়া নয়।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭