ইনসাইড পলিটিক্স

যুক্তরাষ্ট্র কি নির্দলীয়, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার সমর্থন দিবে?


প্রকাশ: 01/06/2023


Thumbnail

নির্দলীয়, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন করছে বিএনপি। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া তারা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না এবং সে নির্বাচন হতেও দিবে না। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো এখন পর্যন্ত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিকে সমর্থন করে নাই। বরং যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, নির্বাচন হতে হবে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং অংশগ্রহণমূলক। এর বাইরে তাদের কোনো বক্তব্য নেই। এমনকি ব্লিঙ্কেনের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, কোনো বিশেষ দলকে নির্বাচনে আনা না আনার দায়িত্ব তাদের নয়, বাংলাদেশ কিভাবে নির্বাচন করবে সেটি তাদের বিষয়। তবে পর্দার আড়ালে, বাংলাদেশের অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে গেলে বিএনপির অংশগ্রহণ জরুরি- এমন কথা মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন। 

মার্কিন দূতাবাসের একাধিক কর্মকর্তা এরকম একটি বার্তা বিভিন্ন জনের কাছে দিয়েছেন। তবে বিএনপির বাইরেও সুশীল সমাজের একটি অংশ নির্দলীয়, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিকে সমর্থন দিচ্ছেন। তারা এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ধরনা দিচ্ছেন, তারা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন যেন নির্দলীয়, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হয়- এরকম একটি বক্তব্য যেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তরফ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে দেওয়া হয়, সেই প্রস্তাবও রাখছেন। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই বিষয়টি নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো কথা বলেনি।  

বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে একটি আইনগত এবং সাংবিধানিক সমস্যা রয়েছে। কারণ বর্তমান সংবিধানে নির্দলীয়, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের  কোনো বিধান নেই। আর সে কারণেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার করতে গেলে সংবিধান সংশোধন করতে হবে। তাছাড়া, তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি দুই মেরুতে অবস্থান করছে। এই অবস্থায় রাজনৈতিক সমঝোতা সম্ভব নয়। বিভিন্ন সূত্রমতে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে একটি রাজনৈতিক সমঝোতা চাইছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বা নির্বাচনকালীন সরকারের একটি মাঝামাঝি অবস্থা যুক্তরাষ্ট্র নিশ্চিত করতে চায়, যেখানে সকল দল অংশগ্রহণ করবে। এর মধ্যে রয়েছে নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করা, প্রশাসনকে নিরপেক্ষ রাখা, নির্বাচনকালীন সরকারের ক্ষমতা হ্রাস করা এবং নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল যেন প্রভাব বিস্তার না করতে পারে, সে ব্যাপারে বাস্তবানুগ এবং যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা। এই পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করা হলেই অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে বলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মনে করে। 

তবে যুক্তরাষ্ট্রের উপর সুশীলদের একটি বড় প্রভাব রয়েছে। অতীতেও দেখা গেছে, সুশীলরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলেছিল। বিশেষ করে এক-এগারোর সময়ে সুশীলদের প্ররোচণাতেই যুক্তরাষ্ট্র এক-এগারো সরকারকে সমর্থন জানিয়েছিল এবং একটি অনির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতায় বসাতে সহায়তা করেছিল। এমনটি কি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আবারও করবে? সেরকম সম্ভাবনা কতটুকু?- এসব প্রশ্ন নিয়ে নানামুখী আলাপ-আলোচনা হচ্ছে।

তবে বিভিন্ন সূত্র বলছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আসলে আগামী পাঁচটি সিটি করপোরেশন নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে চায়। নির্বাচনের আগে সরকার কি ধরনের পরিস্থিতি তৈরি করে, প্রশাসনের কি অবস্থান থাকে- ইত্যাদি তারা পর্যবেক্ষণ এবং পর্যালোচনা করতে চায়, তারপর তারা এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে চায়। হঠাৎ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিকে সমর্থন দিলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিরপেক্ষ অবস্থান ক্ষুন্ন হবে এবং বিষয়টি স্পর্শকাতর এমনটি মনে করছেন কেউ কেউ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশুগুলো এখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিকল্প হিসেবে একটি রাজনৈতিক সমাধানের পথ খুঁজছে এবং সেই সমাধানে যেন সব রাজনৈতিক দলগুলো সমঝোতায় পৌঁছে সেই চেষ্টা করছে। সেই চেষ্টা সফল না হওয়া পর্যন্ত তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন দিবে না বলেই ধারণা করা হচ্ছে। 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭