প্রকাশ: 02/06/2023
চরিত্র
মেয়েটি
মুক্তিযোদ্ধা
নাতি
যুবক
বুড়ো
কোরাস
মেয়েটি : জানি কি আমাদের প্রাপ্য কতটুকু?
মুক্তিযোদ্ধা : প্রাপ্য বুঝে নিতে হয়।
নাতি : আচ্ছা এই মেয়েটি কি আমার প্রাপ্য?
বুড়ো : যে জয় করে নিবে এ তারই সম্পদ।
মেয়েটি : তাহলে জয় করে নাও। পরাজিত হতে চাই। কেউ একজন পরাজিত করবে আমাকে।
বুড়ো : আমি তোমাকে স্বপ্ন দেবো, যা তোমরা পাওনি কখনও। সাদাকালো স্বপ্ন দেখে ক্লান্ত তোমরা। এবার তাতে রঙ দেবো।
নাতি : পারবে কি দিতে তুমি?
বুড়ো : জীবনে যা চেয়েছি তার একফোঁটাও পাইনি। এবার সুদসহ চাই। একটুও কম নয়।
নাতি : সে দেখা যাবে, কে জয় করতে পারে?
বুড়ো : ওহে বোকা বয়স আসেনি, মেয়েদের ছোঁয়ার। কি করে পাবে তাকে? এখনও সময় আছে, তোমাকে দেবো আমার ভাগ থেকে কিছু।
নাতি : তার আর প্রয়োজন নেই, আহা আকাশ জ্বলে-পুড়ে যায় চারদিক তার ভেতরে কেমন করে খুঁজে নিবো?
মেয়েটি : আপাতত বিদায় নিচ্ছি। আমাকে বলে দিও কি করতে হবে।
[মেয়েটি চলে যায়]
কোরাস : হুম না, আমাদের ঘরে
নাকি তোমাদের ঘরে
আলো জ্বলে না
হুম না হুম না।
বুড়ো : চলে গেলো সে, যেন আবার ফিরে আসার পোশাক গায়ে।
নাতি : ওকে যে ফিরতে হবে, আমি ওকে ফিরিয়ে আনবো।
বুড়ো : আজ থেকে আর বন্ধুত্ব নেই। সেখানে উড়বে ছাই শত্রুতার।
নাতি : সে আপনার ইচ্ছে। আমি তাহলে বিদায় নিচ্ছি।
বুড়ো : ধন্যবাদ, যাবার সময় নিয়ে যেও স্মৃতি। ওটা এখানে অপ্রয়োজনে উড়বে।
[নাতি চলে যায়]
বুড়ো : খানিকটা ঘুমানো যেতে পারে। একটু বিশ্রাম, আবার এ বাড়িতে উড়বে পাখি, ফুল আর সুবাস। মেয়েটির গায়ে গন্ধপোকারা উড়ে। আহা, আমি মাতাল হয়ে যাই। এই পোকারাই আমার পথ। বোকা ছেলেটি কি জানে এসব? এমন সময় আবার কে কড়া নাড়ে। আসুন যে দাঁড়িয়ে আছেন দরজার ওপাশে।
[একজন লোক প্রবেশ করে]
লোক : ভালো আছেন নিশ্চয়ই। আপনার চোখে-মুখে অচেনা রেখা দেখা যায়।
বুড়ো : ঠিক চেনা হলো না। আগে দেখেছি এমনও নয়। রঙ গায়ে চড়িয়েছেন যে ভুল হয় মাঝেমধ্যে। মানুষ নাকি রঙের গোলা।
লোক : বোধহয় ভুলে গেছেন। আজ এখানেই আসার কথা ছিল আপনার কাছে। সময় বোধহয় ভুলিয়ে দিয়েছে, যাক তবে সে কথা।
বুড়ো : তবে সময়ই মনে করিয়ে দেবে, মনে করানোর কাজ তারই।
লোক : সময়ের প্রতি এত বিশ্বাস?
বুড়ো : সময়কে বিশ্বাস না করলে দীর্ঘ পথ শেষ করা যেত না।
লোক : কাজের কথা শুরু হয়নি।
বুড়ো : হয়ে যাবে কোনো একসময়। আপনি নিজেও জানবেন না তা।
লোক : ফুল এসেছে, যেমন বলেছিলেন আপনি।
বুড়ো : তবে দিয়ে এসো তাকে যার জন্য এনেছি এসব। আমার বারতা তার ঘরে দিয়ে এসো। যেন বা আমার চুম্বন এই ফুলের শরীরে।
লোক : আজ কোনজনার ভাগ্য খুলবে।
বুড়ো : ওহে বোকা, যে আমার ঘরের গন্ধ বদলে দেয়। পুড়িয়ে ফেলে পুরনো বসন্ত আসে মধুর হাওয়ায়।
লোক : তাকে একবার দেখতে হয়, মৃতের শরীরে সে প্রাণ দেয়। দিকে দিকে তার জয় শুনি।
বুড়ো : তুমিও শুনতে পেয়েছ। তার পরানের ডাক। আহা কেই বা শুনতে না পায়। এমনও করে যে ডাক দিয়ে যায়। তার ডাকে...
লোক : তার ডাকে প্রাণ নাচুক। হেসে হেসে চলে যাক নদী অথবা বাড়ির সামনের পথ।
বুড়ো : তবে দিয়ে আসো তার দরজায়, তান উঠবে সেথায়। ফুল টেনে নিক তার ঘ্রাণ ফুলের বুকে জমুক ঈর্ষার পলি। পরদিন প্রভাতে মৃত্যুর আগে, জানবে পরাজিত হয়েছে।
লোক : অক্ষম আমি, আঁধার চারদিক, আড়াল ছিঁড়ে না হায়।
বুড়ো : অন্ধের হাতে বিশ্বাসের চাবি। খোলা যায় না দরজা। খুঁজে নিতে হবে পথ, জানো কি তার চলা? কেটে ফেলো চোখ কিংবা নাক তাদের, যারা তোমার সঙ্গে নেই।
লোক : কাটবার আগে শুনতে চাই সে নাম।
বুড়ো : বুকের জমিনে সে ফসল হয়, তাকে নাই বা দিলাম তোমার কানে সে থাকুক আমার বুকের জমিনে, নবান্নের গন্ধে মাতাল আমি।
লোক : তবে তার ঘরে কেমনে যাব? পথ বলে দিন চলে যাই।
বুড়ো : কাল একজনই বেগুনি ফুল পরেছিল।
লোক : তাকে চিনি আমি। তার খোঁপায় ফুটেছিল বেগুনি ফুল। নির্ঘুম রাত, নীরবতার কান্না, মেঘের আড়ালে ডুবে যায় চাঁদ। স্বামী বিছানায় একা ঘুমায়, তার শরীরে শ্বেত আলপনা আঁকে আরেকজন। উৎসবের রঙ উজ্জ্বল হয়, ভোরের আলো থমকে যায় বিছানায় অন্য পুরুষ ঘুমিয়ে।
বুড়ো : বকবক করে বলছো তুমি কার কথা, হে অবোধ, হে বোকা।
লোক : কাল যার খোপায় বেগুনি ফুল, সে বিয়ের আসরে প্রতীজ্ঞা করেছিল।
বুড়ো : প্রতিজ্ঞা ভাঙ্গে, বিশ্বাস ভাঙ্গেÑ থাকে শুধু প্রত্যাশা। তা না হলে আত্মহত্যা করতো সে। আমাদের চারপাশ মরে যেত। কোনো এক মৃত ভোরে, রাতের সঙ্গে সঙ্গে।
লোক : একবার তাকে পরিচয় করিয়ে দিন। বাকি কাজটুকু আমার হাতেই হবে।
বুড়ো : এই আগুন লাগা ভোরে কার কথা তোমাকে বলবো হে ফুল মানুষ। তারপরও যদি শুনতে শখ হয় তোমার। তবে বলছি, যে আমার নাতির হাত ধরে ঘুরে বেড়ায়।
লোক : মাটি ফেটে চৌচির, আগুন জ্বলে ঘরের চৌকাঠে, চারদিকে ওড়ে আঁধারের দেবতা, পুড়ে যায় বসন্তের পোড়া সকাল, মৃত পাতা, খসা ভ্রুণ, ধূসর পথে সে চলতে থাকে অনেকের সাথে। নগরবেশ্যার শরীরে ফোটে শুভ্র শিউলি। আমি কি এই মৃতের কাছেই দিয়েছি সব।
বুড়ো : যাই বলো তাকে আমার চাই।
লোক : তার হাতে আমিই দেবো ফুল।
বুড়ো : চিনতে কি পেরেছো তাকে?
লোক : তাকে চিনি আমি অনেকদিন থেকেই।
বুড়ো : তবে তো আর ভয় নেই। তোমার হাতেই তুলে দেবো আমার শখের পথ।
লোক : ভয় আছে আমার একটা। এখনও জানি না তার হাতে তুলে দিবো কোনো ফুল।
বুড়ো : ওহে, শরীর মুগ্ধ পুরুষ বলছো কি? ও তোমার ঘরে একরাতও থাকবে না।
লোক : থাকেনি, একরাতও থাকেনি সে। ভেঙেছে বিশ্বাসের দরজা-জানালা ।
বুড়ো : সরল করে বলো শুনি।
লোক : শুনতেই যদি চান, সময় দিতে হবে। সময়ের পিঠে চড়ে শোনাবো সে কথা।
বুড়ো : বলো, বলো তুমি।
লোক : পিপাসায় আর্ত আমি। তারপরও আপনার জন্য বলতে হবে।
বুড়ো : তুমি না বললে আর কেউ আমাকে বলবে না সে কারণ।
লোক : তাহলে বলছি, একদিন তার সঙ্গেই ঘুমিয়েছিলাম। আমার ঘরের সকল চাবি তার আঁচলে।
বুড়ো : এও কি বিশ্বাস করতে বলো।
লোক : তবে শুনুন, আমার কথায় খুলে দিতো বুকের বসন। কিংবা শরীরের আবরণ। তার স্তন খুলে দিতো পিপাসা মেটাতে। উরুর তিলে চুমু দিতাম।
বুড়ো : বলছো কি তুমি?
লোক : ওর বুকে মাথা না রাখলে ঘুম দূরেই থাকতো।
বুড়ো : ওহো এসব আর বলো না।
লোক : জানি আপনি শুনতে চাইবেন না। কিন্তু? একটি প্রশ্ন থেকেই যায়। সে আমার চারধারে ঘুরঘুর করে। আমি কি দিতে পারিনি কিছু?
বুড়ো : বলো বলো কীসের অভাব ছিলো তোমার?
লোক : জানি না।
বুড়ো : একটা কিছু তুমি দিতে পারোনি। তাই আমি তুলে দিবো ওর কোলে।
লোক : দিন, তাই তুলে দিন। আমাকে ক্ষমা করুন এবার।
বুড়ো : আমি বটের সমান বয়সী।
লোক : সে তো দেখতেই পাচ্ছি।
বুড়ো : আমি যোদ্ধা, মুক্তিযোদ্ধা।
লোক : এটাও বাণিজ্য আপনার। যেমন স্ত্রী বিক্রি হয় বিত্তশালীর ঘরে।
বুড়ো : ও সেটাও জানো বুঝি।
লোক : জানি আমি অনেক কিছু।
বুড়ো : শুধু জানো না স্ত্রীবশীকরণ মন্ত্র।
লোক : সকালের আলোয় দুজনার একটি ঠোঁট।
বুড়ো : ওরে বাপরে, জানতে তাহলে সবই।
লোক : কেন জানবো না, ওর চোখে ছিলো মেনকা আর রম্ভা। আর ঠোঁটে মনসা শরীর। ঊরু সে যে ঊবর্শীর সন্দেহ নেই। স্তনে ছিলো আফ্রেদিতি। এমন রূপবতীর কাছে যে সব রাখা যায়।
বুড়ো : আমিও বলছি সব রাখতে দাও। আমি সব রেখে ধন্য হতে চাই।
লোক : তাহলে রাখুন আপনার সব।
বুড়ো : তোমাকে ডেকে এনেছি, খালি হাতে ফেরাবো না। আমার কাজটি করে দাও।
লোক : ঠিক আছে বলুন কি চান আপনি?
বুড়ো : ওর হাতে তুলে দাও ফুলের গুচ্ছ।
লোক : আজই তুলে দিতে চান।
বুড়ো : হ্যাঁ অনেক ফুল মিলে একটি প্রাণ।
লোক : তবে তাই হোক।
[লোকটি চলে যায়]
বুড়ো : যে পুরুষ মেয়েদের চেনেনি সে কি করে আনবে তাকে ডেকে। ব্যাটা বোকা পুরুষ জীবনে একবার হেরেছিলাম। সে হারও আমি তুলে রেখেছি। ওরা জানে না, স্মৃতিকে খুন করতে হয়। তা না হলে ও নিজেই খুনি হয়ে যায়। যাক আজ আমার আরামের ঘুম ডাকতে হবে না আর চোখের পাতায়।
[বৃদ্ধ বেরিয়ে যায়। নাতি আর মেয়েটি প্রবেশ করে]
[কোরাস]
হুম না
আমাদের ঘরে
নাকি তোমাদের ঘরে
আলো জ্বলে না
হুম না হুম না
সে তোমার অতি আপনজন
তার ঘরেই হোক উদ্বোধন।
নাতি : এসো ঘর আলো করে এসো, চারদিকে অন্ধকারের দৌড়। একবার এসে দাঁড়াও এখানে তারপর...।
মেয়েটি : তারপর?
নাতি : তারপর হবে উৎসব, আমাদের দুজনার আনন্দের মেলা। ওই দূর আকাশের তারাদের লোভ জাগে।
মেয়েটি : তারাদের ছুঁতে চাই, মাঝরাতে ঘুম ভেঙে যায়। আমার ভেতরে বৃষ্টি নামে সারা আকাশ কালো করা মেঘ, বৃষ্টির জলে স্নান করি।
নাতি : তোমার কথায় ফুল ফোটে, আরও বলো আরও বলো শুনি।
মেয়েটি : কি শুনবে?
নাতি : যা বলতে চাও।
মেয়েটি : বলার নেই আমার কিছু।
নাতি : কোনো শব্দ অথবা বাক্য?
মেয়েটি : না স্যাঁতসেতে পৃথিবী, মৃত নদী আর কিই বা বলার আছে।
লোক : ভেবে দেখো আরেকবার, হয়তো ভুলে গেছে কেউ। যা বলা খুব দরকার।
মেয়েটি : লাল আকাশের বুকে ঝুলন্ত সূর্য অথবা চাঁদ স্মৃতি থেকে মুছে যায়নি।
লোক : আর কিছু?
নাতি : কে তুমি?
লোক : প্রশ্নের পিঠে প্রশ্ন জমে, উত্তরের ফেরা হয় না প্রশ্নের ঘরে।
নাতি : কেমন করে কখন এলে।
লোক : স্যাঁতসেতে দেয়ালে শ্যাওলা জমেÑ শ্যাওলার আড়াল থেকেই এসেছিÑ বাক্যেরা আঁধারে ঠাসঠুস ফোটে।
মেয়েটি : শান্তি নেমেছে চারদিকে, আবার ফিরেছ।
লোক : পুরোনো ভুল মুছে দেই।
মেয়েটি : সে ক্ষমতা কি তোমার আছে?
নাতি : ভুল? কোন ভুলের কথা বলো?
লোক : তার গায়ে গন্ধ পোকার বাস, দেহের ফাঁকে জমেছে রক্তপুঁজ। সুখ মেলে না।
মেয়েটি : নিলামের পাল্লায় উঠেছি, যাচাই-বাছাই করে নিন দ্রুত।
লোক : পাবো নাকি একটি সুযোগ?
মেয়েটি : বিশ্বাস খুন হলে কি আর ফেরা যায়?
লোক : ফুল হোক বিশ্বাসের প্রতিবিম্ব। ভেবে নাও, এই পাপড়ির গায়ে হৃদপিণ্ডের রক্ত। আড়ালের তিনি পাঠিয়েছেন, ভেবে দেখো কাকে নেবে তুমি?
মেয়েটি : টগবগ করে ফোটে সে, হাওয়ায় উড়িয়ে নেয় আমার চুল। ফেনাভাঙা সমুদ্র ঢেউ, জলে মাছ উৎসব, অকস্মাৎ চমকে উঠি তপ্ত নিশ্বাসে। পেশিবহুল হাত আকড়ে ধরে শরীরের সন্ধিতে সন্ধিতে খেলে আঙুল। অন্ধ হয়ে যাই উত্তাপে।
লোক : মোহর পূজা করো না বালিকা, মোহ কেটে গেলে ডুবে যাবে নিশ্চয়ই তুমি, ডুবে যাবে গভীর অন্ধকারে।
মেয়েটি : ডুবতে চাই, ডুবতে চাই অতল জলে, সেখানে হাঙর, অক্টোপাস আর আমি।
লোক : মূর্খ মেয়ে বোঝে না নির্ভরতা, চেনে না তার বিশ্বাসের বিন্দু। ঘাস জমিনে ফলায় স্বর্ণরেণু। কেমন করে নিশ্চুপ থাকবে তুমি?
নাতি : সাবধান, সাবধান মিষ্টি মেয়ে, ওরা তোমাকে হত্যা করবে।
লোক : ধোঁয়ার কুণ্ডলী উড়ে যায়। হালকা হাওয়ায় ভাসে স্বপ্ন কল্পনার জাল। সেখানে যাই করো ভুল হবে তোমার। রইলো এখানে ফুলগুচ্ছ, বিদায় নিলাম।
মেয়েটি : ফুল তো প্রতীক আড়ালে তার নৃমুখ, চামড়ার ভাঁজে কেঁপে কেঁপে ওঠে। চোখের আলোয় শ্বেত পর্দা। বৃদ্ধের শরীর নদীরেখায় ভাসে।
নাতি : কে এই লোকটি?
মেয়েটি : একঘরে থাকতাম, আমার শরীরে ছিলো তার যথেচ্ছ অধিকার। আড়াল হলেই বদলে যেত মানুষটি। অন্য ফুলের মধু শোষণ করে।
নাতি : বলছো কি তুমি?
মেয়েটি : সংশয়ের দোলাচল।
নাতি : সংশয় আমাদের খেয়ে ফেলে।
মেয়েটি : ভয় নেই খুন করো সংশয়কে।
নাতি : খুন হয় না অবয়বহীনতা।
মেয়েটি : বলো তবে কি করবে?
নাতি : শেষ করে দিবো তাই, যা আমাকে টানে তোমার দিকে।
মেয়েটি : তবে শেষবারের মতো আমাকে নাও।
নাতি : যেখানে বিশ্বাস নেই সেখানে, জমিন চাষ হয় না। ফলে না কোনো ফসল।
মেয়েটি : পাও না কি ফলনের ঘ্রাণ, এই শরীরে আউশ ফোটে না কি?
নাতি : ফিরে যাও তোমার পুরনো ঘরে।
মেয়েটি : বিশ্বাস ভাঙার নায়ে চড়তে বলো। যদি তাই চাও তবে দিয়েছিলে কেন তুমি।
নাতি : আজ ফিরিয়ে নিলাম সব।
মেয়েটি : তবে আর কি বিদায় হয়ে যাক।
[কোরাস]
হুম না
ভাঙে ঘর হুম না
এই ঘরে সে থাকে না
হুম না হুম না
ফিরে আসে সে বৃদ্ধ
হুম না হুম না।
বুড়ো : আবারও চলে গেলে যুবক, অনেক বছর আগের মতো এ বছরও একই ঘটনা।
মেয়েটি : একই ঘটনা?
বুড়ো : অনেক বছর আগে ফিরিয়ে দিয়েছিলাম। সে চলেও যায়। তারপর তার স্মৃতি থাকে। এবারও আরেকজন চলে গেলো।
মেয়েটি : আরেকজন?
বুড়ো : আরেকজন নয় স্মৃতি চলে যায়।
মেয়েটি : তবে?
বুড়ো : তবে আর কি? এই স্মৃতিকে বাঁচাতে হবে নিজেদের প্রয়োজনে।
মেয়েটি : কি করে?
বুড়ো : তোমাকে গ্রহণ করে ওর ভালোবাসা বিশ্বাস সবটুকুই তুমি, তোমাকেই নিতে চাই।
মেয়েটি : ও তবে কার স্মৃতি?
বুড়ো : আমার সন্তানের, যে চলে যাবার আগে মরে যায়। আমি তার শেষ চোখ দেখি সেখানে শুধু বাবার জন্য ঘৃণা। আর মুক্তিযোদ্ধার পক্ষে আর কী থাকে?
মেয়েটি : আপনি নিজেও তো একজন...
বুড়ো : ওহে মেয়ে চুপ আর নয়, শুনতে চাই না কিছুই আর শেষ করে দাও এখানেই।
মেয়েটি : আপনি চাইলে এখানেই শেষ।
বুড়ো : হ্যাঁ আমার চাওয়া শেষ করো তুমি এসব। আমি তোমাকে বলবো না কে আমি?
মেয়েটি : নিজেকে এত ভয়।
বুড়ো : না তোমাকে ভয়।
মেয়েটি : ভয়কে জয় না করলে, আমাকে পাবে না।
বুড়ো : না তোমাকে না পেলে হারবো।
মেয়েটি : তোমায় গলায় জয়ের মালা, সে তো আমিই।
বুড়ো : তবে শোনো বলি তোমাকে। আমি জয়ী হতে পারিনি। আমার ছেলে ছিলো যোদ্ধা। এক নামকরা মুক্তিযোদ্ধা। এক রাতে জেনে যায় তার বাবার পরিচয়।
মেয়েটি : রাজাকার সে।
বুড়ো : জানো তুমি।
মেয়েটি : আর সে খুন হয় বাবার হাতেই।
[কোরাস]
ধূপ দাও চারদিকে
ধোয়া উড়ুক
ধূপ দাও ধোয়া উড়ুক
আমি সুখ চাই
পাখি চাই
আর ওকে খুন করতে চাই।
এখানেই শেষ হতে চাই
ধোয়া উড়ুক
ধূপ দাও ধোয়া উড়ুক
উড়ুক ধোঁয়া।
বুড়ো : সব জানার পরও এলে তুমি।
মেয়েটি : আসিনি তুমি জয় করে নিয়েছ।
বুড়ো : কিন্তু...
মেয়েটি : আমাকে গ্রহণ করো পুরুষ।
বুড়ো : তোমার চোখে তার চোখ, ভুল হয়নি আমার একচুলও।
মেয়েটি : ভোগ করো আমাকে আর কষ্ট নেই ভোগ করো।
বুড়ো : ফিরে যাও তুমি, চাই না তোমাকে ফিরে যাও বালিকা। আমার ঘরে সর্বনাশের আগুন জ্বলে। ফিরে যাও হে বালিকা।
মেয়েটি : ফেরার জন্য নয়, তোমার জন্য এসেছি। আমি বর্তমানের পিঠেই চড়তে চাই।
বুড়ো : আমার অতীত ফিরে আসে, তাকে ফেরাতে পারি না।
মেয়েটি : তোমার জন্য ভাঙতে পারবো না, থাকবে সে আমার পাশে। আয়তন আরও বড়ো হবে।
বুড়ো : তবে তোমার বুক কেটে রক্ত পান করাও আমাকে। আমার পিপাসার্ত ঠোঁটের আশা মিটুক।
[কোরাস]
সুখ দাও
ধোঁয়া উড়ুক
ধূপ দাও ধোয়া উড়ুক
সুখ উড়ুক।
তার বুকে মাখন কাটে ধারালো অস্ত্র
চিৎকার শেষ হলে কি আর শব্দ হয়
শবদেহ জুড়ে তখন শীতল রক্ত।
রক্ত দাও
পুণ্য হোক।
লেখক, ড. তানভীর আহমেদ সিডনী : গবেষক, নাট্যকার ও কথাসাহিত্যিক
প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান
বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭