ইনসাইড বাংলাদেশ

সুষ্ঠু নির্বাচনের রূপরেখা তৈরি করছে সরকার


প্রকাশ: 02/06/2023


Thumbnail

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করুক বা না করুক- সরকার নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ করতে বদ্ধপরিকর। বিএনপিকে নির্বাচনে আনার জন্য আওয়ামী লীগ আগবাড়িয়ে যেমন কোনো পদক্ষেপ নেবে না, তেমনি বিএনপি ছাড়া নির্বাচনে যেন কোনো রকমের অনভিপ্রেত ঘটনা না ঘটে- নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হয়- সেটি নিশ্চিত করার জন্য সরকার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতিমধ্যেই দলকে এবং প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে এই বার্তাটি সুস্পষ্টভাবে দিয়েছেন যে, আগামী নির্বাচন হতে হবে অবাধ,সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং এই নির্বাচনে কারচুপি, ভোট জালিয়াতি বা অন্য কোনো হস্তক্ষেপকে বরদাশত করা হবে না। 

প্রধানমন্ত্রীর এই দৃঢ় অবস্থানের পর আগামী নির্বাচনের ব্যাপারে এক ধরনের নিরপেক্ষতার আবহ তৈরি হয়েছে। ইতিমধ্যে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তার প্রমাণও পাওয়া গেছে। ওই নির্বাচনে প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ বা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষপাতের কোনো অভিযোগ উত্থাপিত হয়নি। এটা অত্যন্ত ইতিবাচক বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।  

সরকারের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকার একটি ১০ দফা রূপ পরিকল্পনা তৈরি করেছে। এই ১০ দফা রূপ পরিকল্পনার ভিত্তিতেই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানিয়েছেন। এই রূপরেখাগুলোর মধ্যে রয়েছে:- 

১. নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতা এবং স্বাতন্ত্র: নির্বাচন কমিশন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বাধীনভাবে ক্ষমতা প্রয়োগ করবে। তাদেরকে কোনো চাপ দেওয়া হবে না অথবা তারা কোনো চাপের কাছে নতিও স্বীকার করবে না। সাম্প্রতিক সময়ে নির্বাচন আইন সংশোধীত হয়ে মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত হয়েছে। এই আইন চূড়ান্ত হলে, নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা অনেক বেশি বেড়ে যাবে। যদি কোনো কেন্দ্রের ভোট নিয়ে নির্বাচন কমিশন সন্তুষ্ট না হয়, তাহলে সেই কেন্দ্রের ভোট বন্ধ করে দিতে পারবে, ভোট বাতিলও করে দিতে পারবে। নির্বাচন কমিশন প্রশাসনের পক্ষপাত বা অন্য কোনো অভিযোগ পেলে- তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে। সরকার নির্বাচন কমিশনের এই স্বাধীনতাকে উৎসাহিত করছে এবং সরকারের নীতি নির্ধারকরা চান যে, নির্বাচন কমিশন স্বাতন্ত্র অবস্থান নিয়ে নিরপেক্ষ থেকে আগামী নির্বাচন পরিচালনা করুক। 

২. নির্বাচনকালীন সরকার: নির্বাচনকালীন সরকারের বিষয়টিও সরকার গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে। ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রী একটি সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচনকালীন সরকারের একটি ধারণা গণমাধ্যমের কাছে উপস্থাপন করেছেন। তিনি বলেছেন যে, সংসদে যে সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলো আছে- তাদের মধ্যে থেকে নির্বাচনকালীন সরকার গঠিত হবে। সরকার নির্বাচনকালীন সময়ে একটি ছোট মন্ত্রিসভার সরকার গঠন করতে চাইছে- যে মন্ত্রিসভায় সংসদে বিদ্যমান রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিত্ব থাকবে। যে মন্ত্রিসভা রুটিন কাজের মাধ্যমে তাদের দায়িত্ব সীমাবদ্ধ করবে। কোনো নীতি নির্ধারণী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে না।  

৩. প্রতিদ্বন্দ্বীতামূলক নির্বাচন: আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন যেন কোনো অবস্থাতেই ২০১৪’র নির্বাচনের মতো না হয়, সেজন্য সরকার একটি প্রতিদ্বন্দ্বীতাপূর্ণ নির্বাচন করতে চায়। এই কারণেই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যদি শেষ পর্যন্ত বিএনপি অংশগ্রহণ না করে, তাহলে আওয়ামী লীগ জোটবদ্ধ কোনো নির্বাচন করবে না। বরং প্রত্যেকটি দল আলাদা আলাদাভাবে যেন নির্বাচন করে- সেই পথ উন্মুক্ত করে দেবে। ফলে নির্বাচনে একটি প্রতিদ্বন্দ্বীতার আবহ তৈরি হবে। 

৪. বিনা ভোটকে নিরুৎসাহিত করা: ২০১৪ সালের নির্বাচনে দেখা গেছে, আওয়ামী লীগের অনেক নেতারাই বিনা ভোটে নির্বাচিত হওয়ার জন্য তৎপর ছিলেন। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদেরকে বসিয়ে দেওয়ার একটি ভয়াবহ প্রবণতা লক্ষ্য করা গিয়েছিল। আগামী সংসদ নির্বাচনে যেন এ ধরনের কোনো কিছু না হয়- সে ব্যাপারে সরকার এখন থেকেই সতর্ক রয়েছে। 

৫. প্রশাসনের নিরপেক্ষতা: আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রশাসনকে নিরপেক্ষ ভূমিকায় দেখতে চায় সরকার। আর এ কারণেই প্রশাসনের একটি বড় ধরনের রদবদল হবে। এমন কাঠামো বিন্যাস করা হবে, যেন নিরপেক্ষ এবং যোগ্য ব্যক্তিরা নির্বাচনকালীন সময়ে বিভিন্ন দায়িত্বে থাকেন। 

৬. আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিরপেক্ষতা: আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নিরপেক্ষ অবস্থানে রাখা হবে এবং প্রশাসন কোনো অবস্থাতেই এ ব্যাপারে কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করবে না।

৭. নির্বাচন পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা: আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য বিদেশি কূটনীতিকদেরকে আমন্ত্রণ জানাবে সরকার এবং বিদেশি কূটনীতিকরা যেন নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে পারেন- সে ব্যাপারে উৎসাহিত করা হবে। বিভিন্ন দেশকে আমন্ত্রণ জানানো হবে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য। 

৮. বিভিন্ন এমপি এবং মন্ত্রীদের সীমাবদ্ধতা: নির্বাচনকালীন সময়ে মন্ত্রী-এমপিদের ক্ষেত্রে বেশ কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করা হবে। তারা যেন নির্বাচনের উপর কোনো রকম প্রভাব বিস্তার না করতে পারে, সেটি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকার সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। 

৯. ভালো প্রার্থীদের উৎসাহিত করা: আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগও তার প্রার্থীদের পরিবর্তন করবে। সৎ, যোগ্য এবং জনপ্রিয় প্রার্থীদের সামনে নিয়ে আসা হবে। অন্তত ১শ’ থেকে দেড়শ’ আসনে আওয়ামী লীগ তার প্রার্থী পরিবর্তন করবে। জনপ্রিয় ব্যক্তিদেরকে প্রার্থী করা হলে জনগণের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা বাড়বে। 

১০. ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের নিয়ে আসা: আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের একটি পরিকল্পনা হলো, নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক এবং প্রতিদ্বন্দ্বীতাপূর্ণ করা- যেন ভোটকেন্দ্রে জনগণ আসে, সে রকম একটি পরিবেশ, পরিস্থিতি তৈরি করতে চায় আওয়ামী লীগ। আর সে জন্য নেতাকর্মীদেরকেও  নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। তাদের প্রধান লক্ষ্য হলো ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি নিশ্চিত করা। 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭