ইনসাইড টক

‘ঢাকায় প্রতিদিন আড়াই কোটি পলিথিন একবার ব্যবহার করে ফেলে দেওয়া হচ্ছে’


প্রকাশ: 05/06/2023


Thumbnail

‘যে প্রতিপাদ্য দিল ইউনাইটেড নেশন এনভায়রনমেন্ট প্রোগ্রাম ‘সলিউশন্স অব প্লাস্টিক পলিউশন’ এবং বাংলাদেশে এটার বঙ্গানুবাদ করেছে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় ‘প্লাস্টিক দূষণ সমাধানে সামিল হই সকলে’। এটাতো প্রতিপাদ্য এবং স্লোগান ছিল কি ‘বিট প্লাস্টিক পলিউশন’। বাংলাদেশে করা হয়েছে কি-‘সবাই মিলে করি পণ, বন্ধ হবে প্লাস্টিক দূষণ’। এই যে বঙ্গানুবাদটি করেছে পরিবেশ এবং বন মন্ত্রণালয়। আমি একটি প্রশ্ন রাখতে চাই পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী থেকে সচিব এবং কর্তা ব্যক্তিদের- ‘সবাই মিলে করি পণ, বন্ধ হবে প্লাস্টিক দূষণ’- তারা কি এই পণের অন্তর্ভুক্ত? তারা কি এই পণ করেন?’ - বলছিলেন পরিবেশ অধিদপ্তরের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক এবং পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মো. আবদুস সোবহান

আজ সোমবার ( ৫ জুন) বিশ্ব পরিবেশ দিবস। এই দিবসে নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়। বিশ্ব পরিবেশ দিবসে এবারের প্রতিপাদ্য - ‘সবাই মিলে করি পণ, বন্ধ হবে প্লাস্টিক দূষণ’। ম‍‍‍ূলত প্লাস্টিক এবং প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহার রোধ বা নিয়ন্ত্রণ করতেই এই প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। প্লাস্টিক পণ্য ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে গেছে, প্লাস্টিক পণ্য বর্জন এবং এর ব্যবহার রোধ করতে কি কি করণীয় হতে পারে?- এসব বিষয়ে বাংলা ইনসাইডারের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় এসব কথা বলেছেন প্রকৌশলী মো. আবদুস সোবহান। পাঠকদের জন্য প্রকৌশলী মো. আবদুস সোবহান- এর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বাংলা ইনসাইডারের বিশেষ প্রতিনিধি আল মাসুদ নয়ন।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে পলিথিন নিষিদ্ধের যে আইন আছে, সে আইনটা ২০০২ সালের আইন। এই আইনটি দেখার দায়িত্ব হচ্ছে পরিবেশ অধিদপ্তরের। আবার পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় হচ্ছে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়। তার মানে হচ্ছে, তাদের ওপর এ দায় বর্তায়। ২০০২ সালে পলিথিন যখন বিলুপ্ত হলো, শপিং ব্যাগ, তখন কিন্তু বিকল্প চলে আসলো। তখন কিন্তু আমরা পলিথিন থেকে সরে আসছিলাম। কাগজের ঠোঙ্গা, কাগজের ব্যাগ, কাপড়ের ব্যাগ, পাটের ব্যাগ- আগে গ্রাম বাংলায় যেরকম পাটের ব্যাগ, শিকে ব্যবহার করতাম আমরা- সেগুলো কিন্তু অনেকটাই ফিরে আসছিল। - এই জায়গা কেন আমরা আবার আগের জায়গাতেই আসলাম?

প্রকৌশলী মো. আবদুস সোবহান বলেন, ঢাকা শহরে আমাদের হিসেব মতে আড়াই কোটি পলিথিন একবার ব্যবহার করে প্রতিদিন ফেলে দেওয়া হচ্ছে। যে আইটেমই আপনি কিনেন না কেন, দেখবেন আপনাকে পলিথিন ব্যাগ দিচ্ছে। সুতরাং আইন আছে, এর প্রয়োগ নেই। এই আইন বাস্তবায়নের দায়িত্ব হচ্ছে পরিবেশ অধিদপ্তরের এবং তার প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় হচ্ছে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়। কিন্তু তারা তো সে দায়িত্ব পালন করছেন না। তারা একটা অজুহাত তোলেন, সচেতনতার অভাব। আমি আইন ভঙ্গ করলে আমাকে আইনের আওতায় আনতে হবে, সে দায়িত্ব পরিবেশ অধিদপ্তরের, কিন্তু সেটা আমরা দেখছি না। 

তিনি বলেন, ২০০২-২০০৩ সালের দিকে এটা কিভাবে সম্ভব হয়েছিল? সে সময়ে কিন্তু আমরা পলিথিন বন্ধের দ্বারপ্রান্তে চলে গিয়েছিলাম। কিন্তু সেখান থেকে আমরা কেন আবার এ অবস্থায় এলাম। পরিবেশ অধিদপ্তর একটা রুটিন ওয়ার্ক করে মোবাইল কোর্ট করে। মেবাইল কোর্ট তারা ভোক্তা পর্যায়ে করে থাকেন, কিন্তু উৎপাদন পর্যায়ে করছেন না। যারা পলিথিন উৎপাদন করেন, তাদের বিরুদ্ধে কোনো আইনগত ব্যবস্থা তারা নিচ্ছেন না। তার মানে হচ্ছে 'সর্ষের ভেতরে ভূত'। 

প্রকৌশলী মো. আবদুস সোবহান বলেন, প্লাস্টিক বিষয়ে আসি। প্লাস্টিক দূষণ যে কতটা ভয়াবহ, এটা আমরা কেউ কিন্তু অনুধাবন করতে পারছি না। ২০১৮ সালে ইউনাইটেড নেশন এনভায়রনমেন্ট প্র্রোগ্রাম যে প্রতিপাদ্য দিয়েছিল- সেটাও ছিল এই প্লাস্টিক নিয়ে এবং ওই বছরই ধরিত্রী দিবসের প্রতিপাদ্যও ছিল এই প্লাস্টিক। দুটোই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিবস ছিল। পাচঁ বছর পরে আবার প্লাস্টিককেই প্রতিপাদ্য করা হয়েছে। তার মানে এর ভয়াবহতা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এখন গবেষণায় বলা হচ্ছে , এই পলিথিন, প্লাস্টিক এক হাজার বছর পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। 

তিনি বলেন, এখন এটার সমাধান কি? এখানে দুটো বিষয়। একটি হচ্ছে পলিথিন এবং আরেকটি হচ্ছে প্লাস্টিক। আমরা যেসব পলিথিন বা প্লাস্টিক একবার ব্যবহার করি, সেগুলোর ব্যবহার সীমিত করা। যারা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি আছে, যারা প্লাস্টিক ব্যবহার করে- তাদের দায়িত্ব হওয়া উচিত- এগুলো ভোক্তা পর্যায় থেকে সংগ্রহ করে নেওয়া। যদি এগুলো আমরা সংগ্রহ করি এবং এটি যদি রিসাইক্লিং করার ব্যবস্থা থাকে- তাহলে এর ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। এখনও কিন্তু প্লাস্টিক কেজি প্রতি ২০/২২ টাকা বিক্রি হয়। এটা যদি কোম্পানিগুলো সংগ্রহ করে তাহলে পরিবেশের ক্ষতি নিয়ন্ত্রণ হয়। এসব প্লাস্টিক পণ্য যেখানে সেখানে ফেলে রাখা হবে না। এটা পরিবেশ অধিদপ্তর বা পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় দায়িত্ব নিতে পারে। প্রয়োজনে আইনের প্রয়োগ করতে পারে।

আরেকটি বিষয় হচ্ছে প্রচারের মাধ্যমে সচেতনতা বৃদ্ধি। পরিবেশ অধিদপ্তর এ ধরনের একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছিল। চ্যানেল আইতে ৫০/৫২ টি টকশো করেছিল। কিন্তু আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি- এর কোনো ভ্যাুলু নাই। ক’জন টকশো দেখেন। আমি মনে করি গ্রামে-গঞ্জে আগে যেরকম মোবাইল ভ্যান নিয়ে প্রচারণা চালানো হতো- এরকম প্রচারণা করা উচিৎ।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭