ইনসাইড বাংলাদেশ

ইউনূস ইস্যুতে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র 'টাগ অব ওয়ার'


প্রকাশ: 06/06/2023


Thumbnail

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আগামী নির্বাচন নিয়ে যেমন করে সরকারকে চেপে ধরতে চাইছে ঠিক এমনিভাবে নির্বাচনের আগে ইউনূসও অনেকগুলো জটিল-কঠিন আইনগত চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছেন। ইউনূসকে মনে করা হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতীভূ প্রতীক। আর এ কারণেই সরকারের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যত চাপ দিচ্ছে ততই ইউনূসের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ গুলোর আইনি প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করা হচ্ছে এমনটি মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। নির্বাচনের আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের ইউনূস ইস্যুতে রীতিমতো 'টাগ অব ওয়ার' চলছে। 

আজ তৃতীয় শ্রম আদালত জানিয়ে দিয়েছে যে শান্তিতে নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলা চলবে এবং এই বিচার কার্যক্রম শুরু করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আদালতে সশরীরে হাজির হয়েছিলেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সাংবাদিকরা তাকে প্রশ্ন করেছিল কিন্তু কোন প্রশ্নের উত্তর তিনি দেননি। এরপরই প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এবং আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে বৈঠক করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস এবং তারা সেখানে বাংরাদেশের শ্রম আইন নিয়ে কথা বলেন। সাম্প্রতিক সময়ে উপর্যুপরি তৃতীয়বারের মতো আইনি জটিলতার মুখোমুখি হলেন গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রাখা এই অর্থনীতিবিদ। 

উল্লেখ্য যে এর আগে দুর্নীতি দমন কমিশন ইউনূসের বিরুদ্ধে অর্থপাচার মামলার তদন্ত শুরুর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এখন ইউনূসকে এই তদন্তের মুখোমুখি হতে হবে। তদন্তকারী দল চাইলে ড. ইউনূসকে জিজ্ঞাসাবাদও করতে পারে। অন্যদিকে হাইকোর্টে ইউনূসের কর ফাঁকির মামলায় সরকারের পক্ষে রায় হয়েছে। ড. ইউনূস এই মামলায় হেরে গেছেন। ফলে ইউনূসকে অতিরিক্ত ১২ কোটি টাকা আয়কর পরিশোধ করতে হবে। এই রায়ের বিরুদ্ধে ইউনূস আপিল বিভাগে আপিল করবেন কিনা তা এখন পর্যন্ত জানা যায়নি। অন্যদিকে আজ শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলার বিচার শুরু করার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। ফলে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে মামলায় কি 'চিড়ে চ্যাপ্টা' হওয়ার অবস্থা হচ্ছে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের। 

কোনো কোনো রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যেহেতু আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে এক ধরনের বাড়াবাড়ি করছে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে এবারের জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে অতি উৎসাহী দেখা যাচ্ছে সে কারণেই ড. ইউনূসের আইনি জটিলতা গুলোকে সরকার সামনে নিয়ে আসতে চাইছে। এটি সকলেরই জানা যে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটা ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে তিনি একজন অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাকে সবোর্চ্চ রাষ্ট্রীয় খেতাবে পর্যন্ত ভূষিত করেছে। ডেমোক্র্যাট দলের সঙ্গে ড. ইউনূস অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ এবং জো বাইডেনের সঙ্গেও তার ব্যক্তিগত সখ্যতা রয়েছে বলে জানা যায়। আর এ কারণেই ড. ইউনূস মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে প্রভাবিত করছেন সরকারের বিরুদ্ধে। 

সরকারের বিভিন্ন মহল থেকে অভিযোগ করা হয় যে পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন না করার জন্য বিশ্বব্যাংকে প্ররোচিত করার ক্ষেত্রে ড. ইউনূস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। সেই সময় মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের মাধ্যমে বিশ্বব্যাংককে প্রভাবিত করার ক্ষেত্রে ইউনূস চিঠি লিখেছিলেন এমন অভিযোগ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক ভাবে করা হয়। যদিও ড. ইউনূস এটি আত্মপক্ষ সমর্থন করেছেন। ইউনূস সেন্টারের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে এই ধরনের অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। কিন্তু অভিযোগ অস্বীকার করা হোক না হোক ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে এই অভিযোগটি আওয়ামী লীগের বহু চর্চিত বিষয়। পাশাপাশি আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা মনে করেন যে এক-এগোরো আনার ক্ষেত্রে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ এবং তিনি মাইনাস ফর্মুলা অন্যতম প্রবক্তা। নোবেল শান্তিতে নোবেল জয়ের পর তিনি বাংলাদেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ বিএনপিকে মাইনাস করে নিজে নেতৃত্ব চেয়েছিলেন। আর এ সমস্ত কারণে ড. ইউনূসের সঙ্গে আওয়ামী লীগের যে একটা দূরত্ব রয়েছে এবং এবং একটি সাংঘর্ষিক অবস্থা রয়েছে সেটা কারো অজানা নয়। আর তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটছে এখন। কিন্তু এর ফলে বাংলাদেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে যে স্নায়ুযুদ্ধ আরও জোরদার হয়েছে। 


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭