ইনসাইড পলিটিক্স

হঠাৎ কেন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে বিএনপি


প্রকাশ: 07/06/2023


Thumbnail

১৬ বছরের বেশি সময় ধরে দলটি ক্ষমতার বাইরে। গত এক যুগ ধরে সরকার হটানোর নানা রকম আন্দোলনে ব্যর্থ হয়েছে। দলটির শীর্ষ নেতা দুটি মামলায় দণ্ডিত হয়ে দুই বছরের বেশি সময় কারাগারে ছিলেন। এখন তিনি সরকারের কৃপায় বিশেষ বিবেচনায় তার নিজ বাসভবনে থাকার অনুমতি পেয়েছেন। দলের দ্বিতীয় শীর্ষ নেতা বিভিন্ন মামলায় দণ্ডিত এবং লন্ডনে পলাতক। এরকম একটি হতশ্রী অবস্থায় থাকা রাজনৈতিক দলটি হঠাৎ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। দেশে-বিদেশে তাদের নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। রাজনৈতিক অঙ্গনে এখন এমন একটা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে যেন মনে করা হচ্ছে বিএনপি নির্বাচনে না এলে গণতন্ত্র ধ্বংস হয়ে যাবে, দেশে মহাভারত অশুদ্ধ হবে এবং বাংলাদেশের ওপর নানারকম নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে। আর এই সমস্ত বক্তব্যে ঘাবড়ে গিয়ে আওয়ামী লীগের নেতারাও এখন একের পর এক বেফাঁস মন্তব্য করছেন। বিএনপি বাংলাদেশের রাজনীতিতে যেন পুনর্জন্ম লাভ করছে। কেন এমনটি ঘটছে সেটি রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা নানা ভাবে ব্যাখ্যা করছেন।

প্রথমত, রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ বিরোধী, স্বাধীনতাবিরোধী, মুক্তিযুদ্ধবিরোধী যে রাজনৈতিক ধারা সেই রাজনৈতিক ধারার মূল সংগঠন হলো বিএনপি। কাজেই পশ্চিমা দেশগুলো যেকোনো মূল্যে তথাকথিত রাজনৈতিক ভারসাম্যের নামে বিএনপিকে টিকিয়ে রাখতে চায়। আগামী নির্বাচনে বিএনপি না আসলে বিএনপি বিলীন হয়ে যাবে আর বিএনপিকে আনার জন্য তারা নানারকম চাপ প্রয়োগ করছেন। বিশেষত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন সুস্পষ্টভাবে বিএনপির পক্ষে একটি অবস্থান নিয়েছে। তারা মনে করছে যে, বিএনপি যদি নির্বাচনে না আসে তাহলে সেই নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবেনা। আর অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন না হলে সেই নির্বাচন তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। আর এ কারণেই মার্কিন আদরে, আপ্যায়নে পৃষ্ঠপোষকতায় বিএনপি এখন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বিএনপি বুঝতে পেরেছে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্র আগামী নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ চায়। তাই শিশুর মতো তারা বায়না ধরে  তাদের দাবিতে অটল থাকছে। তারা বলছে যে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া কোনো নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে না।

সরকারের ব্যর্থতা: সরকার গত ১৪ বছরে যা কিছু অর্জন করেছিল সাম্প্রতিক সময়ে তার প্রায় সবই বিসর্জনের মুখোমুখি আছে। মানুষের কাছে পদ্মা সেতু, মেট্রো রেল, কর্ণফুলী টানেল এখন বিবর্ণ ঝাপসা ফ্যাকাশে হয়ে যাচ্ছে। বরং ভয়াবহ লোডশেডিং আর দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির চাপে মানুষ পিষ্ট হচ্ছে। প্রতিনিয়ত মানুষ এখন বাঁচার জন্য লড়াই করছে। তীব্র গরম, অসহনীয় লোডশেডিং এর ফলে সরকারের উন্নয়নের ফানুসগুলো এখন চুপসে যেতে শুরু করেছে। যে কারণেই বিএনপি মনে করছে যে সরকারবিরোধী আন্দোলনের এখনই সময়। তারা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

এক-এগোরোর চক্র: এক-এগোরোর যে কুশলীবরা ছিল যারা আওয়ামী লীগ-বিএনপির মধ্যে একটা ফ্যাসাদ বাধিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা নেয়ার জন্য সবসময় সচেষ্ট, যারা বাংলাদেশে বিরাজনীতিকরণের চর্চা করতে বদ্ধপরিকর তারা আবার মাঠে নেমেছে এবং আওয়ামী লীগের জন্য একটা প্রতিপক্ষ দরকার। বিএনপি যদি মৃত্যুমুখে পতিত হয় তাহলে তো আওয়ামী লীগ হয়ে যায় প্রতিপক্ষ হীন। এরকম অবস্থায় সুশীলদের ক্ষমতারোহনের পথ চিরতরে বন্ধ হয়ে যাবে। আর এ কারণেই এখন বিএনপিকে সুস্থ সবল করে তোলার মিশনে নেমেছে সুশীলসমাজ। 

আওয়ামী লীগের একটি অংশ: আওয়ামী লীগের নেতারা অবিরত মুমূর্ষ প্রায় বিএনপিকে গালাগালি করে তাদের প্রতিপক্ষ বানিয়ে রাজনীতির মাঠে বিএনপিকে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে। ২০১৪ নির্বাচনের পর এবং ২০১৮ তে বেগম খালেদা জিয়া গ্রেফতার হওয়ার পর বিএনপি একটি মুমূর্ষু দলে পরিণত হয়েছিল। আওয়ামী লীগের নেতারা জেনে না বুঝে কথা কথার ঝংকারে বিএনপির ঘুম ভাঙ্গিয়ে দিয়েছে। ফলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিএনপি এখন আবার গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। তারা এখন বাংলাদেশের নির্বাচন কিভাবে হবে না হবে তা নির্ধারণের অন্যতম নিয়ামক শক্তিতে পরিণত হয়েছে। আওয়ামী লীগের কিছু কিছু নেতাও এখন নতজানু হয়ে বিএনপির কাছে সংলাপ ভিক্ষা চাইছেন। আর সেই সংলাপে বিএনপি যাবে কি-না তা বিএনপি আরাম-আয়েশে চিন্তা করবে কিংবা বিএনপি জানে যে সরকার চাপে পড়েছে সেজন্য তারা সরকারকে আরেকটু নতজানু করানোর চেষ্টা করবে। রাজনীতির এই কৌশলের খেলায় বিএনপি জিতল না হারলো সেটি সামনের দিনগুলোতেই প্রমাণ পাওয়া যাবে। 


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭