ইনসাইড থট

শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই এগিয়ে যাবে; মাথা নোয়াবে না বাংলাদেশ


প্রকাশ: 08/06/2023


Thumbnail

গত ৫ জুন ২০২৩ প্রকাশিত একটি জাতীয় দৈনিকে জনপ্রিয় সিনিয়র কলামিস্ট ও মেধাবী সাংবাদিক সৈয়দ বোরহান কবীর তাঁর একটি লেখার শিরোনামে প্রশ্ন রেখেছেন, ‘এরদোয়ান পেরেছেন, শেখ হাসিনা কি পারবেন?’ 

দেশ ও দেশের মানুষের বিরুদ্ধে যখনই দেশী-বিদেশী কোন শক্তি ষড়যন্ত্র শুরু করে, সেই অশুভ শক্তি যত শক্তিশালীই হউক, সেই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে ওঠেন সৈয়দ বোরহান কবীরের লেখনী।

সম্প্রতি তুরস্কের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিলেন রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান।  তুরস্কের জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বর্তমান প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানকে দেশে-বিদেশে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হয়েছে। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী সাময়িকী ‘দ্য ইকোনমিস্টস’ একটি তাৎপর্যপূর্ণ পূর্বাভাস দিয়েছে, ‘তুরস্কের রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের মতো নিজ দেশে নির্বাচনের পর বাংলাদেশে আবারও শেখ হাসিনা এবং ভারতে নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতাসীন হতে পারেন।’

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আদর্শিকভাবে সম্পূর্ণ বিপরীত মেরুতে অবস্থান করলেও দুই নেতারই রাজনীতির প্রধান লক্ষ্য দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন। দুজনই তাদের মেয়াদে নিজেদের দেশকে অর্থনৈতিকভাবে ঈর্ষণীয় জায়গায় নিয়ে গেছেন।

বিশ্বের কোন দেশ যখনই অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে শুরু করে, তখনই পশ্চিমা বিশ্বের হস্তক্ষেপ শুরু হয়। ঐ সকল দেশগুলোর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করে। বিশ্বজুড়ে কোন দেশে  যখনই মার্কিন স্বার্থ ক্ষুন্ন হয়, তখন যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন ‘গণতন্ত্র’ রক্ষার কথা বলে সেসব দেশের ‘সরকার পতন’ এর ষড়যন্ত্র শুরু করে। এক্ষেত্রে উল্লেখ করা যেতে পারে কিউবা, ইরাক এবং ক্যারিবিয়ান দেশগুলোর কথা। এসব দেশের ক্ষেত্রে মার্কিন সংশ্লিষ্টতা বা কলকাঠি নাড়ার মাত্রা অনেকটাই সরাসরি ছিল।

কথায় আছে না, ‘ঝাঁজইরে বলে সূচকে, তোর পাছায় একটা ছিদ্র’। কিন্তু ঝাজড় নিজের প্রতিচ্ছবি দেখে না। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের নিজের দেশের নির্বাচনই প্রশ্নবিদ্ধ। অথচ পশ্চিমা এই পরাশক্তি বাংলাদেশের নির্বাচন ও গণতন্ত্র নিয়ে কথা বলে, নিত্য সবক দেয়, কিন্তু নিজের দেশের নির্বাচন ও আইনশৃঙ্খলার বিষয়ে উদাসীন।

তুরস্কের মত বাংলাদেশেও আওয়ামী লীগ সরকার এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সব ধরনের চাপ দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। গত দুই বছর ধরে এ চাপ ক্রমেই বাড়াচ্ছে। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ এনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য বারবার সতর্কবার্তা দিচ্ছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের কর্মকর্তারা। সর্বশেষ আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করেছে। বিষয়টি নিয়ে ভারতীয় লেখক ও ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশনের ফেলো রামি দেশাই ভারতীয় একটি প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যমে একটি নিবন্ধে লিখেছেন, বাংলাদেশ গোটা বিশ্বের কাছে স্বশাসনকামী, মুক্তিকামী, স্বাধীনতাকামী মানুষের প্রত্যাশা পূরণের এক প্রতীক। নির্বাচনের নামগন্ধবিহীন মায়ানমারে সেনা শাসকেরা গণতন্ত্রকামী সাধারণ মানুষের উপর অমানবিক নির্যাতন, নৃশংস হত্যাকাণ্ড ও প্রতিবাদ সমাবেশে বিমান থেকে বোমা ফেলে মানুষ হত্যা করা সত্ত্বেও আমেরিকা নীরব। মায়ানমারে গণতন্ত্র, মানবাধিকারকে গলা টিপে মারা হচ্ছে। অথচ সেখানকার গণতন্ত্র ও  মানবাধিকার নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নীরব। আর বাংলাদেশকে বেছে নিয়েছেন তাঁদের গণতন্ত্র, মানবাধিকারের ঝাণ্ডা ওড়াতে। তবে আমেরিকার আসল উদ্দেশ্য ভিন্ন।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পশ্চিম পাকিস্তানের সামরিক স্বৈরাচারী শাসনকে সমর্থন করেছিল। সেই যুদ্ধে তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী শুধু বাংলাদেশের মুক্তিকামী মানুষের আকাঙ্ক্ষাকে গলা টিপে হত্যা করতে চাননি, পাকিস্তানি বাহিনীর নৃশংসতাকে দিনের পর দিন প্রশ্রয় দিয়েছেন। কূটনীতির যাবতীয় শিষ্টাচার অগ্রাহ্য করে পাকিস্তানের জয় চেয়েছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানকে সাহায্য করতে ভারত মহাসাগরে নৌবহর পাঠিয়েছিল। স্বাধীনতার পর সেন্টমার্টিন দ্বীপে মার্কিন ঘাঁটি স্থাপন করতে চেয়েছিল। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাহসী ও দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণেই আমরা স্বাধীন বাংলাদেশ পেয়েছি এবং আমেরিকানরা বঙ্গোপসাগরে সামরিক ঘাঁটি স্থাপন করতে ব্যর্থ হয়েছিল। বিশেষ্ণজ্ঞরা মনে করেন সেই পুরনো পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যেই এই চাপ।

তুরস্কের রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের ন্যায় বাংলাদেশেও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনপ্রিয়তায় অপ্রতিদ্বন্দ্বী। টানা ১৪ বছরেরও বেশি তিনি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে। স্বাধীনতার পর গত ৫২ বছরের মধ্যে  প্রায় ২০ বছর প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন শেখ হাসিনা।  বাংলাদেশকে নিয়ে গেছেন অনন্য এক উচ্চতায়। একটি দরিদ্র ও পরনির্ভর রাষ্ট্রের অর্থনীতিকে তিনি বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত করেছেন। আশ্রায়ণ প্রকল্প, কমিউনিটি ক্লিনিক; একটি বাড়ি একটি খামার -এর মতো সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিগুলো দেশ-বিদেশে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছে। পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেল, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের থার্ড টার্মিনাল প্রকল্প, রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পের মতো মেগা প্রকল্পের মাধ্যমে তিনি বাংলাদেশকে বদলে দিয়েছেন। শেখ হাসিনাকে বলা হয় আধুনিক উন্নয়নের মহাসড়কে দ্রুত ধাবমান একটি সম্ভাবনাময় রাষ্ট্রের নির্মাতা। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতার মাধ্যমে তিনি স্বনির্ভর বাংলাদেশের স্বপ্নপূরণ করেছেন। 

বিশ্বরাজনীতিতেও শেখ হাসিনা উজ্জ্বল। তার ‘বিশ্ব শান্তির মডেল’ এবং ‘কমিউনিটি ক্লিনিক’, ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ জাতিসংঘে সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয়। তিনিই একমাত্র সরকারপ্রধান—যার দুটি উদ্ভাবনী দর্শন জাতিসংঘে গৃহীত হয়েছে। পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রেও নতজানু না থেকে দেশের স্বার্থকে প্রাধান্য দিচ্ছেন শেখ হাসিনা। মায়ানমারের ১০ লাখ রোহিঙ্গাকে মানবিক কারণে বাংলাদেশে আশ্রয় দিয়ে শেখ হাসিনা ‘বিশ্বমানবতার’ প্রতীক ‘বিশ্বনেতা’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন।

মার্কিন চাপে নতজানু না হওয়ার কারণে শেখ হাসিনা বিশ্বে আলোচিত। জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর একক নেতা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে অবাধ ও নিরপেক্ষ করার নিশ্চয়তা প্রদান করেছেন। নির্বাচন পর্যবেক্ষণের বিদেশী পর্যবেক্ষকদের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। শেখ হাসিনা জনগণের নেত্রী। জনগণই তার আসল শক্তি। জনগণের শক্তিতে বলীয়ান হয়ে স্রোতের বিপরীতে দেশী-বিদেশী শত্রুর বিরুদ্ধে লড়ছেন তিনি। বাংলাদেশের জনগণের আছে অফুরন্ত প্রাণশক্তি। বাঙালি জাতি পরাভব মানে না। বাংলাদেশে এখন অসাংবিধানিক অশুভ শক্তিকে প্রতিহত করে গণতন্ত্র রক্ষার লড়াই চলছে।  সংবিধান সমুন্নত রেখে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার এ লড়াইয়ে শেখ হাসিনাকে অবশ্যই জিততেই হবে।

একই সাথে বাংলাদেশের জনগণের বিজয় হবেই হবে, ইনশাআল্লাহ।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭