ইনসাইড পলিটিক্স

আমুর জাতিসংঘ ভাবনা কি নিছকই বিভ্রান্তি?


প্রকাশ: 08/06/2023


Thumbnail

আমির হোসেন আমু আওয়ামী লীগের রাজনীতির এক হেভিওয়েট। কিন্তু এক-এগোরোর পর তার রাজনৈতিক বিভ্রান্তি রাজনীতির মূল ধারা থেকে তাকে ছিটকে দেয়। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য পদ হারান। ২০০৯ সালের মন্ত্রীসভায় তিনি অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না। ২০১৪ সালের মন্ত্রিসভায় তাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। কিন্তু একসময় আওয়ামী লীগ সভাপতির সবচেয়ে বিশ্বস্ত ব্যক্তিটি এখন রাজনীতিতে অনেকটা অপাংক্তেয়। মোহাম্মদ নাসিমের মৃত্যুর পর ১৪ দলের সমন্বয়কারী হয়েছেন আমির হোসেন আমু। কিন্তু সমন্বয়কের দায়িত্ব গ্রহণ করেও তিনি তেমন সাফল্যের পরিচয় দেয়নি। ১৪ দল তার নেতৃত্বে অনেকটা নিষ্ক্রিয় ছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই তিনি যেন জেগে উঠলেন। 

সম্প্রতি তার একটি বক্তব্য নিয়ে রাজনীতির অঙ্গনে হুলস্থুল চলছে। গত ৬ জুন তিনি ১৪ দলের এক সমাবেশে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বিএনপির সঙ্গে আলোচনার কথা বলেন এবং আলোচনার জন্য জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় কথা উল্লেখ করেন। তার এই বক্তব্য রাজনীতিতে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছিল। অনেকে মনে করেছিল যেহেতু আমির হোসেন আমু আওয়ামী লীগের একজন প্রভাবশালী নেতা শেখ হাসিনার সঙ্গে তার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে এ কারণে হয়তো আওয়ামী লীগ সভাপতির অভিপ্রায় তিনি প্রকাশ করেছেন। কিন্তু পরদিন ৭ জুন উপলক্ষে আয়োজিত জনসভায় দেখা গেল সম্পূর্ণ ইউটার্ন নিলেন আমির হোসেন আমু। তিনি জানিয়ে দিলেন যে, কোন ধরনের আলোচনা হবে না। বাসায় দাওয়াত দিয়ে বিএনপির সঙ্গে আলোচনা করতে হবে কিনা এমন প্রশ্ন তিনি উত্থাপন করেছিলেন। হঠাৎ করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কেন উল্টো পথে হাঁটলেন আমির হোসেন আমু। 

আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বলছেন, আমির হোসেন আমুর এ বক্তব্যের পর রাজনীতির অঙ্গনে তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়। আওয়ামী লীগ সভাপতি এটিকে ভালোভাবে নেননি। তিনি সরাসরি আমির হোসেন আমুর সঙ্গে এ নিয়ে কথাও বলেছেন। এই কথার পরই আমির হোসেন আমু সুর পাল্টেছেন বলে বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে। কিন্তু প্রশ্ন সে জায়গায় নয়। প্রশ্ন হলো হঠাৎ করে এত দিন পর আমির হোসেন আমু কেন রাজনীতির পাদ্যপ্রদীপে এলেন। আর কেনইবা এরকম একটি বক্তব্য দিলেন। এটি কি নিছকই ভ্রান্তি? রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন যে তিনটি কারণে তিনি এটা দিতে পারেন। 

প্রথমত, একজন রাজনৈতিক নেতা হিসেবে তার নিজস্ব ভাবনা থাকতেই পারে। যেমনটি হাছান মাহমুদ বলেছেন যে, এটা আমির হোসেন আমুর ব্যক্তিগত ভাবনা। ব্যক্তিগত অভিপ্রায় থেকে তিনি এটা বলতে পারেন। এটি তার চিন্তা। বর্তমান রাজনৈতিক সঙ্কটের একটি সমাধান দরকার। এ সমাধান হতে পারে সংলাপের মাধ্যমে এবং বিএনপি যেহেতু সংলাপে আগ্রহী নয় সেজন্য এই সংলাপ করার ক্ষেত্রে জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় হতে পারে। একজন রাজনৈতিক নেতার নিজস্ব ব্যক্তিগত মত থাকতেই পারে এবং সেই মত সবসময় যে দলের মতের সাথে অভিন্ন হবে বা একই রকম হবে এমনটি ভাবার কোন কারন নাই। 

দ্বিতীয়ত, আমির হোসেন আমু নিছকই ভ্রান্তির ছলে এ ধরনের বক্তব্য দিয়েছেন। কিন্তু আমির হোসেন আমুর মতো এত বড় মাপের একজন রাজনৈতিক নেতা নিছকই ভ্রান্তির কারণে বা ভুলে এ ধরনের বক্তব্য দিবেন এমন ভাবার কোন কারন নাই। এটা মতামতকে কেউ সমর্থনও করে না।

তৃতীয়ত, কোন বিশেষ মহলের ইঙ্গিতে আমির হোসেন আমুর এ বক্তব্য দিয়েছেন বলে অনেকে মনে করেন। বাংলাদেশের রাজনীতিতে এখন পশ্চিমা কূটনীতিকদের নানারকম তৎপরতা চলছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন কিভাবে হবে তা নিয়ে বিভিন্ন কূটনীতিক বক্তব্য আমরা দেখতে পাচ্ছি। আওয়ামী লীগ-বিএনপি এ নিয়ে পরস্পরবিরোধী অবস্থানে রয়েছে। আমির হোসেন আমু কি তাহলে কারো মুখপাত্র হয়ে এই বিষয়টি উত্থাপন করলেন? 

আমরা এক-এগোরোর সময় দেখেছি যে, আমির হোসেন আমু তার অসুস্থ স্ত্রীকে সিঙ্গাপুরে রেখে ঢাকায় এসে সংস্কার প্রস্তাব উত্থাপন করেছিলেন। পরবর্তীতে জানা গিয়েছিল যে এই সংস্কার আসলে তার ছিল না। এটি তৎকালীন এক-এগারোর কুশীলবদের প্রস্তুতকৃত একটি প্রস্তাব তিনি পাঠ করেছিলেন। সেরকম কোন মহলের ইঙ্গিতে কি আমির হোসেন আমুর হঠাৎ করে এই প্রস্তাব উত্থাপন করলেন? এ নিয়ে এখন রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা আলাপ-আলোচনা চলছে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭