ইনসাইড পলিটিক্স

জিয়া পরিবার মুক্ত বিএনপি: ফখরুলের 'হ্যাঁ', খসরুর 'না'


প্রকাশ: 08/06/2023


Thumbnail

কূটনীতিকদের সঙ্গে এখন বিএনপির দারুণ সখ্যতা। প্রতিদিনই বিএনপির কোন না কোন নেতা কোন না কোন দূতাবাসে যাচ্ছেন। কোন না কোন রাষ্ট্রদূতের সাথে মধ্যাহ্নভোজ অথবা নৈশভোজ করছেন। বিএনপি এখন মূল আস্থার জায়গা হলো মার্কিন দূতাবাস সহ পশ্চিমা দেশের দূতাবাস গুলো। কিন্তু এই দূতাবাসগুলো কি বিএনপিকে ক্ষমতায় আনবে? প্রধানমন্ত্রী গতকাল বলেছেন যে বিদেশীরা বিএনপিকে ক্ষমতায় আনতে পারবে না। যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেন এবং রাজনীতি সম্পর্কে নূন্যতম ওয়াকিবহল তারা জানেন যে একটি রাজনৈতিক দলকে ক্ষমতায় আনতে পারে একমাত্র জনগণ, অন্য কেউ নয়। তারপরও বিএনপি সরকারের ওপর একটি চাপ প্রয়োগের কৌশল হিসেবে কূটনীতিকদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্ঠা করছে। শুধু দেশেই নয়, বিদেশেও লবিস্ট নিয়োগ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে বাংলাদেশ বিরোধী একটি অবস্থানে দেয়ার ক্ষেত্রে বিএনপির নিরন্তর চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। কিন্তু এই সময় হঠাৎ করেই একটি একটি প্রস্তাব বিএনপির মধ্যে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। 

উল্লেখ্য যে, মার্কিন কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠকের কোন একপর্যায়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে যেহেতু বেগম খালেদা জিয়া এখন রাজনীতি করছেন না। এক রকম কারাগারে রয়েছেন। তারেক জিয়া বিদেশে রয়েছেন। কাজেই বিএনপির নেতা কে? এর উত্তরে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তাকে নেতা বলেছিলেন। বিএনপি নির্বাচনে জিতলে ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রধানমন্ত্রী হবেন এমন বক্তব্য বিএনপির পক্ষ থেকে দেয়া হয়েছে। পরবর্তী প্রশ্ন ছিল তাহলে বিএনপি কি জিয়া পরিবার থেকে নিজেদেরকে মুক্ত রাখতে পারবে? এর উত্তর মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন 'হ্যাঁ' কিন্তু বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ বলেছেন 'না'। আর এ নিয়ে এখন বিএনপিতে তর্ক-বিতর্ক চলছে। 

একাধিক সূত্র বলছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশের কূটনীতিকরা মনে করছেন যে আওয়ামী লীগের বিকল্প হতে পারে বিএনপি। যদি বিএনপি জিয়া পরিবার মুক্ত হয়। জিয়া পরিবারের কেউ বিএনপির নেতৃত্বে থাকবেন না, মন্ত্রিসভার সদস্য থাকবেন না এমন একটি শর্তে আগামী নির্বাচনে বিএনপিকে আনার বন্দোবস্ত করার আশ্বাস দিচ্ছেন কোন কোন দেশের কূটনীতিকরা। তারা মনে করছেন যে জিয়া পরিবার তন্ত্র বিএনপিতে আছে তা যদি বহাল থাকে তাহলে বিএনপি যদি আবার ক্ষমতায় আসে তাহলে পর পরিস্থিতি এখনকার চেয়েও খারাপ হবে। ২০০১ থেকে ২০০৬ অভিজ্ঞতার আলোকে কোন কোন দেশের কূটনীতিকরা বিএনপির কাছ থেকে আগে মুচলেকা চাইছে যে তারা যদি নির্বাচনে জয়ী হয় বা ক্ষমতায় আসে তাহলে কোন অবস্থাতেই জিয়া পরিবারকে রাজনীতিতে সম্পৃক্ত করা হবে না। বিএনপিকে তারা একটি বিজেপি আদলে রাজনৈতিক দল হিসেবে দেখতে চায়। যে রাজনৈতিক দলে উত্তরাধিকারসূত্রে কোন নেতা তৈরি হবেন না। বরং যারা সক্রিয় রাজনীতির সঙ্গে জড়িত এবং রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে নিজেদেরকে ব্যস্ত রেখেছেন তাদের মধ্যে থেকে নেতৃত্ব নির্বাচন করা হবে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে। 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর যে সুশাসন এবং গণতন্ত্রের ভাবনা সেই ভাবনার মধ্যে একটি বড় ভাবনা হলে দলগুলোর মধ্যে অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র চর্চা। আর এ কারণে তারা একান্ত অনুগত হিসেবে যেহেতু বিএনপিকে এখন পেয়েছে তাই বিএনপির ওপরই এই নিরীক্ষাটা করতে চায়। বিএনপির মধ্যে এ নিয়ে দুই ধরনের প্রতিক্রিয়া আছে। যেমনটি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তিনি এখন তারেক জিয়া, খালেদা জিয়া মুক্ত অর্থাৎ জিয়া পরিবার মুক্ত বিএনপির পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। তিনি সুশীল সমাজের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রাখছেন এবং তার পক্ষের লোকেরা মনে করছেন যে এই কৌশলটি অবলম্বন না করলে পশ্চিমা দেশের আস্থা পাওয়া যাবে না। অন্যদিকে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী সহ বিএনপির একটি বড় অংশই মনে করছেন যে, জিয়াউর রহমানের পরিবারের কাউকে না কাউকে বিএনপিতে থাকতে হবে। যদি তারা না থাকেন তাহলে বিএনপির অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে। এরকম একটি পরিস্থিতির মধ্যে বিএনপি এখন আন্দোলন করবে না জিয়া পরিবার মুক্ত বিএনপি গঠন করবে? এটি বিএনপিকে নতুন করে আরেকটি ভাঙনের দিকে নিয়ে যাবে কিনা সেটাই দেখার বিষয়। 


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭