ইনসাইড পলিটিক্স

আওয়ামী লীগে আবার ষড়যন্ত্রকারীদের তৎপরতা?


প্রকাশ: 08/06/2023


Thumbnail

আওয়ামী লীগের ইতিহাস বলে আওয়ামী লীগ কখনো বাইরে শত্রুর কাছে পরাজিত হয় না। আওয়ামী লীগ যতবার বিপর্যস্ত হয়েছে, সংকটে পড়েছে ততোবারই দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল এবং ষড়যন্ত্রের কারণে সেটি হচ্ছে। ১৯৭৫ সালের পনেরোই আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নির্মমভাবে হত্যা করে স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি। জাতির পিতার হত্যাকাণ্ডের পেছনে জাতীয় আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র ছিল এটা যেমন সত্যি তেমনি এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত ছিল আওয়ামী লীগের একটি মহল। খুনি মোশতাক এর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের একটি অংশ পঁচাত্তরের পনেরোই আগস্টের ঘটনার ষড়যন্ত্রের নেপথ্যে কলকাঠি নেড়েছিল। জাতির পিতার হত্যার পর তার লাশের উপর দিয়ে মন্ত্রিসভায় যোগ দেন বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভার প্রায় অধিকাংশ সদস্যই। আর পঁচাত্তরের পরে আওয়ামী লীগ ছিল ক্ষত-বিক্ষত, বহুধাবিভক্ত।

১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগ সভাপতি আসার পর তাকেও ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করতে হয়। ষড়যন্ত্রের কারণে আওয়ামী লীগ ভাগ হয়ে যায়। আব্দুর রাজ্জাকের নেতৃত্বে একটি বড় অংশ বেরিয়ে বাকশাল গঠন করেন। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পরাজিত হয় অভ্যন্তরীণ সংকটের কারণে। আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ ষড়যন্ত্রের সবচেয়ে বড় প্রামাণ্য দলিল হল এক-এগারো। এই সময় আওয়ামী লীগের মধ্যে মাইনাস ফর্মুলা প্রবর্তন করেন কেউ কেউ। তারা শেখ হাসিনাকে রাজনীতি থেকে চিরবিদায় করার জন্য ষড়যন্ত্র করেন এবং সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাথে হাত মিলিয়ে সংস্কার প্রস্তাবও উপস্থাপন করেছিলেন। এরপর জনগণের ভালোবাসায় এবং তৃণমূলের কর্মীদের বিপুল সমর্থনে শেখ হাসিনা সমস্ত ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে ২০০৮ এর নির্বাচনে হবে বিজয়ী হন। দীর্ঘ ১৪ বছরের বেশি সময় ধরে তিনি দেশ পরিচালনা করছেন। এখন নির্বাচনের আগে নতুন করে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। অবশ্য এই ১৪ বছরে যে ষড়যন্ত্র হয়নি এমনকি নয়। 

সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী সে ব্যাপারে ইঙ্গিতও করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনের সময় রাষ্ট্রপতিকে অনেক আওয়ামী লীগের নেতা এসে ভুল পরামর্শ দিয়েছিল এবং অন্য কিছু করার জন্য প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু সেই প্রস্তাবে রাজি হননি আবদুল হামিদ। এখন আবার নির্বাচনের আগে নতুন করে ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। হঠাৎ করে আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে স্লিপ অব টাং বা বেফাঁস কথা বার্তা বলার প্রবণতা বেড়ে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রী আইনমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের কথা বলেছেন। তার পরই তিনি এটিকে স্লিপ অব টাং হিসেবে উল্লেখ করেছেন। শুধুমাত্র স্লিপ অব টাং এরকম বড় ধরনের ভুল করতে পারেন? 

সাম্প্রতিক সময়ে আওয়ামী লীগের আরেক প্রভাবশালী নেতা আমির হোসেন আমু জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় সংলাপের কথা বলেছেন। এটি নিয়েও আওয়ামী লীগের মধ্যে হইচই চলছে। আওয়ামী লীগের উঠতি কিছু নেতা নিয়মিত মার্কিন দূতাবাসে যান। আওয়ামী লীগের একজন আন্তর্জাতিক সম্পাদক আছে, বৈদেশিক বিষয় দেখার জন্য একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য আছেন। কর্নেল অবসরপ্রাপ্ত ফারুক খান এবং শাম্মী আক্তারই বিদেশি কূটনীতিকদের সাথে সব রকমের যোগাযোগ করার কথা। কিন্তু হঠাৎ করে আওয়ামী লীগের একজন নেতা বিভিন্ন দূতাবাসে সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়িয়েছেন। বিভিন্ন দূতাবাসে তাকে দেখা যায়। কোন প্রটোকলে এবং কোন ক্ষমতা বলে তিনি সেখানে যাচ্ছেন এ নিয়ে আওয়ামী লীগের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে। 

আওয়ামী লীগের এতো নেতা থাকতে মোহাম্মদ এ. আরাফাতকে কেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিষয়ে বক্তব্য-বিবৃতি দিতে হবে সে নিয়েও আওয়ামী লীগের নেতারা প্রশ্ন তুলেছেন। এরা হঠাৎ করে আওয়ামী লীগার হয়েছেন এবং আওয়ামী লীগার হয়েই বড় বড় পদ পদবী পেয়েছেন। আওয়ামী লীগের ভেতর নানামুখী ভাবনা চিন্তা এবং ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছেন নেতাকর্মীরা। আর তাই তারা আতঙ্কিত। নির্বাচন এলেই আওয়ামী লীগে ষড়যন্ত্র হয়। এবারও তেমন কোনো ষড়যন্ত্র হচ্ছে কিনা এ নিয়ে আওয়ামী লীগের মধ্যে এখন নানামুখী আলোচনা চলছে। 


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭