ইনসাইড পলিটিক্স

হারানো রাজত্ব কি ফিরে পাবেন হাসনাত আবদুল্লাহ?


প্রকাশ: 09/06/2023


Thumbnail

আগামী ১২ জুন সোমবার বরিশাল সিটি করপোরেশনের নির্বাচন। এই নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে অনেক হিসেব নিকেশ হচ্ছে। অনেক মেরুকরণ আছে এই নির্বাচনে। এখন পর্যন্ত নির্বাচনী যে প্রচারণা এবং গতিপ্রকৃতি তাতে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন যে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পরাজয়ের সম্ভাবনা বরিশাল সিটি করপোরেশনে অনেক বেশি। সিটি করপোরেশনে ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী হাতপাখা মার্কা নিয়ে জয়ী হতে পারেন এমন আশঙ্কা করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগ শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত দলের ঐক্য ঠিকঠাক করতে পারেনি। এমনকি আওয়ামী লীগের একটি বড় অংশ নীরবে নীরবে হাতপাখার পক্ষে প্রচারণা করছে এমন খবরও পাওয়া যাচ্ছে। 

অন্যদিকে বিএনপি এই নির্বাচনে নৌকাকে হারিয়ে দেওয়ার এক পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। নৌকার বাইরে যে কোনো প্রার্থীকে বিজয়ী করার জন্য তারা কাজ করছে বলেও জানা গেছে। এরকম পরিস্থিতিতে বরিশাল সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে খোকন সেরনিয়াবাত যদি জয়ী হয় তাহলে সেটি হবে একটি অভাবনীয় ঘটনা। 

সরকার এরই মধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তারা কোনো হস্তক্ষেপ করবে না। নির্বাচন হতে হবে অবাধ সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ। গাজীপুরের মতো এই নির্বাচনেও প্রশাসনকে সুস্পষ্ট বার্তা দেওয়া হয়েছে তারা যেন কোনো অবস্থাতেই নির্বাচনে সরকার দলীয় প্রার্থীকে জয়ী করার কোনো উদ্যোগ গ্রহণ না করে। এ ধরনের কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করলে নির্বাচন কমিশন তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে এমন বার্তাও দেওয়া হয়েছে। কাজেই এটি স্পষ্ট যে বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচন হবে অবাধ-সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ নির্বাচন। কিন্তু এই নির্বাচনে যদি শেষ পর্যন্ত খোকন সেরনিয়াবাত হেরে যান তাহলে কি হবে? 

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই নির্বাচনে যদি শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের প্রার্থী হেরে যান তাহলে পরে লাভ হবে আবুল হাসনাত আবদুল্লাহর। দীর্ঘদিন ধরে বৃহত্তর বরিশালের রাজনীতির মূল ব্যক্তি হিসেবে আছেন আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ। বরিশালের রাজনীতিতে কার কী অবস্থান থাকবে, কোন জেলায় কোন নেতা থাকবেন, কার কতটুকু প্রভাব থাকবে সবই নির্ধারিত হয় আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ মাধ্যমে। তিনি বরিশালের রাজনীতিতে শেষ কথা। কিন্তু তার পুত্র সাদিক আব্দুল্লাহকে মনোনয়ন না দিয়ে বরিশালে হাসানাত আব্দুল্লাহর রাজত্ব ভাঙতে চেয়েছিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। এ কারণেই তিনি সাদিক আব্দুল্লাহর বদলে  খোকন সেরনিয়াবাতকে মনোনয়ন দেন। কিন্তু আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ সেটি মেনে নেননি। 

আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতৃবৃন্দ মনে করছেন যদি শেষ পর্যন্ত খোকন সেরনিয়াবাত হেরে যান তাহলে হারানো রাজত্ব ফিরে পাবেন আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ। খোকন সেরনিয়াবাত হেরে যাওয়ার পর পরই বরিশালে যারা হাসনাত বিরোধী অবস্থান গ্রহণ করেছিল তারা কোণঠাসা হয়ে পড়বে। সাময়িক আনন্দ তাদের মিলিয়ে যাবে। ফলে সামনে নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকদেরকে হাসনাত আবদুল্লাহ ওপরই নির্ভর করতে হবে। আর এটি আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ চাচ্ছেন। 

অন্যদিকে যদি শেষ পর্যন্ত খোকন সেরনিয়াবাত বিজয়ী হন তাহলে হাসনাত রাজত্বের অবসান ঘটবে বরিশালে। এর ফলে খোকন সেরনিয়াবাত এর নেতৃত্বের হাসনাত বিরোধীরা লাইমলাইটে আসবে এবং আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করবে এবং বরিশালের কর্তৃত্ব গ্রহণ করবে। এ রকম বাস্তবতায় বরিশাল নির্বাচনে খোকন সেরনিয়াবাত এর হারাটাই যেন আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। তার হারানো রাজত্ব ফিরে পাওয়ার জন্য এর কোন বিকল্প নাই। এখন দেখার বিষয় যে বরিশালে হাসনাত আব্দুল্লাহ কি আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে হারিয়ে তার হারানো রাজত্ব ফিরে পান নাকি খোকন সেরনিয়াবাতের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের নতুন মেরুকরণ ঘটে। 


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭