ইনসাইড বাংলাদেশ

বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রকে কর্তৃত্ব করতে দেবে না ভারত


প্রকাশ: 09/06/2023


Thumbnail

অবশেষে বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে মুখ খুলেছে ভারত সরকার। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর গতকাল এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের বলেছেন, বিদেশি কিছু রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ বাংলাদেশে আসন্ন নির্বাচনে কোন প্রভাব ফেলবে না। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এটিও বলেছেন, ভারতের ঘোষিত নীতি হচ্ছে কোন দেশের অভ্যন্তরীণ নির্বাচনে হস্তক্ষেপ না করা। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও তাই। সুস্পষ্টভাবে এই বার্তা যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে নিয়েই তা বুঝতে কূটনীতিকদের কোন অসুবিধা হবার কথা নয়। গতকাল ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নয় বছরের সাফল্য তুলে ধরার জন্য সাংবাদিকদেরকে ডেকে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে এরকম মন্তব্য করেন এস জয়শঙ্কর। 

উল্লেখ্য, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই বক্তব্যের পর বাংলাদেশ ইস্যু নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারতের বিপরীতমুখী অবস্থান প্রকাশ্যে এলো। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গত কিছুদিন ধরেই বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে এক রকম চাপ সৃষ্টির চেষ্টা করছিল। বিশেষ করে সর্বশেষ গত ২৪ মে নতুন ভিসা নীতি ঘোষণার মাধ্যমে বাংলাদেশকে রীতিমতো হুমকি দিয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। উল্লেখ্য, এই ভিসা নীতি গ্রহণের আগে সবচেয়ে বড় প্রতিবেশী রাষ্ট্র এবং এই উপমহাদেশে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান মিত্র ভারতের সাথে কোন আলোচনাই করেনি যুক্তরাষ্ট্র। আর এটি ভারত খুব ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করেনি। 

মূলত বাংলাদেশের রাজনীতির ব্যাপারে ভারতের ওপর এতোদিন নির্ভরশীল ছিল যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশের রাজনীতির গতি-প্রকৃতি ব্যাপারে যেরকম ভাবে বার্তা দিতো সেই বার্তাটিকেই যুক্তরাষ্ট্র গ্রহণ করত। এখানে বাংলাদেশের যাতে উগ্র মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক শক্তি দানা বেঁধে না উঠে, বাংলাদেশ যেন সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্পে ক্ষতিগ্রস্থ না হয় সেটি ভারতের পররাষ্ট্রনীতির অন্যতম লক্ষ্য। আর সেই লক্ষ্যের সঙ্গে এতোদিন যুক্তরাষ্ট্র সহমত ছিল। কিন্তু ২০১৮ পর থেকেই পরিস্থিতি পাল্টাতে শুরু করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশের ইস্যুতে নানারকম হস্তক্ষেপ এবং প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করতে থাকে। প্রথমদিকে ভারত এই বিষয়টি নিয়ে তেমন কোন প্রতিক্রিয়া দেখায়নি। 

ভারতের কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, তারা সবসময় মনে করত যে নির্বাচনের সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিশ্চয়ই বাংলাদেশের সঙ্গে অভিন্ন অবস্থান নিয়ে কাজ করবে। কিন্তু এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে আগ্রাসী ভূমিকা পালন করছে তাতে এই অঞ্চলের অসাম্প্রদায়িক চেতনা যেমন হুমকির মুখে পড়তে যাচ্ছে তেমনি উগ্র মৌলবাদী এবং সাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থানের শঙ্কা তৈরি হয়েছে। ফলে ভারত তার অবস্থান গ্রহণ করল। ভারতের এই অবস্থানের ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে যা খুশি তা করতে পারবে না বলে কূটনৈতিক মহল মনে করছেন। কারণ সবচেয়ে নিকটতম প্রতিবেশী এবং বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক দেশ যদি সরাসরি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের বিপরীতে অবস্থান গ্রহণ করে সেক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য একচেটিয়া সবকিছু করা অসম্ভব হয়ে পড়বে। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, ভারত বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে এখন ভিন্ন কৌশল গ্রহণ করবে। তারা একদিকে যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে তার আগ্রাসী ভূমিকা থেকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করবে। ঠিক অন্যদিকে বাংলাদেশে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন যেন সুষ্ঠুভাবে হয় সেই প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করবে। আর তাই বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের যে চাপ সেই চাপ কিছুটা হলেও কমবে এবং যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে যা খুশি তাই করতে পারবে না। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশ নীতিকে ভারত প্রত্যাখ্যান করার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি নতুন মেরুকরণ ঘটল। 

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি খুব শীগ্রই ওয়াশিংটন যাচ্ছেন। তিনি সেখানে কংগ্রেসে ভাষণ দেবেন। বাংলাদেশ নিয়ে ভারতের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা রয়েছে। কারণ কৌশলগত কারণে বাংলাদেশ ভারতের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ‘প্রতিবেশী প্রথম’ এই নীতি দুই দেশের সম্পর্ক অনেক দূর এগিয়েছে। বিশেষ করে বাংলাদেশ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের জন্য বাংলাদেশের দরজা বন্ধ করে দেওয়া এবং বাংলাদেশে মৌলবাদ ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ার জন্য ভারত বাংলাদেশের প্রতি কৃতজ্ঞ। আর তাই বাংলাদেশে এমন কোন পরিস্থিতি ভারত চায় না যাতে এই স্থিতিশীলতা এবং এই নীতির পরিবর্তন হয়। 


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭