ইনসাইড পলিটিক্স

আওয়ামী লীগে মার্কিনপন্থী বলয়


প্রকাশ: 09/06/2023


Thumbnail

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের রাজনীতিতে এখন সরাসরি হস্তক্ষেপ করছে। কোন রাখঢাক ছাড়াই তারা বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে প্রকাশ্য এবং গোপনে বৈঠক করছে। তারা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে একটি মার্কিন প্রভাব বলয় তৈরি করতে চাচ্ছে। এর মানে এই না যে শুধুমাত্র সরকারের ওপরই তারা চাপ সৃষ্টি করছে। বরং ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কোন কোন নেতাকেও তারা তাদের বলার মধ্যে নিয়ে আসার চেষ্টা করছে এবং এই নিয়ে আসার ক্ষেত্রে তারা কিছুটা সফল হয়েছে।

আওয়ামী লীগের যে সমস্ত নেতারা সাম্প্রতিক সময়ে সক্রিয় সরব এবং যারা তৃণমূলের রাজনীতি থেকে বেড়ে উঠেনি এরকম কিছু নেতার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস এক ধরনের গোপন সম্পর্ক স্থাপন করেছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। এই সম্পর্কের সূত্র ধরে তারা সরকারি দলের বিভিন্ন পরিকল্পনা এবং কৌশলের কথা জানছে। সেই ভাবে তারা পাল্টা ব্যবস্থা নিচ্ছেন। আর বেশ কয়েকজন আওয়ামী লীগের নেতা রয়েছেন যারা সরকারের নীতিনির্ধারকদের কাছে হঠাৎ করেই ঘনিষ্ঠ হয়েছেন। তাদেরকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় বসানো হয়েছে। এখন তারা গোপনে গোপনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে সন্তুষ্ট রাখতে হবে এরকম বার্তা দিয়ে তারা আওয়ামী লীগের অবস্থানকেও দুর্বল করে তুলেছেন। 

সম্প্রতিক সময়ে দেখা গেছে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করেছে তা নিয়ে আওয়ামী লীগের মধ্যেই নানারকম অবস্থান। বিশেষ করে ২৪ মে এই ঘোষণার পর মার্কিন দূতাবাসে যে দুজন নেতা গিয়েছিলেন তারা দলের মুখপাত্র সেই বিষয়টি আওয়ামী লীগের মধ্যে উঠে এসেছে। আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক সেলিম মাহমুদ এবং আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে জায়গা পাওয়া মোহাম্মদ আরাফাত মার্কিন দূতাবাসে গিয়ে ছিলেন। আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে যে, কর্তৃত্ব বলে সেদিন তারা গিয়েছিলেন। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা অবশ্য বলেছেন যে, আওয়ামী লীগ সভাপতির সম্মতিক্রমে যারা গিয়েছিলেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের অনেক নেতাই মনে করছেন যে, তারা কতটা দলীয় স্বার্থ দেখছেন না কতটা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আনুগত্য করছেন। 

সাম্প্রতিক সময়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ. আরাফাত মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন এর কাছে চিঠি লিখেছেন। সেখানে তিনি বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান বিরোধী দল বিএনপির নেতারা কিভাবে নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করতে চায় তার প্রামাণ্য ভিডিও ক্লিপিং উপস্থাপন করেছেন। এটি নিয়ে আওয়ামী লীগের মধ্যে তোলপাড় চলছে। আওয়ামী লীগের একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য বলছেন যে, মোহাম্মদ আরাফাত কার পরামর্শে, কার নির্দেশে এটি করলেন। কারণ এ ধরনের এখতিয়ার কি তাকে দেয়া হয়েছে? 

আওয়ামী লীগের ওই প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, ব্লিনকেনকে চিঠি লেখার মাধ্যমে প্রকারান্তে আওয়ামী লীগ ব্লিনকেন এর নীতিকে সমর্থন করলো এবং মার্কিন আনুগত্য স্বীকার করে নিল। এটি করা কতটুকু যৌক্তিক হয়েছে তা নিয়ে দলের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে।এছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যারা থাকেন তাদের মধ্যে অন্তত একজন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। সেখানে তার সহায় সম্পত্তি রয়েছে। দীর্ঘদিন তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ছিলেন। আর এ কারণেই তিনি সরকারের নীতিনির্ধারকদেরকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভীতি ছড়িয়ে দিচ্ছেন বলেও কেউ কেউ অভিযোগ করেছেন। 

আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতারাই মনে করেন যে, শেখ হাসিনা একজন সেরা রাজনীতিবিদই নন, তিনি সেরা কূটনীতিকও বটে। তিনি জানেন কি করতে হবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাপারে তিনি যে অবস্থান নিচ্ছেন সেই অবস্থানই ভালো। কেউ কেউ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে তুষ্ট করার নীতি নিতেই পারে। বিভিন্ন সময় আওয়ামী লীগের অনেকের মধ্যেই এই প্রবণতা ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দলের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিবেন শেখ হাসিনা। আর শেখ হাসিনা কখনোই কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের আনুগত্যের কাছে নত হবেন না। আর এ কারণেই আওয়ামী লীগে যারা এখন মার্কিন বলয়ের মধ্যে আছেন, বিভিন্ন কৌশলের খবর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে দিচ্ছেন বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক নিবিড় করে নিজেদেরকে গুরুত্বপূর্ণ করে তোলার চেষ্টা করছেন তারা অচিরেই বুঝতে পারবেন যে আওয়ামী লীগ আসলে স্বাধীন পররাষ্ট্র নীতিতে বিশ্বাস করেন। কোন রাষ্ট্রের কাছে নতজানু হওয়ার মতো নীতি আওয়ামী লীগের নেই, সেটি বঙ্গবন্ধুরও শিক্ষা নয়।  


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭