ইনসাইড বাংলাদেশ

মোদি কি পারবেন যুক্তরাষ্ট্রকে থামাতে?


প্রকাশ: 11/06/2023


Thumbnail

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন। সেখানে তাকে বিরল সম্মান জানানো হবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে তিনি ভাষণ দেবেন। এ ধরনের ভাষণ দেওয়ার সৌভাগ্য বিশ্বের খুব কম নেতারই হয়েছে। নরেদ্র মোদিকে সেই সন্মানে ভূষিত করা হবে। বিশ্ব রাজনীতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যখন বেশ খানিকটা কোণঠাসা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে বিশ্ব যখন আবার বিভক্ত হয়ে পড়েছে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কর্তৃত্ব যখন চ্যালেঞ্জের মুখে- সেই সময়ে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি জনসংখ্যা অধ্যুষিত গণতান্ত্রিক দেশটির সরকার প্রধানকে আমন্ত্রণ জানিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার বিশ্ব কর্তৃত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে চাইছে। 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভালো করেই জানে, বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্য অব্যাহত রাখতে গেলে ভারতকে তার প্রয়োজন। আর এ কারণেই নরেদ্র মোদিকে এতো সম্মান দেখানো হচ্ছে। শুধু যে রাজনৈতিক আধিপত্য এমনটি নয়, অর্থনৈতিক সঙ্কটে ধুকতে থাকা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ভারত একটা বিশাল বাজার। আর এই বাজারে যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আরও বড় নিয়ন্ত্রণ নিতে পারে, তাহলে তারা অর্থনৈতিক সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে পারে। তাছাড়া অভিবাসীদের দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভারতীয় বংশোদ্ভূতরা এখন অনেক ভালো ভালো অবস্থানে রয়েছেন। এমনকি দেশটির ভাইস প্রেসিডেন্ট নিজেই এখন ভারতীয় বংশোদ্ভূত। 

এরকম পরিস্থিতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নানা কৌশলগতভাবে ভারতের উপর আনেক বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। আর এই নির্ভরশীলতার জন্যই ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে ডেকে সম্মান জানানো হচ্ছে। যদিও ভারতের গণতন্ত্র, সুশাসন, ভিন্নমত দমন নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন রকম বক্তব্য রয়েছে। কিন্তু এ সমস্ত বক্তব্যগুলো বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর ক্ষেত্রে যেমন তারা উচ্চস্বরে উচ্চারণ করে, ভারতের ক্ষেত্রে তেমনটি করছে না। বরং ভারতের গণতন্ত্রের স্বতঃস্ফূর্ত ধারাকে মার্কিন নীতি-নির্ধারকরা প্রশংসাই করছেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফরে বিশ্ব ব্যবস্থা নিয়ে যেমন আলোচনা হবে, তেমনি আলোচনা হবে উপমহাদেশের প্রসঙ্গ নিয়ে। 

সম্প্রতি আনন্দবাজারে একটি খবর বেড়িয়েছে। যে খবরে বলা হয়েছে নরেদ্র মোদি তার সফরে বাংলাদেশ প্রসঙ্গটি উত্থাপন করবেন। নরেদ্র মোদির এই সফরে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ কিভাবে, কতটা গুরুত্ব দিয়ে উপস্থাপিত হবে- তা নিয়ে অবশ্য অনেকের সংশয় রয়েছে। কারণ যুক্তরাষ্ট্র-ভারত সম্পর্কের ক্ষেত্রেই নানা রকম বিষয়গুলো রয়েছে। তাছাড়া এরকম দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্কগুলোর ক্ষেত্রে তৃতীয় রাষ্ট্র নিয়ে আলোচনা কতটুকু শোভন এবং কূটনৈতিক শিষ্টাচার সম্পন্ন হবে- তা নিয়েও কারো কারো মধ্যে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তবে বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে, উপমহাদেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গত এক দশক থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উপমহাদেশের ইস্যু নিয়ে ভারতের উপর নির্ভরশীল। ভারত এই উপমহাদেশের রাজনৈতিক কৌশলের যে নীতি নির্ধারণ করে, সে নীতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এতোদিন অনুসরন করে আসছে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের ব্যাপারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান খানিকটা হলেও ভিন্ন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে পাশ কাটিয়েই বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন, গণতন্ত্র নিয়ে নানা রকম প্রশ্ন উত্থাপন করছে এবং নানা রকম সুপারিশ, পরামর্শ এবং নির্দেশনা দিচ্ছে। 

এর ফলে বাংলাদেশ এক ধরনের চাপে পড়েছে। আগামী নির্বাচন নিয়েও এক ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। যদিও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়সঙ্কর সম্প্রতি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, অন্য দেশের হস্তক্ষেপ বাংলাদেশের নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে না। আর এই বার্তাটি কি নরেদ্র মোদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে দিবেন? এই বার্তার মাধ্যমে কি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ভারত জানিয়ে দেবে যে, বাংলাদেশের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি এই উপমহাদেশের শান্তি, অসাম্প্রদায়িক চেতনা এবং সন্ত্রাসবাদ বিরোধী অবস্থানকে ক্ষুন্ন করতে পারে। আর এই বার্তাটিই যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মেনে নেয়, তাহলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ এবং মার্কিন প্রভাব অনেকটাই কমে যাবে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭