ইনসাইড বাংলাদেশ

খালেদা ছাড়া জোট-ভোটের অংক

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 03/03/2018


Thumbnail

বেগম জিয়াকে ছাড়াই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নতুন ছক তৈরি হচ্ছে। বদলে যাচ্ছে জোটগুলোর কাঠামো। চারটি জোটের লড়াইয়ে আগামী নির্বাচনকে জমজমাট করতে কাজ শুরু হয়েছে। চলছে আলাপ আলোচনা। ভোটের মাঠে ২০ দলীয় জোট থাকবে না, তা প্রায় নিশ্চিত। বিএনপি, জাতীয় পার্টির নেতৃত্বে নতুন নির্বাচনী জোট আত্মপ্রকাশের প্রস্তুতি চলছে। ২০ দলীয় জোট যেমন থাকছে না, তেমনি ভোটের মাঠে ‘মহাজোট’ও থাকবে না। তবে ১৪ দলীয় জোট অটুট থাকবে।

তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ আওয়ামী লীগ। তবে এবার আওয়ামী লীগ ভোটের বিন্যাস পাল্টে দিচ্ছে। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মতিয়া চৌধুরী বাংলা ইনসাইডারকে নিশ্চিত করেছেন যে, এবার আওয়ামী লীগ ‘মহাজোট’ করে নির্বাচন করবে না। তিনি বলেন, ‘খুব নাটকীয় কিছু না ঘটলে আওয়ামী লীগ ১৪ দলগত ভাবে নির্বাচন করবে। জাতীয় পার্টি আলাদা নির্বাচন করবে। তবে মতিয়া চৌধুরী ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, ১৪ দলের সঙ্গে আরও দুই একটা দল যুক্ত হতে পারে। যেমন আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর নেতৃত্বাধীন জেপি ১৪ দলে যুক্ত হতে পারে। বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগকে কেউ কেউ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোটে আনার চেষ্টা করছে। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, ‘আগামী নির্বাচন বাঙালির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সকল শক্তিকে এক মঞ্চে আনতে চাই।’ বাম মোর্চার বাইরের সকল প্রগতিশীল শক্তিকে এক ছাতার নিচে আনার কাজ করছে আওয়ামী লীগ। বেগম মতিয়া চৌধুরী মনে করেন, ‘আগামী দুই তিন মাসের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের এই জোটের অবয়ব পরিষ্কার হবে।’

সবচেয়ে বড় জোট বিন্যাস পরিবর্তন হবে বিএনপিতে। বেগম জিয়া গ্রেপ্তার হওয়ার পর মাত্র দুটি বৈঠক হয়েছে ২০ দলীয় জোটে। দুই একটি কর্মসূচিতে ২০ দলীয় জোটের জামাত ছাড়া শরিকরা থাকলেও এখন বিএনপির সঙ্গে তার সম্পর্ক আলগা। বিএনপি জামাতের শীতল সম্পর্ক উষ্ণ হয়নি। জামাত এখন একলা চলো নীতি নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বৃহত্তর জোট গঠনের লক্ষে বিএনপি কাজ করছে। বিএনপির ওই নেতা স্বীকার করেছেন, ২০ দলে জামাত থাকায় অনেক দলই ২০ দলে অন্তভুক্ত হতে রাজি নয়। এ কারণেই নির্বাচনী জোট আলাদা হতে পারে।‘ বিএনপির একাধিক সূত্র বলছে, ২০ দলীয় জোটের বিজেপি, এলডিপিকে নিয়ে অন্যান্য কয়েকটি দলকে  নিয়ে নতুন জোটের কাজ বহুদুর এগিয়েছে। নাগরিক ঐক্য, বিকল্প ধারা এবং আ.স.ম আবদুর রবের নেতৃত্বাধীন জাসদের সঙ্গে বিএনপির প্রায় সমাপ্ত আলোচনা জামাতেই আটকে আছে।  গত কয়েকদিন ধরে বিএনপির নেতারা কোনো রাখ ঢাক না রেখেই জামাতকে বাদ দেওয়ার কথা বলছে। বিএনপির নেতা ড. মঈন খান স্বীকার করেন, ‘বিএনপি জামাত থেকে আলাদা হলে , সর্বদলীয় ঐক্য করতে পারে। ‘ বর্তমান সরকারকে হটাতে এরকম ঐক্য জাতীয় দাবি বলেও তিনি মন্তব্য করেছেন। বিএনপি নেতারা বলছেন, জামাত থেকে বেরিয়ে এলে, গণফোরাম, বামফ্রন্টের মতো দলগুলোর সঙ্গেও ঐক্য করা সম্ভব। তবে, বেগম জিয়াকে জেলে রেখে নির্বাচন নিয়ে বিএনপির মতদ্বৈততা জোট প্রশ্নেও ছড়িয়ে পড়েছে। বিএনপিতে যারা খালেদা জিয়া ছাড়া নির্বাচনে না যাবার পক্ষে, তাঁরা ২০ দলীয় জোটও না ভাঙ্গতে অটল। নাম প্রকাশ না করার শর্তে, এই মতের এক বিএনপি নেতা বলেন, ‘জোট ভাঙ্গা, বিএনপি ভাঙ্গা এবং বেগম জিয়াকে ছাড়া নির্বাচনে যাওয়া – একই সূত্রে গাঁথা। এটাই সরকারের ব্লু প্রিন্ট।’ ওই নেতা মনে করেন  ,’সরকার চাইছে জিয়া পরিবার ছাড়া একটি নতুন বিএনপি করতে।  ওই বিএনপিএর সঙ্গে সরকারের এজেন্টদের জোড়া লাগিয়ে, জোট করে অংশগ্রহণ মূলক নির্বাচন দেখাতে । 

কিন্তু ওই নেতা যাই বলুক, বিএনপিতে নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে। সঙ্গে শুরু হয়েছে জোট মেরুকরণের প্রক্রিয়া। আওয়ামী লীগের মতো বিএনপি নেতারাও বলছেন ‘অল্প কিছু দিনের মধ্যেই বিএনপির নেতৃত্বে সর্বদলীয় জোট চূড়ান্ত হবে।’

মহাজোটে না থাকলেও আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এরশাদ গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর। এরশাদ আগামী নির্বাচনে ইসলাম পছন্দ দলগুলোর নেতৃত্ব দেবে, এটা প্রায় নিশ্চিত। ২০ দলীয় জোট থেকে খেলাফত আন্দোলনসহ অন্তত সাতটি ইসলামী দল বেরিয়ে যাওয়া নিশ্চিত। এরা এরশাদের নেতৃত্বে জোটে যোগ দেবে। জাতীয় পার্টির কো চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেছেন ‘আগামী নির্বাচনে জাতীয় পার্টির নেতৃত্বে জোট হবে সবচেয়ে বড় চমক। এই জোট হবে ইসলামী আশা -আকাঙ্ক্ষার ফসল।’

জি এম কাদের আশা করছেন হেফাজতে ইসলামও তাদের জোটে যোগ দেবে। একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, বিএনপি জামাতের ‘ধর্মীয়’ ভোট বাক্স ভাঙতে এরশাদের জোটকে সরকারই পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছে। অবশ্য জাতীয় পার্টির কো- চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ বা বিএনপি কারো সঙ্গেই আঁতাতের কথা অস্বীকার করেছেন।

তিন জোটের ঢামাঢোলে বাম মোর্চাও আগামী নির্বাচনে তার ক্ষুদ্র শক্তি নিয়ে আত্মপ্রকাশ করবে। কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলছেন, ‘তিনটি রাজনৈতিক দল লুটেরা। আমরা মানুষের কথা বলবো। এটাই আমাদের শক্তি।’ বাম মোর্চা নিশ্চিত করেছে, ২০১৪’র মতো নির্বাচন বর্জনের পথে তারা এবার হাঁটবে না।

আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা আশাবাদী চার রকম জোটের ভোট যুদ্ধ একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করবে। যে নির্বাচনে সবাই ভুলে যাবে বেগম জিয়াকে এবং জিয়া পরিবারকে।

বাংলা ইনসাইডার/জেডএ



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭