ইনসাইড পলিটিক্স

সরকারবিরোধী আন্দোলন: আওয়ামী লীগের ৫ দুচিন্তা


প্রকাশ: 12/06/2023


Thumbnail

বিএনপির নতুন করে সরকারবিরোধী আন্দোলন শুরু করতে চাইছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই সরকারকে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি মেনে নিতে বাধ্য করার লক্ষ্যে এই আন্দোলন পরিচিত হবে। সরকারবিরোধী আন্দোলনের চেষ্টা বিএনপির এইটি প্রথম নয়। ২০০৯ সালের পর থেকে একাধিকবার বিএনপি সরকারকে আন্দোলনের মাধ্যমে ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করেছে। কিন্তু ব্যর্থ হয়েছে। ২০১৩ সালে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন করেছিলেন বেগম খালেদা জিয়া। কিন্তু সেই আন্দোলন সফল হয়নি। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি বিএনপির আন্দোলন প্রতিরোধের মধ্যেও জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়েছে এবং এই সংসদ ৫ বছর মেয়াদ পূর্ণ করেছেন।

২০১৪ সালেও বিএনপি ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের এক বছর পূর্তিকে সামনে রেখে আন্দোলন শুরু করেছিল এবং অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য সারাদেশে অবরোধ ডেকেছিল। সেই আন্দোলনেও বিএনপি সফল হতে পারেনি। এরপর বেগম খালেদা জিয়া ২০১৮ সালে গ্রেফতার হলে বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে বড় ধরনের আন্দোলনের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে। এবারও বিএনপি কি আন্দোলন করতে পারবে কি পারবে না তা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানারকম আলোচনা চলছে। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, অন্যান্য বারের চেয়ে এবারের প্রেক্ষাপট কিছুটা হলেও ভিন্ন। এবার বিএনপি আন্দোলনের প্রেক্ষাপট ভিন্ন রকম এবং এক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জন্য পাঁচ ধরনের দুশ্চিন্তা রয়েছে; 

১. দ্রব্যমূল্য, বিদ্যুৎ সংকটসহ দেশের সার্বিক পরিস্থিতি: যেকোনো একটি আন্দোলনের প্রধান শর্ত হলো জনগণকে সম্পৃক্ত করা। আর জনগণ যখন তাদের জীবনের সন্তুষ্ট থাকে তখন কোন আন্দোলনে তারা মাথা ঘামায় না। কিন্তু জনজীবন আর্থসামাজিক বাস্তবতার কারণে কিছুটা বিপর্যস্ত থাকে তখন তারা আন্দোলনের ব্যাপারে আগ্রহী হয়। বর্তমান সময়ে বিদ্যুতের সংকট এবং দ্রব্যমূলের ঊর্ধ্বগতি জনজীবনে কিছুটা অস্বস্তি তৈরি করেছে। এটি সরকারবিরোধী আন্দোলনকে ইন্ধন দিতে পারে বলে অনেকেই মনে করছেন। 

২. আন্তর্জাতিক চাপ: প্রতিবারই সরকারবিরোধী আন্দোলনের সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর অবস্থান গ্রহণ করে এবং তাদের অবস্থানের কারণে এসব আন্দোলনের ইতিবাচক ফলাফল লাভ করে না। কিন্তু এবার প্রেক্ষাপট ভিন্ন। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব হলে ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেয়া হবে এমন একটি বার্তা দিয়েছে। কাজেই সরকারকে এবার আন্দোলনের ক্ষেত্রে অনেক ছাড় দিতে হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

৩. দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনার অভাব: আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মধ্যে আন্দোলন মোকাবেলায় সর্বাত্মক কর্মসূচিতে অনাগ্রহ রয়েছে। তারা এ ধরনের পরিস্থিতি হলে কতটুকু মাঠে নামবে সেটি নিয়েও অনেকে সংশয় রয়েছে। বিশেষ করে নেতারা এখন অনেকেই বিত্তবান হয়েছেন। গা বাঁচিয়ে চলতে চলতে চান। তারা এই আন্দোলনের সঙ্গে কতটুকু সম্পৃক্ত হবেন তা নিয়ে কারো কারো সন্দেহ রয়েছে। 

৪. ব্যবসায়ী মহলের সঙ্গে বিএনপির গোপন যোগাযোগ: অনেকেই মনে করছেন, বিএনপি এখন আন্দোলন করার জন্য প্রচুর টাকা পাচ্ছেন। আর এই টাকা দেয়া হচ্ছে ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে। কিছু কিছু ব্যবসায়ী এখন দুই নৌকায় পা রাখা শুরু করেছেন। আর তারাই বিএনপির আন্দোলনের বাতাস দিচ্ছেন বলে অনেকে মনে করছেন।

৫. আওয়ামী লীগের একলা হয়ে থাকা: আওয়ামী লীগ ২০১৮ নির্বাচনের পর থেকেই একলা চলো নীতি অনুসরণ করছে। অন্যান্য সময়ে অন্যান্য আন্দোলনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলো যেমন আওয়ামী লীগের পাশে থেকেছে এবার তেমনটি থাকার সম্ভাবনা কম। বিশেষ করে মহাজোটে আওয়ামী লীগের প্রধান শরিক জাতীয় পার্টি এখন অনেকটাই সরকারবিরোধী অবস্থানে চলে গেছে। তাই এই বারের আন্দোলনের প্রেক্ষাপট ভিন্ন এবং সরকার কোন কৌশলে কিভাবে আন্দোলন সামাল দেয় সেটাই দেখার বিষয়। কারণ ২০১৩ বা ১৪ এর মত শুধুমাত্র আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিরোধী দলের আন্দোলন দমনে সর্বাত্মকভাবে মাঠে নামবে না এটি এখন বোঝাই যায়। কারণ ভিসা নীতি সহ নানা আন্তর্জাতিক চাপের কারণে তারা কিছুটা হলেও চিন্তিত। এই পরিস্থিতিতে সরকারবিরোধী আন্দোলন যদি সত্যি দানা বেঁধে ওঠে তাহলে সরকার তা কিভাবে মোকাবেলা করবে সেটাই দেখার বিষয়। 


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭