ইনসাইড থট

তারা বেশি ক্ষতি করছে সমস্ত গণতান্ত্রিক বিশ্বের!


প্রকাশ: 13/06/2023


Thumbnail

ইউরোপীয় ইউনিয়নের কতিপয় সদস্য একটি চিঠি লিখেছে জোসেফ বরিলের কাছে। তিনি ইউরোপীয় ইউনিয়নের হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ বা ভাইস প্রেসিডেন্ট। সে চিঠিতে বাংলাদেশের যে আগত নির্বাচন- যেটা এই বছরের শেষে বা আগামী বছরের প্রথম দিকে অনুষ্ঠিত হবে- সেই নির্বাচন প্রসঙ্গে বলা হয়েছে। নির্বাচনের অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে তারা বলেছে, ‘একটা নির্বাচন হওয়া উচিৎ নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে।’ 

আমি সর্বপ্রথম বলতে চাই, যারা এই চিঠিটা লিখেছে, ইউরোপে তাদের কোথাও কি এরকম কোনো- যারা নির্বাচিত সরকার, তাদেরকে বাদ দিয়ে, অনির্বাচিত কতিপয় ব্যক্তিদের নিয়ে একটি সরকার গঠন করে নির্বাচন করার কোনো অধিকার আছে? এটাতো গণতন্ত্রের মূলে আঘাত করা হচ্ছে। সতরাং বাংলাদেশের গণতন্ত্র নিয়ে তারা যে কথা বলেছে, তার চেয়ে বেশি ক্ষতি তারা লিখিত আকারে করছে সমস্ত গণতান্ত্রিক বিশ্বের। তাহলে এরা-তো সেই অগণতান্ত্রিক সরকার এবং যেসব দেশে একনায়কত্ব আছে, তাদেরকে তারা সরাসরি সমর্থন করছে। কারণ একনায়কতন্ত্র যেসব দেশে রয়েছে, সেখানে তাদের পছন্দমতো লোকদের দ্বারা সবকিছু চলে। এটাতো গণতান্ত্রিক মানুষের জন্য কাম্য হতে পারে না। 

দ্বিতীয়ত, তারা খুব ভালো করেই জানে, আমেরিকায় একজন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন সুপ্রীম কোর্ট দ্বারা। আরেকবার এক প্রেসিডেন্টকে- যিনি পরাজিত হলেন, তিনি স্বীকারই করলেন না প্রেসিডেন্ট হিসেবে। সেখানে-তো ইউরোপীয় ইউনিয়নের কোনো উদ্বেগই দেখা গেল না। সুতরাং মাস্টারকে দেখলে আসসালামু আলাইকুম বলতে হবে- আর যেখানে উন্নয়নশীল দেশ, সেখানে বাহাদুরী দেখাতে হবে, তা না। বাংলাদেশকে তারা অত্যন্ত নিম্ন আকারে বিচার করছে। তাদের মনে রাখা উচিৎ আমরা মধ্যম আয়ের দেশ-এ আছি। আমাদের দেশ পরিচালনা করছেন যিনি, তিনি একজন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক এবং বিশ্বের মধ্যে তার মতো রাষ্ট্রনায়ক এখন আর নেই, কেউ নেই। তার সমকক্ষ কেউ নেই। তাকে উপদেশ দিতে হলে, নিশ্চয়ই যে কেউ উপদেশ দিতে পারে। কিন্তু এই উপদেশের ভাষা এবং তারা কি বলছে- এটা খুব লক্ষ্য করে বলা প্রয়োজন। 

তারা বেশ ভালোভাবেই জানে, বেগম খালেদা জিয়া আইনের মাধ্যমে, আমাদের দেশের যে প্রচলিত আইন আছে, সে আইনের মাধ্যমে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় বিচার করে বিচারিক আদালত তাকে সাজা দিয়েছেন। তার মানে বাংলাদেশে এখন যে বিচার পদ্ধতি আছে, তারা এই পদ্ধতিকেও ধ্বংস করতে চায়। এতো অবাক ব্যাপার! একটি দেশের যদি বিচার পদ্ধতি না থাকে, কোনো দেশ-তো সে দেশে ব্যবসাও করতে চায় না। কারণ হচ্ছে, কোনো বিচার-তো তারা পাবে না। সেখানে তারা আঘাত করেছে। অর্থাৎ বাংলাদেশের সৃষ্টিতে তারা আঘাত করেছে। আমরা যে কোনো পরিস্থিতি হোক না কেন, বাংলাদেশের মূলে যারা আঘাত দিবে, তাদের সাথে আমাদের কোনো সম্পর্ক পরিশেষে থাকবে না। 

আমরা একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে বলতে চাই, সরকার ইচ্ছে করলেও এটা করতে পারবে না। কেননা আমরা এটা হতে দেব না। কারণ আমরা সর্বযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি। এখনও আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গর্ব অনুভব করি। যে দেশ আমরা স্বাধীন করেছি, সেই দেশকে কিছু সাদা চামড়ার লোক দেখে তারা উল্টা-পাল্টা উপদেশ দিবে, অশ্চর্য ব্যাপার! তারা আমাদের গণতন্ত্রের মূলে আঘাত করবে, আমাদের বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় আঘাত করবে, এটাতো চিন্তার বাইরে!

যদি আমাদের অ্যাম্বাসেডর দিয়ে তাদেরকে এরকম বলাই, তাহলে তাদের কি হবে? তাদেরও-তো অনেক নির্বাচন নিয়ে এরকম অনেক প্রশ্ন ওঠে। তখন কই, আমরা-তো এরকম বলি না। কারণ আমরা মনে করি নির্বাচন হচ্ছে অভ্যন্তরীণ বিষয়। আর তারা এতো গুরুত্বপূর্ণ পদে বসে সরাসরি কতগুলি মিথ্যা কথা লিখেছে। তারা লিখেছে যে, অসাংবিধানিক পথে অনেক লোককে হত্যা করা হচ্ছে, এটা দিন দিন বেড়েই চলছে। এটা সত্যের কাছাকাছিও নেই। এখন নির্বাচন কাছাকাছি আসছে, এখন তারা শুরু করেছে এইসব ইতিহাস। তারা আরও আগে থেকে আসে নাই কেন? যখন জিয়াউর রহমান ‘হ্যাঁ’ ‘না’ ভোট করেছিলেন- সেটাও আনেন। যদি আগে থেকেই আনতে হয়, তাহলে এই নির্বাচন কেন, সমস্ত কিছু আনেন। আর্থাৎ এটা মনে হচ্ছে- আমেরিকায় যেমন বলা হয়, লবিস্ট আছে, এরা মনে হয় লবিস্টের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। 

এই লবিস্টদের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে একটি- আমার কাছে মনে হচ্ছে। তারা চাচ্ছে- যে কোনো মূল্যে হোক, বাংলাদেশ অনির্বাচিত সরকার দ্বারা পরিচালিত হবে এবং সেই অনির্বাচিত সরকারে কারা কারা থাকবেন, সেটা তারা ঠিক করে দিবে। তারা সেই সকল বুদ্ধি খুঁজে বেড়াচ্ছে। আমি তাদের স্পষ্টভাবে এদেশের একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বলতে চাই, কোনো অবস্থাতে এটা হতে দেওয়া যাবে না এবং হবে না। যার নেতৃত্বে আমরা দেশের স্বাধীনতা পেয়েছি, তার কন্যা যতদিন অন্তত সরকার প্রধান আছেন, ততোদিন এটা সফল হবে না। 

সুতরাং আমার মনে হয়, যে কারো আমাদের নির্বাচন সম্পর্কে বলার সময়, তারা কি ভাষা ব্যবহার করবে, কিভাবে কথা বলবে, কতটুকু জোর দিয়ে বলবে, সেটা চিন্তা করে বলা উচিৎ। আমি মূল চিঠিটা দেখেছি, আমার কাছে এটি অত্যন্ত গর্হিত কাজ বলে মনে হয়েছে। আমি আশা করব, যারা দায়িত্বপূর্ণভাবে বিভিন্ন গণতন্ত্রের কথা বলে, যেমন এখন চেকরিপাবলিকে গণতন্ত্র কতদিন হয়েছে, তা আমরা সকলে জানি। তাদের গণতন্ত্র কয় বছরের, তারাতো আমাদের চেয়েও পরের। যা হোক, এই কয় বছরে আমরা দেখছি, তারা অযৌক্তিকভাবে আমাদেরকে, আমাদের দেশবাসীদেরকে হেয়-প্রতিপন্ন করছে এবং সরাসরি আমাদের যে আত্মসম্মান, সেই আত্মসম্মানের প্রতি আঘাত করছে। সেই  আত্মসম্মানকে আমরা খুব গুরুত্ব সহকারে নিয়েছি। 

যদি শুধু নির্বাচন হতো- তাহলে এটা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে তাদের বলার ক্ষমতা আছে, বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে তাদের বলার ক্ষমতা আছে। কিন্তু সমস্ত জনগণের, তাদের নিজস্ব যে সম্মানবোধ- তাতে আাঘাত করার ক্ষমতা কারো নেই এবং সেই আঘাতকে আমরা সহজভাবে গ্রহণ করবো না, এটা নিশ্চিন্তভাবে বলে দিতে চাই। তারা ভিসার ভয় দেখায়, আমরা কোথাও গেলাম না, তাতে কি আসবে যাবে? ইউরোপের ইতিহাস কি, ইউরোপের ইতিহাস হচ্ছে, বিভিন্ন দেশের কলোনী করা, এই কলোনী করার জন্য নতুন-নব্য রাজাকার ওইসব দেশে হয়েছে। ওখানে একটি ডানপন্থি সরকার আসছে এবং তারা আবারও বিশ্বে তাদের আগের মতো কলোনী করতে চায়। বাংলাদেশকেও তারা নির্বাচনকে সামনে রেখে কলোনী করার চেষ্টা করছে। এই কলোনী করার চেষ্টা কিছুতেই সফল হতে আমরা দেব না।  



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭