ইনসাইড পলিটিক্স

নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জিতলে কারচুপি হারলেই সুষ্ঠু?


প্রকাশ: 13/06/2023


Thumbnail

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে অবাধ-সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়ে অপপ্রচার, মিথ্যাচার এবং গোয়েবলসীয় প্রচারণা এখন সীমাহীন পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে, যেকোনো মূল্যে, যেকোনো নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করাই যেন একটি মহলের দায়িত্ব হয়ে গেছে। বিএনপি বলেছে, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া তারা কোনো নির্বাচনে যাবে না। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ বলেছে, কোন দল আসল না আসল সেটা বড় ব্যাপার নয়, অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে পারে। আর তারই একটি মিনি রিহার্সেল হচ্ছে সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে। 

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে পাঁচটি সিটি করপোরেশনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ইতিমধ্যে তিনটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই তিনটি নির্বাচনের মধ্যে একটি সিটিতে আওয়ামী লীগ হেরেছে। বাকি দুটিতে গতকাল আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা নৌকা মার্কা প্রতীক নিয়ে বিজয়ী হয়েছে। কিন্তু আওয়ামী লীগের দুটি সিটি করপোরেশনে বিজয় কোন কোন মহলের যেন পীড়ার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারা নানাভাবে এই নির্বাচন দুটিকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে বদ্ধপরিকর। এখন তারা এই নির্বাচনকে নিয়ে নানা রকম প্রশ্নের অবতারণা করছেন। আওয়ামী লীগ কিভাবে জিতল এই নিয়ে তাদের অস্বস্তি এবং আপত্তি সীমা নেই। অথচ নির্বাচন কমিশন অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে কঠোর নিয়ম নীতির মধ্যে এই দুই সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠান করেছে। পুরো নির্বাচন সিসিটিভিতে পর্যবেক্ষণ করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ নির্বাচন কমিশনের অন্যান্য সদস্যরা। 

নির্বাচনে ছোটখাটো কিছু বিশৃঙ্খলার ঘটনা ঘটেছে। যেটি বাংলাদেশ নয়, তৃতীয় বিশ্বের যেকোনো নির্বাচনেই ঘটে থাকে। নির্বাচন নিয়ে বড় ধরনের কোনো প্রশ্ন ওঠেনি। কিন্তু এই নির্বাচনে বিশেষ করে বরিশালে কেন আওয়ামী লীগ জিতল এ নিয়ে যেন একটি মহলের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। তারা এ নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করছেন। এমনকি ইসলামী আন্দোলনের হাতপাখা প্রার্থী সামান্য গোলযোগের শিকার হলে সেটিকে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে তোলার এক প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যেকোনো নির্বাচনেই এখন যদি আওয়ামী লীগ জেতে তাহলে সেটিকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হবে। আর আওয়ামী লীগ হারলে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে। 

গাজীপুরের নির্বাচন বরিশাল এবং খুলনার মতই হয়েছে। এ নির্বাচন নিয়ে কোনো প্রশ্ন ওঠেনি। যেহেতু গাজীপুরে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আজমত উল্লা পরাজিত হয়েছেন। কাজেই ওই নির্বাচন নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুলেনি। বরং ওই নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা নেই, আওয়ামী লীগ রসাতলে গেল এমন আত্মনার্ত শোনা গেছে। আবার বরিশালের নির্বাচনে সকলে মনে করেছিল আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে খোকন সেরনিয়াবাত পরাজিত হবেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত যখন সাধারণ জনগণের ভোটে তিনি জয়ী হয়েছেন তখন এর মধ্যে কারচুপি খোঁজা হচ্ছে। 

ইতিমধ্যে ইসলামী আন্দোলন রাজশাহী এবং সিলেটের নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে। অর্থাৎ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করা, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের নতুন সংজ্ঞা প্রদান করার এক ভয়ঙ্কর প্রবণতা এখন ক্রমশ দৃশ্যমান হচ্ছে। 

আওয়ামী লীগ দেশের প্রধান একটি রাজনৈতিক দল। ১৪ বছর ধরে দলটি দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পালন করছে। এই সময় দেশে ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। আওয়ামী লীগের অনেক সমস্যাও রয়েছে। কিন্তু ভোটাররা বাস্তবতা বিবেচনা করে ভোট দিচ্ছেন এবং সেখানে তাদের নিজস্ব ইচ্ছা-অনিচ্ছার প্রতিফলন ঘটছে। তাহলে কি ভোটারদেরকে নির্দেশ দেওয়া হবে যে তারা আওয়ামী লীগকে যেন ভোট না দেয়। আওয়ামী লীগ হেরে গেলেই তখন সেই নির্বাচনকে হাততালি দিয়ে অভিনন্দন জানানো হবে এই প্রবণতা একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্য শুভ নয়। একটি মহল গণতন্ত্রকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য এবং আগামী নির্বাচন বানচালের জন্য সক্রিয়। তারাই প্রতিটি নির্বাচনের পর নানা রকম অজুহাত দাঁড় করাচ্ছে। এই প্রবণতা থেকে মুক্ত করতে হবে গণতন্ত্রকে, নির্বাচনকে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭